সংস্কারপন্থীদের দলে টানছেন খালেদা

  25-02-2017 08:22AM


পিএনএস: অবশেষে সংস্কারপন্থী নেতাদের বিএনপিতে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়া কথা বলেন সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল ও জহির উদ্দীন স্বপনের সঙ্গে। এ সময় তিনি তাঁদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এখন দলে কোনো ভেদাভেদ থাকা চলবে না। নব্বইয়ের মতো বিএনপিকে শক্তিশালী দেখতে চাই। এখন সামনে এগোনোর পালা। সবাইকে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ’

একটি সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন পর নেত্রীকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন দুই নেতা। অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁরা দুঃখ প্রকাশ করে দলে ফিরিয়ে নেওয়ায় খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আধাঘণ্টা স্থায়ী ওই বৈঠকে মির্জা ফখরুল ও ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন।

গুলশান অফিসের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সংস্কারপন্থীদের দলে ফিরিয়ে নেওয়ার এই প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে চলবে। আগামী সপ্তাহে ডাকা হতে পারে সাবেক সংসদ সদস্য মফিকুল হাসান তৃপ্তি, নজির হোসেন ও ডা. জিয়াউল হক মোল্লাকে।

উল্লেখ্য, সংস্কারপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরে বিএপিতে ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। সর্বশেষ গেল বছরের ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে তাঁদের ফিরিয়ে আনার কথা ছিল। কিন্তু তা না হওয়ায় কিছুটা অসন্তুষ্ট ছিলেন তাঁরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর চেয়ারপারসনের সঙ্গে কথা বলতে পেরে আমি আনন্দিত ও আবেগ আপ্লুত। আশা করি, দলে অবদান রাখতে সক্ষম হব। ’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগের সব কিছুই এখন অতীত। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। পদ-পদবি নিয়ে এখন চিন্তা করছি না। ’

২০০৭ সালের ২৬ জুন ১৫ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে তত্কালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া এবং তাঁকে সমর্থনকারী নেতারা সংস্কারপন্থী বলে বিএনপিতে পরিচিতি পান। ওই বছরেরই ৩ সেপ্টেম্বর মান্নান ভূঁইয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলে সংস্কারপন্থীরা তাঁর নেতৃত্বে তত্পরতা চালাতে থাকেন। কার্যত তখন থেকেই বিএনপিতে সংস্কার ও অসংস্কারপন্থী দুটি ধারা সৃষ্টি হয়। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মহাসচিব হওয়ার পর বিভেদ আরো বেড়ে যায়। কারণ তিনি ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কমিটি গঠনের নামে সংস্কারপন্থীদের বিতাড়িত করেন। বিশেষ করে মান্নান ভূঁইয়ার সমর্থকদের তিনি কোণঠাসা করেন।

সংস্কারপন্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন মেজর জে. (অব.) জেড এ খান, মোফাজ্জল করিম, আশরাফ হোসেন, শাহ মো. আবুল হোসাইন, শহিদুল হক জামাল, জহির উদ্দিন স্বপন, মফিদুল হাসান তৃপ্তি, নজির হোসেন, সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, জি এম সিরাজ, ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, এস এ সুলতান টিটু, ইঞ্জিনিয়ার শহিদুজ্জামান, নুরুল ইসলাম মনি, শামীম কায়সার লিঙ্কন, ইলেন ভুট্টো, আলমগীর কবীর, আবু হেনা, আবদুল গণি (মেহেরপুর), দেলোয়ার হোসেন খান দুলু (ময়মনসিংহ), আতাউর রহমান আঙ্গুর (নারায়ণগঞ্জ), আবদুল করিম আব্বাসী (নেত্রকোনা), আবু ইউসুফ খলিলুর রহমান (জয়পুরহাট), মেজর জে. (অব.) আনোয়ারুল কবীর তালুকদার (জামালপুর) প্রমুখ। আগেই যাঁরা দলে ফিরেছেন তাঁদের মধ্যে আছেন চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ, সাদেক হোসেন খোকা, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, শাহ মোহম্মদ আবু জাফর, আসাদুল হাবিব দুলু, মাসুদ অরুণ, মোজাহের হোসেন, নাসিরুল হক সাবু, ড. সালেক চৌধুরী ও কাজী রফিক।

আবার অনেকেই মারা গেছেন, কেউ বার্ধক্যজনিত কারণে রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছেন, কেউ কেউ এখনো বিএনপিতে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। শীর্ষ নেতাদের আশ্বাসের পর সংস্কারপন্থীরা নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করেন। যে যাঁর মতো চেষ্টা করেন দলে ফিরতে। যেমনটি দেখা গেছে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে। খালেদা জিয়া যখন গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন, তখন সাখাওয়াত হোসেন বকুল তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখান থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

জানতে চাইলে মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘ওই দুই নেতা দলীয় প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। ম্যাডামের কাছে তাঁরা অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন। ম্যাডাম বলেছেন, তোমরা কাজ কর। আমি তোমাদের বিষয়টি দেখব। ’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু তাঁরা নিজে থেকেই এসেছেন এবং দলের পক্ষে অনুগত থেকে কাজ করতে চাচ্ছেন, সেহেতু ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে তাঁদের শরিক না করে ফিরিয়ে দেব কেন?’

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন