ফের উত্তপ্ত হতে পারে রাজপথ

  21-02-2017 08:47AM


পিএনএস ডেস্ক: নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের পর নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি ধীরে ধীরে জোরালো হচ্ছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ না হওয়ার অতীত শঙ্কা থেকেই মূলত এ দাবি ইস্যুতে রূপ নিচ্ছে। মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ইতোমধ্যে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিতে মাঠে নেমেছে। নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কথা বলেছে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল। সরকারি দল অবশ্য সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কোনো দাবি মানতে নারাজ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসবে, এ দাবিতে ততই উত্তপ্ত হবে রাজনীতির মাঠ। কারণ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়ার মতো ভারসাম্যপূর্ণ প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি।

বর্তমান সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকারের কোনো বিধান নেই। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাতিল করে দেয়া হয়। তখনই এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক দানা বাঁধে। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে টানা আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। এসব সত্ত্বেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতাসীন সরকার অর্থাৎ দলীয় সরকারের অধীনেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর নির্বাচন বয়কট করে বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। দেশব্যাপী ব্যাপক সহিংসতা ও রক্তপাতের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় ওই নির্বাচন। এ সময় নিহত হয় কমপক্ষে ২১ জন। ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সরকারি দলের প্রার্থীরা।

৫ জানুয়ারির নির্বাচন হয়ে গেলেও দলীয় সরকারের পরিবর্তে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থার দাবি মিলিয়ে যায়নি। ওই নির্বাচনের পর বিএনপি দুই দফা হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়ে আন্দোলন করেছে। দেশের বর্তমান রাজনীতি নির্বাচনমুখী হওয়ায় এ নিয়ে ফের সোচ্চার রাজনৈতিক অঙ্গন।

ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মাস দুয়েকের নানামুখী আলোচনা, রাষ্ট্রপতির সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ এবং সার্চ কমিটি গঠনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদা। পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের সময় তার নেতৃত্বে পরিচালিত হবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন। নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান এই নির্বাচন কমিশনকে আস্থায় নিতে পারেনি বিএনপি। নুরুল হুদার অতীত উল্লেখ করে তাকে বিতর্কিত ও আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন হিসেবেই মনে করছে দলটি। বিএনপির অভিযোগÑ নুরুল হুদা জনতার মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। নিজ এলাকা পটুয়াখালীতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনও পরিচালনা করেছেন তিনি।

নির্বাচন কমিশন নিয়ে এ বিতর্ক চলছেই। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনার সব দায়দায়িত্ব ও ক্ষমতা ইসির উপর ন্যস্ত থাকলেও কাজী রকীবউদ্দিন কমিশনের পাঁচ বছরে সব এলোমেলো হয়ে গেছে। একটি নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়নি। প্রকাশ্য জালিয়াতি এবং সহিংসতায় পূর্ণ ছিল প্রতিটি নির্বাচন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচন কমিশনকে সব ক্ষমতা দেয়া হলেও ক্ষমতাসীন সরকার যদি তাদের সহায়তা না করে অথবা ইসিকে নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দেয়, তাহলে কোনো দিনই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নতুন ইসি গঠনের আগে সার্চ কমিটির সাথে বৈঠকেও দেশের বিশিষ্ট জনেরা এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে সামনে এনেছেন। গণতন্ত্রের স্বার্থেই পরবর্তী নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান তারা। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে শুধু নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

ইসির অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার শঙ্কা থেকেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি উঠে এসেছে। বিএনপি দাবি তুলেছে সহায়ক সরকারের। নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি বলেছেন, যদি একটি জাতীয় সরকার গঠন করা যায়, ভালো ভালো লোক ও সব দলকে নিয়ে একটি সরকার গঠন করা যায়, তাহলেই ভালো নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সহায়ক সরকারের রূপরেখা কেমন হবে তা শিগগিরই প্রকাশ করবে বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন দলীয় সরকারের বদলে নির্দলীয় ব্যক্তিদের দিয়ে সরকার গঠন অথবা সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব থাকবে ওই রূপরেখায়।

শুধু নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করেছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ আরো বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। নির্বাচন বয়কট করেই তারা তখন বসে থাকেনি। ওই নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য আন্দোলন করেছিল। নির্বাচনের দিনসহ এর আগে ও পরে টানা হরতাল-অবরোধে পুরো দেশ অচল হয়ে পড়েছিল। এর পরের বছরও একই দাবিতে টানা তিন মাস আন্দোলন করেছিল বিএনপি জোট। এখন একাদশ সংসদ নির্বাচনের আবহ সৃষ্টি হওয়ায় নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নতুন করে সোচ্চার।

জানা গেছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার অবস্থানে দলটি অটল রয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে দলটি অংশ নেবে কি না জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তাহলে পাঁচ বছর পর কেন একই ব্যক্তির অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি।

জানা গেছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। তবে এ মুহূর্তে তারা আন্দোলনকে চূড়ান্ত পথ বলে মনে করছে না। নির্দলীয় সহায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরার পর তারা প্রধানমন্ত্রীকে এ নিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানাবে। একই সাথে আলোচনা সভা ও দলীয় সমাবেশে এ দাবিতে জনমত গঠন করা হবে। সরকার চূড়ান্তভাবে দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানালে কিংবা এই ইস্যুতে আলোচনায় আগ্রহ না দেখালে কর্মসূচিতে যাবে তারা।

যদিও ইতোমধ্যে সরকারি দলের নেতারা বলেছেন, সংবিধানের বাইরে তারা যাবেন না। সংবিধান অনুযায়ীই আগামী নির্বাচন হবে। বিএনপি সে নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না।
এ অবস্থায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচনের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত গড়াতে পারে রাজপথে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন