নির্বাচন দূরে অথচ বিতণ্ডায় দুই দল

  19-02-2017 12:19PM


পিএনএস ডেস্ক: দশম সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ করা হলে ২০১৯ সালের আগে নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই। সে হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আরো দুই বছর বাকি থাকলেও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়েছে। দেশে মুক্ত গণতন্ত্রের চর্চা না থাকায় রাজনৈতিক নেতারা পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে জড়িয়ে পড়েছেন। এ বক্তব্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইন ও রীতিবহির্ভূত হলেও কেউ তার তোয়াক্কা করছে না। ফলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উদার গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির পরিবর্তে পরিস্থিতি আরো মারমুখী হয়ে উঠছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বুধবার বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জেলে রেখে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। দেশপ্রেমিক কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নেবে না। বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নেয়ার ইচ্ছা সরকারের নেই। তবে গত শুক্রবার দুপুরে তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘জেলে যাওয়াটা আদালতের ব্যাপার। আর নির্বাচন বা সংবিধান কারো জন্য বসে থাকবে না।’

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। কোনো নির্বাচন হলে তা প্রতিহত করা হবে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ছিল একতরফা। ওই নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করেনি। সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও তাদের জোট শরিকেরা এতে অংশ নিয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিবর্তে দেশব্যাপী তুমুল আন্দোলনের সূচনা করে। আওয়ামী লীগ সর্বশক্তি নিয়োগ করা সত্ত্বেও ১৫৩টি আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। আন্দোলনের একপর্যায়ে সরকারের মধ্যেও ভয়ের সঞ্চার হয়। কিন্তু সে সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী কয়েকটি দেশ ও দাতা সংস্থাগুলো বিএনপিকে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানায়। তারা বিএনপিকে বলেছিল- সরকার ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে নিয়ম রক্ষার বলে তাদেরকে জানিয়েছে। কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলে এক বছরের মধ্যে নতুন করে নির্বাচন দেয়া হবে। ওই নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা হবে।

বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, তাদেরকে কর্মসূচি থেকে সরিয়ে আনতে এটা ছিল সরকারের একটি কৌশল মাত্র। এ কৌশলেই তাদেরকে মাঠছাড়া করা হয়েছে। এরপর একের পর এক মামলা দিয়ে কার্যত বিএনপি জোটের কর্মী-সমর্থকদের মনোবল ভেঙে দিয়ে পর্যুদস্ত করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগেও বিএনপিকে আন্দোলনের উসকানি দিয়ে নতুন কোনো ফাঁদ পাতা হচ্ছে কি না তা ভেবে দেখছে দলটি।

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রশ্নে বিএনপির বক্তব্য আংশিক রাখা হয়েছে। কিন্তু সরকার অত্যন্ত সুচতুরভাবে যাদেরকে কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করেছে, তারা তাদেরই লোক। তবে এদেরকে আনা হয়েছে সরকারপন্থী ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া তালিকা থেকে। বিএনপি যাতে এ নিয়ে কোনো নতুন বিতর্ক তৈরি করতে না পারে, সেজন্যই এই কৌশল নেয়া হয়েছে। সরকার মনে করছে, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়া বিএনপির সামনে কোনো পথ নেই। সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে উন্নয়ন সহযোগী ও বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর চাপ রয়েছে। সরকার বিএনপিকে চাপে রেখে বাড়তি কোনো সুযোগ সুবিধা না দিয়ে নির্বাচনে আনতে চায়।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলা এ ক্ষেত্রে বিএনপির ওপর চাপ তৈরির কাজে ব্যবহার করা হতে পারে। দলটি এই মামলাকে কেন্দ্র করে মাঠে নামলে অতীতের মতো কঠোরভাবে তা মোকাবেলা করা হবে। বিএনপির বিরুদ্ধে একযোগে প্রচারণার কৌশল নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের ভাবমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরা এবং কানাডার আদালতে পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে বিচারাধীন মামলা খারিজ হওয়ার বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে। সরকারের কোনো নেতিবাচক বিষয় জনসমক্ষে না আসা এবং বিএনপি যাতে তার কোনো সুবিধা গ্রহণ করতে না পারে, সে বিষয়ে প্রচারণা চালানো হবে।

আওয়ামী লীগ যেকোনো অবস্থায়ই বিজয়ী হয়ে আবারো ক্ষমতায় আসার বিকল্প কিছু ভাবছে না। বিএনপিকে নির্বাচনে এনে তারা আন্তর্জাতিক মহলে সব ধরনের প্রশ্নের জবাব দিতে চায়। নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্কও যাতে সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে। নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রশাসন সাজানো এবং তা কয়েকটি স্তরে বিন্যস্ত করার কাজ শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, বিএনপিকে বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ না দিয়ে নির্বাচনে আনার একটি মত সরকারি দলের মধ্যে আছে। ভিন্নমতের অনুসারীরা মনে করেন, বর্তমানে দেশে কোনো আন্দোলন নেই। সরকারের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা কেবল বিবৃতি ও কাগজে-কলমে। এ অবস্থায় অগ্রিম নির্বাচনের প্রয়োজন নেই। বিএনপি আগামী নির্বাচনে সহায়ক সরকারের কথা বললেও সরকারি দল তা আমলে আনছে না। তারা মনে করছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে।

সরকারি দলের কৌশল হচ্ছে- দেশে আওয়ামী লীগ বিরোধী যে বিশাল জনগোষ্ঠী রয়েছে, সেই ভোট বিভক্ত করা। একই সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থক ভোটারদের অভ্যন্তরীণ সংহতি জোরদার করে তা কাজে লাগানো। বিএনপির মধ্যে বিভেদ ও দূরত্ব তৈরি করা এবং কোনো কার্যকর আন্দোলন যাতে গড়ে উঠতে না পারে, সে চেষ্টা চালানো। গত ১০ বছরে ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপি এখন অনেকটাই পর্যুদস্ত। তবে তাদের জনসমর্থন খুব একটা হেরফের হয়নি। কিন্তু যে ধরনের সাংগঠনিক কাঠামো বিএনপির থাকা দরকার ছিল তা না থাকায় দলটি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। বিএনপিকে ভঙ্গুর ও পর্যুদস্ত রেখেই আগামী নির্বাচন পর্যন্ত ব্যস্ত রাখতে চায় সরকারি দল।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও দেশবরেণ্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, কোনো দায়িত্বশীল বা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির পক্ষে যা ইচ্ছা তা বলা ঠিক নয়। বিশেষ করে কোনো মন্ত্রীর মুখ থেকে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য আসতে পারে না। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তার সম্পর্কে কথা বললে অন্তত সৌজন্যবোধটুকু থাকা দরকার। তাকে সম্মান দিয়ে কথা বলা উচিত। এ ছাড়া কথা বলার আগে নিজের চেহারা আয়নায় দেখে কথা বলা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। সূত্র: নয়াদিগন্ত

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন