গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গণবিরোধী: ফখরুল

  24-02-2017 11:28AM

পিএনএস ডেস্ক: গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সরকারের সিদ্ধান্তকে গণবিরোধী ও অযৌক্তিক অভিহিত করে অবিলম্বে তা বাতিলে দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘‘ মোটা বাজেটের অর্থ যোগান দিতে জনসমর্থনহীন সরকার জনগণের পকেট কেটে বল্গাহীন রাজস্ব আহরণের জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আমরা গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে সরকারের অনৈতিক, অযৌক্তিক, গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিলের জোর দাবি জানাচ্ছি। জনগণকে জিম্মি করে রাজস্ব আদায়ের সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের মানুষ মেনে নেবে না।”

বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘গ্যাসের দাম ২২ দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়েছে। বিএনপির আমলে ১৯৯৩ সালের ২৩ নভেম্বর জারিকৃত রাজস্ববোর্ডে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বিদেশি কোম্পানি আইওসি‘র গ্যাসকে শুল্পভ্যাট মুক্ত করা হয় অথচ এখন যে গ্যাসকে শুল্ক ভ্যাটযুক্ত করে সরকারের নির্দেশে পেট্রো বাংলা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন। যার অভিঘাত ভক্তদের ওপরে পড়বে।’

‘‘ এই অযৌক্তিক প্রস্তাব মানতে গিয়ে একদিকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে গ্যাসখাত উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে জনগণের ওপর বর্ধিত করের বোঝা চাপানো হচ্ছে। আসলে রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে সরকার দিক-বেদিক শুন্য হয়ে সব ক্ষেত্রের করের বোঝা বৃদ্ধির অপচেষ্টা মেতে উঠেছে।”

কোনো কর্মসূচি দেবেন কিনা জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ‘‘ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরে আপনাদের জানানো হবে।”

আবাসিক গ্রাহকদের আগামী ১ মার্চ থেকে এক চুলার জন্য মাসে ৭৫০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা দিতে হবে, যা এতোদিন ছিল যথাক্রমে ৬০০ টাকা ও ৬৫০ টাকা আর দ্বিতীয় ধাপে ১ জুন থেকে এক চুলার জন্য মাসিক বিল ৯০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৯৫০ টাকা হবে।

গৃহস্থালিতে মিটারে যারা গ‌্যাসের বিল দেন, তাদের মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটার গ‌্যাস ব‌্যবহারের জন‌্য ৯ টাকা ১০ পয়সা এবং জুন থেকে ১১ টাকা ২০ পয়সা করে দিতে হবে। এতোদিন প্রতি ঘনমিটারে তাদের বিল হত ৭ টাকা করে। রান্নার গ‌্যাসের জন‌্য চুলাভিত্তিক গ্রাহকদের প্রতি মাসে ৫০ শতাংশ এবং মিটারভিত্তিক গ্রাহকদের ৬০ শতাংশ বেশি অর্থ খরচ হবে।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হতে জ্বালানি সেক্টরকে বহুমুখি করতে হবে। অথচ বর্তমান সরকার প্রায় সব ক্ষেত্রে জ্বালানি সংকট নিরসনের জন্য আমদানি নির্ভর নীতি গ্রহণ করেছে। এজন্য তারা কয়লা আমদানি করছে, আমদানি করছে এলএমজি, ফার্ণেসওয়েলসহ বিভিন্ন ধরণের জ্বালানি। এর ফলে জ্বালানি নিরাপত্তা বহুমুখি হুমকিতে পড়বে।”

এক বছরের মধ্যে গ্যাসের দাম আবার বৃদ্ধিকে ‘অযৌক্তিক নয়, নৈতিকতা বিরোধী’ অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘‘ আমরা মনে করি, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হলে অর্থনীতি হোঁচট খাবে। রফতানিমুখি পোষাকখাত, বস্ত্রখাতসহ সার্বিক শিল্পখাতে উৎপাদন ভয়াবহ সংকটে পড়বে।”

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলে দর পতনের সাথে যৌক্তিক সমন্বয় করে সরকার জ্বালানি তেলে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন অব্যাহত রাখায় গত সেপ্টেম্বরে বিদ্যুতের দামে একদফা বাড়ানো হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ গত বছর একবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। একবছরের মাথায় আবার গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে অল্প সময়ের মধ্যে আবারো বিদ্যুতের দাম আবারো বাড়ানো হতে পারে।”

‘‘ সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিলো, ২০১৪ সাল নাগাদ বিদ্যুতের দাম কমিয়ে আনবে, সেরকম একটা রোড ম্যাপও ছিলো। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। তারা অগ্রসর হয়েছে বল্গাহীনভাবে রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষে লাভ ও লোভে রোডম্যাপ ধরে। জনগনকে জিম্মি করে এভাবে রাজস্ব আদায়ের কৌশল গণবিরোধী বলে আমরা মনে করি।”

অর্থনীতি বিভাগে সাবেক অধ্যাপক মির্জা ফখরুল মনে করেন, ‘‘ গ্যাসের মূল্য না বাড়িয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করে পুরাতন যন্ত্রপাতি ওভারওলিং করে গ্যাসের অপচয় বন্ধ করাটাই প্রাধান্য পাওয়া উচিত ছিলো।”

তিনি বলেন, ‘‘ গত আগস্টের এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের গণশুনানিতে অধিকাংশ স্টেকহোল্ডার গ্যাস মূূল্যবৃদ্ধির বিরোধিতা করে। আমরা আশা করেছিলাম,নতুন করে আর গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হবে না। কিন্তু সরকার মাত্র ১৮ মাসের ব্যবধানে গ্যাস দাম বৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিলো।”

সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ, আনহ আখতার হোসেন, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন