বিজয় উল্লাসে জাতীয় পার্টি, নেতাকর্মীদের মুখে হাসি ফুটেছে

  20-04-2017 02:22PM



পিএনএস, এম নজরুল ইসলাম : এ যেন এক অবিস্মরণীয় বিজয়। দীর্ঘদিন পর বিজয় উল্লাসে মেতেছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। রাষ্ট্রপতি থাকাকালে বিমানের জন্য রাডার ক্রয়ের অভিযোগে করা মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। ১৯৯২ সালে তার বিরুদ্ধে মামলাটি হয় । ২৫ বছর পর রায় দিল বিচারিক আদালত। বুধবার বিকালে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কামরুল হোসেন মোল্লা এ আদেশ দিয়েছেন।

বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে আদালতে হাজির হন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এমপি। এসময় তাঁর সাথে ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি.এম কাদের, মহাসচিব এবিএম রহুল আমিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াস সদস্য ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরী এমপি, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসন বাবলা এমপি, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, সুনীল শুভ রায়, এস এম ফয়সল চিশতী, মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, মেজর খালেদ আকতার (অব.)।

সূত্রমতে, ১৯৯২ সালের ৪ মে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো মামলাটি দায়ের করার পর ১৯৯৪ সালের ২৭ অক্টোবর আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। পরের বছরের ১২ আগস্ট মামলাটিতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

২০১৩ সালের ১১ জুন মামলাটির যুক্তিতর্ক শুনানিতে তৎকালীন বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত বিব্রতবোধ করেন। পরবর্তীতে মামলাটির বিচারের ভার ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে ন্যস্ত হয়। ২০১৪ সালের ১৫ মে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন এরশাদ। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে লিখিত বক্তব্য দেন।

মামলাটিতে ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মঞ্জুর আহমেদসহ মোট ১২ স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য দিয়েছেন। গত ১২ এপ্রিল রাষ্ট্রপক্ষ ও এরশাদের পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপনের মাধ্যমে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে বুধবার মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত।

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে মামলা থেকে বেকসুর খালাস আদেশের পর আদালত চত্বর থেকেই শুরু হয় বিজয় উল্লাস। আদালত প্রাঙ্গনে দলের নেতাকর্মীরা এরশাদ এরশাদ স্লোগানে মুখরিত করেন। জাতীয় পার্টি, যুব সংহতি, মটর শ্রমিক পার্টি, তরুন পার্টি, ছাত্র সমাজ, কৃষক পার্টি, মহিলা পার্টি, সাইবার পার্টি, সেচ্ছাসেবক পার্টি, সাংস্কৃতি পার্টিসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয়, মহানগর, জেলা-উপজেলা এমনকি তৃনমূলের প্রতিটি ওয়ার্ডে মহল্যায় বিজয় উল্লাস শুরু হয়। রায়ের পর থেকেই সারাদেশে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরন ও দোয়া মাহফিল চলছে বিরতিহীনভাবে।

মামলা প্রত্যাহার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে ফুসছিল নেতাকর্মী। মামলার রায়ে জাপা চেয়ারম্যান খালাস পাওয়ার আনন্দে ২৫বছরে দুঃখ ভূলে বিজয় উল্লাসে মেতেছে নেতাকর্মী। রায়ের সময় আদালত পাড়ায় দলীয় নেতাকর্মীরা মামলা প্রত্যাহার দাবিতে মিছিল করেছে। জাতীয় পার্টিসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বেশ সক্রিয়ভাবেই একত্রিত হয়ে আদালত এলাকায় রায়ের অপেক্ষায় ছিল।

রায়ের অপেক্ষায় জাপার তৃনমূল নেতাকর্মী আরও সক্রিয় ছিল। পুরোপুরি কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছিল বলে জানালেন, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও যুব সংহতি সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন। লোটন বলেন, এ রায়ে নেতাকর্মীদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। বিজয় উল্লাসে জাপার কেন্দ্রীয় পার্টি অফিস উৎসবে ভরপুর। দফায় দফায় মিষ্টি বিতরন সহ দেশজুড়েই চলছে উল্লাস।

নেতাকর্মীরা বলেন, মিথ্যা মামলা থেকে পল্লীবন্ধু এরশাদকে মুক্ত করেই আমরা ঘরে ফিরছি। এই বিজয় সারাবাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে বিজয় করবে বলেও নেতাকর্মী অভিমত ব্যক্ত করেন। জাতীয় তরুণ পার্টির আহবায়ক মামুনুর রহিম সুমন বলেন, স্যারের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আমরা রাজপথে ছিলাম। আমরা বিজয়ী হয়েছি। সারাদেশের
নেতাকর্মী আদালত চত্তবে জড়ো হয়ে প্রমান করেছে জাতীয় পার্টি বৃহৎ সংগঠন।

জাপার যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, মামলা থেকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ খালাস পাওয়ায় আনন্দ মিছিল করেছে নেতাকর্মী। মামলার রায় দেয়াকে কেন্দ্র করে বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকেই জাতীয় পার্টিসহ অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয়, মহানগর, বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা পুরান ঢাকার জজ কোর্ট চত্বরে জড়ো হতে থাকেন। রায় ঘোষণার খবর পেয়ে আনন্দ মিছিল শুরু করেন দলের নেতাকর্মীরা। আনন্দ মিছিল কাকরাইলে দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।

পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে পল্লীবন্ধুকে শিকলবন্দী করার ষড়যন্ত্র সফল হতে পারেনি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন