খালেদা জিয়ার নতুন রাজনৈতিক ভাবনা

  22-04-2017 02:13PM


পিএনএস: সম্প্রতি ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে হেফাজতের সমঝোতার বিষয়টি রাজনীতিতে নতুন ঢেউ তুলেছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের বৈঠকের পর নড়েচড়ে উঠেছে বিএনপি। এরই মধ্যে বিএনপিও নতুন পরিকল্পনায় এগুচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।

দুই বছরের অধিক সময় ধরে রাজপথের আন্দোলন কর্মসূচি থেকে অনেকটা গুটিয়ে নেওয়া বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সরকারের গতিবিধির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, নতুন পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই আন্দোলনের মাঠে নামার আগে দল গোছাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বিভাগীয় শহর ও বড় বড় জেলা শহরগুলোতে নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে।

এছাড়াও বিভিন্ন জেলা পর্যায়েও চলছে নেতৃত্ব পরিবর্তনের কার্যক্রম। আর এ কাজ স্বয়ং খালেদা জিয়া তদারকি করছেন বলে দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।

দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলগোছার প্রক্রিয়া শেষ হলেই সরকারের বাইরে থাকা বাম-ডান দলগুলোর সঙ্গে সর্বদলীয় রাজনৈতিক ঐক্য গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করবেন বেগম জিয়া। এ জন্য আগেই থেকে কয়েক বুদ্ধিজীবীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সর্বদলীয় ঐক্য গঠনে একটা জনমত গড়ে তুলতে। যাতে বিএনপির পক্ষ্যে ঐক্য প্রক্রিয়ার ডাক দেয়া হলে যাতে সহজেই ডায়ালগ করা যেতে।

দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, এরই মধ্যে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গেছেন যে- এককভাবে আন্দোলন করে কোনো ফল আসবে না। এজন্য প্রয়োজন আশি-নব্বই দশকের ন্যায় সর্বদলীয় আন্দোলন। আর সেরকমেরই আন্দোলনের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি।

সর্বদলীয় ঐক্য গঠনের আগে একটি জাতীয় পর্যায়ের ডায়ালগেরও করতে চায় বিএনপি। সেখান থেকেই সর্বদলীয় ঐক্য শুরু হবে এমনই চিন্তা বিএনপির। আর এই প্রক্রিয়া সফল হলেই বিএনপির নতুন স্বপ্ন দেখতে পারে বলে মনে করেন অনেক নেতাই।

এ দিকে নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়, সেদিকেই তীক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ দলটির। বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতামতের বাইরে এসে ‘বিতর্কিত’ নির্বাচন কমিশন গঠন হলেও সেক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন থেকে সরে এসে ফের রাজপথেই দেখা মিলতে পারে দলটির। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতির চাহিদা বিবেচনায় রাজনীতিতে কৌশল পাল্টানোর কথাও বলছেন বিএনপি নেতারা।

সোমবার এক টুইট বার্তায় বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাদের অঙ্গীকার- সব গুম-খুনের রহস্য উন্মোচন করে ন্যায় বিচারের মাধ্যমে দোষীদের সাজা নিশ্চিত করবো।’

এর আগে গত ১৪ এপ্রিল জাসাসের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ৮ কোটি। এই ৮ কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিল। আজকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি। কিন্তু এই দেশে গণতন্ত্র নেই। কাজেই এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিয়ে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনে আবার সংগ্রাম করতে হবে।’

এর আগে ১২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ও দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনেও বেগম জিয়াকে বেশ দৃঢ় প্রত্যয়ে কথা বলতে দেখা গেছে। এতদিন ভারতের বিষয়ে কিছুটা রাকঢাক করে কথা বললেও ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বেশ স্পষ্টভাবেই ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার বক্তব্য রাখেন।

সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি দেশের বিপুল সংখ্যক জনগণের সমর্থনপুষ্ট জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। নানাভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, এদেশের জাতীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিএনপিই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামতের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই দেশজাতির বর্তমান ও ভবিষ্যত স্বার্থ জড়িত রয়েছে এমন কোনো বিষয়ে বিএনপি নীরব থাকতে পারে না।’

‘প্রহসনের মাধ্যমে নির্বাচিত বলে ঘোষিত সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত সংসদে কার্যকর কোনো বিরোধী দলের অস্তিত্বও নেই। ফলে দেশে বলবৎ রয়েছে জবাবদিহিতাহীন একতরফা স্বৈরশাসন। এতবড় প্রহসন ও জালিয়াতির মাধ্যমে গঠিত সরকারের নৈতিক কোনো ভিত্তি ও গ্রহনযোগ্যতা থাকে না। জনগণের সম্মতি ও প্রতিনিধিত্বহীন এ ধরণের সরকারের জাতীয়, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহনের এখতিয়ার ও অধিকারও থাকে না।’

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন আলাদা সরকার ব্যবস্থার বিকল্প নেই। সেটি না হলে হারানো গণতন্ত্র ফিরবে না। গণতন্ত্রের জন্য বিএনপি সংগ্রাম করছে, ভব্যিষ্যতেও রাজপথের সংগ্রাম চলতেই থাকবে।’

এদিকে সময়মতো রাজপথে নামার ইঙ্গিত দিয়ে জনগণকে আস্থা না হারানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে উত্থান-পতন থাকাটা কৌশল। বিএনপি রাজপথে নাই- এ কথা সত্য নয়। আমরা রাজপথে আছি। সময় ও সুযোগমত আবারও আসবো। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রতি আস্থা রাখুন। তার নেতৃত্বই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করে যাব।’

দলীয় সূত্রে জানা যায় নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার- এই দুটি বিষয়ের ওপরই দলটির ফোকাস। কারণ একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অবশ্যই অংশ নিতে হবে। কেননা, আর নির্বাচন বয়কটের চিন্তা বিএনপির মাথায় নেই। যে কোনো প্রক্রিয়ায় তারা নির্বাচনে যেতে চায় সেজন্য তারা একটা ‘সবার জন্য সমান সুযোগ’ তৈরি নিশ্চিত করতে সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রাখবে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন