২৬ মার্চ ঘিরে বিএনপি’র ভাবনা

  26-03-2017 11:45AM

পিএনএস ডেস্ক: স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৫ বছর পর এসেও সেই কাঙ্ক্ষিত সময়ের অপেক্ষায় দেশের প্রতিটি জনগণ। ১৯৭১ সালে যে আর্দশকে লক্ষ্যে করে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ একত্রিত হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, সেই স্বাধীনতার মূল মর্মবাণী এখনও প্রতিষ্ঠা হয়নি। হয়নি মানুষের মৌলিক অধিকার, গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাদের বক্তব্যেই এমন কথা উঠে এসেছে।

২৬ মার্চকে জাতীয় জীবনে এক গৌরবোজ্জল সোনালী দিন অভিহিত করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, ‘২৬ মার্চ আমাদের হাজার বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা, যা সংগ্রাম আর যুদ্ধের রক্তস্নাত পথে বিশ্ব মানচিত্র উদ্ভাসিত হয় দেশমাতৃকার মুক্তি। এ দিনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। সেদিন জাতীয় নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে তাঁর ঘোষণায় দিশেহারা জাতি পেয়েছিল মুক্তিযদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার অভয়মন্ত্র।’

তিনি বলেন, ‘একটি শোষণ, বঞ্চনাহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এদেশের মানুষ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছে। নানা কারণে আমরা সে লক্ষ্যে অর্জনে সক্ষম হইনি। বার বার ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী শক্তি আমদের সে লক্ষ্য পূরণ করতে দেয়নি। দেশি-বিদেশী চক্রান্তের ফলে আমদের গণতান্ত্রিক পথচলা বার বার হোঁচট খেয়েছে।’

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ও মুক্তির যে দাবি উঠেছিল তাকে ধাবিয়ে দিতেই ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ‘গণহত্যা’ চালানো হয়। কিন্তু স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় এদেশের মানুষ দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। অথচ আজকে সেই বাংলাদেশে যেসব ঘটনা ঘটছে তাতে মনে হয় বাংলাদেশে কোনো সরকার নেই।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃত্ব যেখানে ব্যর্থ হয়েছিল, সফলতার সঙ্গে সেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে সমগ্র জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, আজকের যে বাংলাদেশ তার ভিত্তি সৃষ্টি করেছিলেন জিয়াউর রহমান। দুর্ভাগ্য আজকের এই সরকার, আওয়ামী লীগ এবং কুচক্রীমহল জিয়াউর রহমানকে সঠিক মূল্যায়ন করতে চায় না বরং অবমাননাকর মন্তব্য করেন। অথচ ২৬ মার্চ যদি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিতেন তাহলে স্বাধীনতা যুদ্ধ কবে শুরু হতো বলা যায় না।’

স্বাধীনতা দিবস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান জানান, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা হাজার বছরের গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা। এতে বহু দেশপ্রেমিক জীবন দিয়েছে। এবং যুদ্ধের মাধ্যমে এই বাংলাদেশ ও স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে।’

২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবসের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি কিছুটা আক্ষেপের স্বরে করে বলেন, ‘স্বাধীনতার উদ্দেশ্য ছিল সত্যিকারের গণতন্ত্র রচনা করা কিন্তু সেই গণতন্ত্র স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৫/৪৬ বছর পরও রচিত হয়নি। এখানে স্বৈশাসন, একদলীয় শাসন, মিলিটারি শাসন এসেছে আবার নিরবছিন্ন সংসদীয় গণতন্ত্রও চলেছে। কিন্তু সে অনুযায়ী সত্যিকারের গণতন্ত্র অর্জিত হয়নি। এমনকি আজকেও গণতন্ত্রের বিরাট শূন্যতা অনুভব করছে দেশের জনগণ।’

২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে সরকার কর্তৃক নেয়া উদ্যোগকে সমর্থন করেন কিনা জানতে চাইলে সাবেক এই সেনাপ্রধান বলেন, ‘২৫ মার্চ গণহত্যা হয়েছে। সরকার সংসদে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা’ দিবস হিসেবে উপস্থাপন করেছে। এটাকে আমি স্বাগত জানাই। আমরাও যদি সংসদে থাকতে পারতাম, তাহলে এর অংশীদার হতাম। এই দিবসটাকে আন্তর্জাতিকভাবে পালন করা উচিত এবং জাতিসংঘের স্বীকৃতি দেয়া হউক। তবে তাই আমি মনে করি, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরেই ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে চিহ্নিত করা আবশ্যক ছিল।’

এদিকে একাত্তরে আওয়ামী লীগ কলকাতায় থিয়েটারে বসে আন্দোলন করেছে, যুদ্ধ করেনি এমন মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস জানান, ‘আওয়ামী লীগ এখন নিজেদের ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবসের একক দাবিদার বলে মনে করে। কিন্তু আসলে তা নয়। তারা দাবি করার চেষ্টা করে নিজেদের দাবিদার বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। অথচ এই সেই আওয়ামী লীগ যারা কলকাতায় থিয়েটারে বসে আন্দোলন করেছে, যুদ্ধ করেনি।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ করেছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতার নায়ক জিয়াউর রহমান। তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, আর আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার গল্প শুনেছে। তাই সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করার দায়িত্বও বিএনপির। অন্যে কেউ রক্ষা করবে না বলেই আজকে স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করে নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বলে জোর গলায় প্রচার করছে আওয়ামী লীগ। শুধু তাই নয় বিএনপিতে যত সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা আছে, মুক্তিযোদ্ধার তালিকা ধরে যদি হিসেবে করা যায়, তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশে বিএনপিতে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যাই বেশি।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ অর্জন উল্লেখ করে দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন শহীদ জিয়া। সুতরাং স্বাধীনতা দিবস পালন করতে সেই জিয়ার দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির আলাদা একটি গুরুত্বও আছে। দায়িত্বও আছে। তাই আমরা যদি স্বাধীনতা দিবস পালন করতে রাজপথে নামতে না পারি এবং নিজেদের শক্তির জানান দিতে না পারি তাহলে আমাদের উপর চালানো অত্যাচার নির্যাতন আরো বাড়বে, কমবে না।’

দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর প্রতীক জানান, ‘১৯৭১ সালে জীবন বাজী রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই মুহূর্তে এরচেয়ে বেশি কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে এখনও সমস্যা আছে।’

২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট চলচিত্রকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, ‘শহীদ জিয়া স্বদেশী মন্ত্র, খালেদা জিয়া গণতন্ত্র, আর তারেক রহমান আগামীর জয় গান ...রুখে দেবে সব ষড়যন্ত্র।’

আরেকজন উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী বলেছেন, ‘বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আইন দিয়ে ইতিহাসকে নির্ধারণ করতে চায়। তারা আজকে কথায় কথায় যে স্বাধীনতার কথা বলে থাকে সেই স্বাধীনতার প্রথম আওয়াজ তুলেছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। ঘোষণা দিয়েছেন মেজর জিয়াউর রহমান। আর শেখ মুজিব আলোচনার গোলটেবিলে বার বার আপসের চোরাবালিতে আবদ্ধ থেকেছেন।’

এছাড়াও মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো এবারও নানান কর্মসূচি পালনের মধ্যে দিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে।

প্রসঙ্গত স্বাধীনতার এই মাসে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থার সাহায্য নেয়ার পরিকল্পনা করছে বর্তমান সরকার। এ লক্ষ্যে এবারের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ের জন্য বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

সুত্র: ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন