নারায়ণগঞ্জের ভূত কুমিল্লায়!

  22-03-2017 08:28PM


পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনী প্রচারণা বেশ চলছে। মাঠ বলে দিচ্ছে প্রচারণায় কেউ কারো চেয়ে কম নয়।কিন্তু ধানের শীষের প্রার্থীর অবস্থা ও অবস্থান শক্ত-পোক্ত হলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের অনাহূত গমনাগমনে নারায়ণগঞ্জের পরিণতির আশঙ্কা খোদ সুহৃদদের।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন ছিল সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। তার জেতার সম্ভাবনা ছিল প্রবল। কিন্তু স্থানীয় নেতা অ্যাড. তৈমুর আলম গংয়ের মীর্জাপুরি এব্ং ঢাকার নেতাদের পিকনিকের আমেজ সম্ভাবনাময় বিএনপির প্রার্থীকে হারানো সহজ দেয়।

জানা গেছে, ওই নির্বাচনে ঢাকার নেতারা গিয়ে ক্যামেরা শেসন আর পিকনিকের আমেজে ভূরিভোজ সেরেই শেষ। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মাঠে নামানো এব্ং এ ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে ঘাটতি ছিল ব্যাপাক। ফলে নির্বাচনের দিন ধানের শীর্ষ প্রতীকধারী কাউকে মাঠে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বাঘা বাঘা নেতাদের ভাইসহ কাছের লোকজন কমিশনার পদে (১৩ জন) জিতলেও এর প্রভাব পড়েনি দলীয় প্রতীকে! অথচ ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই এমনকি জেতার সম্ভাবনার কথা ছিল মানুষের মুখে মুখে। আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলে যে সম্ভাবনা বাড়ে।

একমাত্র সম্পাদক কামাল ছাড়া স্থানীয় নেতাদের অন্যরা মাঠে ছিলেন নামকাওয়াস্তে। নেতা-কর্মীদের সংঘটিত করে কেন্দ্রভিত্তিক উদ্যোগ-আয়োজনে ছিল রহস্যজনক ভাটা।দলঅন্তপ্রাণদের ভাসমান ভোট ছাড়া সংঘবদ্ধ কাজের ছিটেফোঁটাও মাঠে দেখা যায়নি। বড় নেতাদের রহস্যজনক আচরণে ছোট নেতারা দ্বিমুখী সাইজের ভয়ে নেতিয়ে পড়ে।

কুমিল্লা বিএনপির ঘাঁটি। এখানে দ্বিতীয় আওয়ামী লীগ। জামায়াতের সাংগঠনিক অবস্থান যা হোক না কেন, ভোটের দিক দিয়ে তারা এখনো তৃতীয়। এই ভোট যাদের দিকে যাবে, নির্বাচনে জেতার পাল্লা তাদেরই ভারী হবে।আর অতীতে অর্থাৎ গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এই ভোটেই বিএনপির প্রার্থীর পোয়াবারো হয়।

এবারও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির জেতার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তবে কিছু উটকো জামেলা সেখানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে বলে জানান ছাত্রদলের এক কেন্দ্রীয় নেতা। আর সেটা হলো কেন্দ্রীয় নেতাদের অনাহূত গমনাগমন। উপকারের চেয়ে তাদের আগমন ব্যাঘাত সৃষ্টির বেশি কারণ বলে অনেকিই মনে করেন।

জানা গেছে, কেন্দ্রের নেতারা গেলে তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকতে হচ্ছে দলের ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতা-কর্মীদের। ভবিষ্যতে বড় পদ-পদবীর আশায় নেতাদের রাজি-খুশি করতে গিয়ে নির্বাচনের আসল কাজটার বারোটা বেজে যাচ্ছে। এতে স্থানীয় ছাত্র-যুব ও মহিলা দল মাঠে নামার সময় পাচ্ছে না। ফলে এখানে বিএনপির নির্বাচনী প্রচারে ভাটা পড়ছে।

ভোট আদায় ও ভোটারদের মধ্যে দলীয় প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে টনিকের মতো কাজ করে থাকে স্থানীয় পরিচিত মুখ, যারা সুখ-দুঃখের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। তারা হলেন ছাত্রদল, যুবদল ও মহিলা দলের নেতা-কর্মী। ভোটারদের উদ্বুদ্ধ থেকে শুরু করে ভোট গণণা ও ফলাফল বুঝে আনা পর্যন্ত যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। সব বিচারেই কাজের সেই পরীক্ষিত কাজিদের দূরে রেখে নির্বাচনে সুফল পাওয়া কঠিন বৈকি।

পিকনিকের আমেজে খাবার-দাবার, ক্যামেরা শেসন আর হোটেলে আরাম-আয়েশের পাশাপাশি বাড়তি কিছু চাহিদা মিটাতে গিয়ে বিএনপিদলীয় প্রার্থী এবং সাবেক মেয়র নাকি যারপরনাই ত্যাক্ত-বিরক্ত। তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমনকে উঠকো জামেলা মনে করছেন। এসব কারণে নারায়ণগঞ্জের ভূতের আসর কুমিল্লায় পড়ার আশঙ্কা অভিজ্ঞ মহলের।


লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন