গণতন্ত্রের জয় হোক

  29-03-2017 08:37PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : রাত পোহালেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন। এই নির্বাচনে ক্ষমতামীন দল ও বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্লেষকরা। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের জন্য এটা অগ্নিপরীক্ষা। সে পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হলে গণতন্ত্রের জয় হবে সন্দেহাতীতভাবে।

স্থানীয় সরকার ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রকিব উদ্দিন কমিশনের বিতর্কিত ভূমিকা গণতন্ত্রকামিরা সহজে ভুলতে পারবেন না। সেজন্য বর্তমান কমিশনকেও বাঁকা চোখে দেখছে ক্ষমতাসীনদের বাইরের প্রায় সব রাজনৈতিক দল, নিরপেক্ষ বিশ্লেষক ও নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। তারা চায় কাজের মধ্য দিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করুক।

বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ব্যাপারে ২০ দলীয় জোটের আপত্তি শুরু থেকেই। জনতার মঞ্চের লোকের পরিচয়ে তাকে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের খয়ের খাঁ মনে করা হচ্ছে। এমনকি বর্তমান সাংবিধানিক পদে আসীন হওয়ার পর তার এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় সেটাকে আরো সুদৃঢ় করেছে।

আমাদের দেশে সাংবিধানিক পদে বসে অনেকে দুঃখজনক অপ্রত্যাশিত কাজ করেছে, যা তাদের কাছে কাম্য ছিল না। এমনটা অব্যাহত থাকায় সচেতন জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এসব পদে যারা বসেন, তাদের যোগ্য বলেই বসানো হয়। কিন্তু তাদের কার্যক্রম অনেক সময়ই সে স্বাক্ষর বহন করে না। ফলে অগ্রসর নাগরিকরা হতাশ হন।

হতাশাজনক ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। আর সেটা বাড়ার জন্য দায়ী মেরুদণ্ডহীন হিসেবে পরিচিত অতীতের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়া অনেকে। জেনে-বুঝে সাংবিধানিক পদে বসে আরাধ্য কাজটা যারা করেতে ব্যর্থ হন, পদ আকড়ে না থেকে তাদের মানে মানে সরে যাওয়াই উত্তম। অথচ সেটা না করে লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে বেহায়ার মতো পরমায়েশ খাটা যেন তাদের রেওয়াজ।

অতীতের অভিজ্ঞতা সুখকর না হওয়ায় হতাশা বাড়ছে। সেখানে আশা জাগানিয়া কাজটা করে দেখানো সময়ের দাবি। সে দাবি পূরণে বর্তমান নির্বাচন কমিশন আন্তরিকভাবে কাজ করলে মানুষের মনের কালিমা দূরীভূত হতে বাধ্য। তুরুপের তাস এখন নির্বাচন কমিশনের হাতে। তলানীতে থাকা গ্রহণযোগ্যতাকে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বর্তমান কমিশন সফল হবে, সে প্রত্যাশা গণতন্ত্রকামি সচেতন জনগোষ্ঠীর।

সাংগঠনিক দিক দিয়ে আওয়ামী লীগ কুমিল্লায় কম শক্তিশালী নয়। বিএনপির ভিতও মজবুত। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে জাতীয় পার্টি। আর বিএনপির সঙ্গে আছে জামায়াত। আওয়ামী লীগের বাড়তি পাওয়া ক্ষমতার ছায়া। আর বিএনপির বাড়তি পাওয়া সাবেক সিটি মেয়র সাক্কুর ব্যক্তিগত ও সামাজিক অবস্থান। সে বিচারে দুজনের পাল্লাই ভারী।

মানুষ চায় নিজের ভোট নিজে দিতে। কুমিল্লায় সে পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে। হুমকি-ধামকি ও হয়রানির ভয়ে রাতে অনেকে নিজের ঘরে থাকতে পারছেন না। এমনটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অন্তরায়। এটা হলে একটি পক্ষ বাড়তি সুবিধা পায় আর স্বাভাবিকভাবেই অন্য অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সমস্যার সমাধান দ্রুততম সময়ে হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতে নির্বাচন কমিশনের এই কাজটি অনেক আগে করাই ছিল শ্রেয়। সময় এখনো আছে, যা হয়েছে; তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আর যাতে ওই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে শক্ত হাতে তা হ্যান্ডেল করা। বিয়ের রাতে বিড়াল না মারায় সেখানে ভিন্নমতের সমর্থকরা দৌড়ের ওপর। আর ক্ষমতাসীনরা মওকা পেয়ে গেছে।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই লাখ ৭ হাজার ৫৫৭ ভোটারের জন্য ২৭টি ওয়ার্ডে ১০৩টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। এর অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে যে-ই নির্বাচিত হোক, তাতে কারো কিছু যায়-আসে না। আপত্তিও থাকার কথা নয়। কিন্তু অতীতের মতো জাল ভোট, ব্যালট ছিনতাই, কারচুপি হলে সেটা হবে আত্মঘাতী।

রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে জায়েজ করতে ক্ষমতাসীনরা এখানে কিছুটা ছাড় দিতে পারে। কিন্তু কোর্টবাড়িতে জঙ্গী আস্তানার সন্ধানকে তারা সে আশায় গুড়েবালি মনে করছেন। যে যা বলুক না কেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ভীতিমুক্ত হবে, সে প্রত্যাশার জয় হোক। এটা হলে গণতন্ত্রের জয় হবে আরে এতে সব বিচারেই জয়ী হবে নির্বাচন কমিশন। গণতন্ত্রে ভিত মজবুতে আমরা কায়মনোবাক্যে সে প্রত্যাশাই করছি।




লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন