নির্বাচন ও আন্দোলনের যুগপৎ প্রস্তুতি বিএনপির

  22-02-2017 09:46AM


পিএনএস ডেস্ক: নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে এক দিকে দ্রুত দল গোছানোর কাজ শেষ করছে বিএনপি, অন্য দিকে দলটি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি আদায় ও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জানা গেছে, নির্বাচন ও আন্দোলন কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি যুগপৎভাবে এগিয়ে নিচ্ছে বিএনপি। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে খালেদা জিয়ার জনসভা করার বিষয়ে দলে আলোচনা চলছে। শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতাই বিএনপি চেয়ারপারসনকে চূড়ান্ত আন্দোলনের গ্রাউন্ড তৈরির জন্য সারা দেশে জনসভা করার পরামর্শ দিয়েছেন। ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম বিভাগে হতে পারে খালেদা জিয়ার প্রথম সমাবেশ।

দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবর রহমান শামীম গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপি মনে করছে আন্দোলন করেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করতে হবে। এর বিকল্প কোনো পথ নেই। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে মাইনাস করার সাম্প্রতিক তৎপরতার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।

সম্প্রতি বেগম খালেদা জিয়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টাদের সাথে চলমান পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে ধারাবাহিক বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে বিএনপি নেতারা তাদের মতামত তুলে ধরে বলেছেন, সামনের দিনগুলো রাজনীতির জন্য অত্যন্ত কঠিন। সরকার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করার চেষ্টা করবে। বিএনপিকে এসব পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে হবে। দলকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। জানা গেছে, নেতাদের এসব বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করে দলের চেয়ারপারসন সিনিয়র নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সাথে নির্বাচন ও নিজ নিজ এলাকার সাংগঠনিক ভিত মজবুত করে কেন্দ্র ঘোষিত যেকোনো কর্মসূচি সফল করার নির্দেশ দিয়েছেন।

বিএনপি নেতারা আশঙ্কা করছেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে নানামুখী উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। নির্বাচনে অযোগ্য করতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা অন্তত দুইটি মামলার রায় (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট) দেয়া হতে পারে। একইসাথে ঝুলে থাকা মামলার রায় দিয়ে শীর্ষনেতাদেরও নির্বাচনে অযোগ্য করা হতে পারে। এ ছাড়া বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করতে নানা ফাঁদও পাতা হতে পারে- যাতে করে নির্বাচনের আগে বিএনপি সঠিক রাজনৈতিক কৌশল নেয়ার সুযোগ না পায়।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসব আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বলেন, সরকারে যারা আছেন তারা জনগণকে বাইরে রেখে বহুমুখী নির্বাচনী প্রকল্প নিয়েছে। এ বহুমুখী প্রকল্প হচ্ছে দলীয় সরকারের অধীনে দলীয় লোকজনের মারফতে নির্বাচন পরিচালনা করা, পুলিশ-র্যাবসহ তাদের নিজস্ব বাহিনী দিয়ে এবং সরকারের যেসব প্রশাসনিক টাস্ক আছে, সেখানে দলীয় লোকজনকে বসিয়ে নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের নির্বাচনের বাইরে রাখার চেষ্টা, বিএনপির জনপ্রিয় নেতা ও কর্মীদের মিথ্যা মামলা-গুম-খুন-হত্যা-জেলে পাঠিয়ে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা। আমীর খসরু বলেন, এসব প্রকল্প সফল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
জানা গেছে, এসব শঙ্কা আমলে নিয়েই সাংগঠনিক পরিকল্পনা করছে বিএনপি। পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বাড়ানো হয়েছে তৃণমূল পুনর্গঠনের গতি। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো দ্রুত ঢেলে সাজানোর টার্গেট নিয়ে কাজ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ৭৫ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অর্ধেকের বেশি জেলার পুনর্গঠন কার্যক্রম ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।

মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনের পুনর্গঠনও চলছে পুরোদমে। সম্প্রতি মহিলা দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাসাসের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এসব দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজও চলছে। কৃষক দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দলের কমিটি গঠন নিয়ে কাজ করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি কৃষক দলের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।

রাজপথের কর্মসূচির বিষয়টি মাথায় রেখে দ্রুত সংগঠনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা মহানগরের কমিটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছেÑ ঢাকা মহানগর উত্তরে সভাপতি পদে এম এ কাইয়ুম, সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য এ জি এম সামসুল হক, শহিনুর আলম মারফত ও সোহেল রহমান এ তিন জনকে তালিকায় রাখা হয়েছে। উত্তরের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন তাবিথ আউয়াল। অন্য দিকে মহানগর দক্ষিণে সভাপতি পদে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের নাম সর্বাধিক আলোচিত হচ্ছে। উত্তর অথবা দক্ষিণে সভাপতি হতে চান মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালামও। সম্প্রতি মহানগর দক্ষিণে সভাপতি হওয়ার ইচ্ছা কেন্দ্রকে জানিয়েছেন মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদ। সাধারণ সাম্পদক পদের জন্য কেন্দ্রের পছন্দের তালিকায় আছেন ইউনুস মৃধা, নবী উল্লাহ নবী ও হারুন অর রশিদ হারুন। এ ছাড়া সাবেক ছাত্রনেতা হাবিবুর রশীদ হাবিব ও মহানগর নেতা তানভীর আহমেদ রবিন গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন।

তবে আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামের কথা মাথায় রেখে ত্যাগীদের প্রাধান্য দিয়ে ও বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠনের দাবি মহানগরের নেতাকর্মীদের। শাহবাগ থানা বিএনপির নেতা এম এ হান্নান বলেন, অতীতে যারা বিতর্কিত ভূমিকা রেখেছে, দলের বিপক্ষে কাজ করেছে, নতুন কমিটিতে তাদের কোনোভাবেই জায়গা দেয়া উচিত হবে না। ত্যাগী ও মাঠের নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হলে আন্দোলনে তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন