বিএনপি'র সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ!

  27-06-2017 08:12PM

পিএনএস ডেস্ক : ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে যোগ না দিয়ে বিএনপি যে ‘রাজনৈতিক ভুল’ করেছিল, আগামী নির্বাচনে কি সেই ভুল শোধরাতে পারবে? দলটির নেতা ও রাজনীতি বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, সামনে বিএনপির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে৷

বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিএনপিকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দলটিকে অনেকেই ‘সীমিতভাবে সক্রিয়’ রাজনৈতিক দল হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন৷তাঁদের মতে,বিএনপির রাজনীতি পল্টন কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং আর প্রেসক্লাবে বা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কোনো কোনো নেতার যোগ দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ৷মাঠের রাজনীতিতে জনঘনিষ্ঠ কোনো ইস্যুতে তারা শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেনি৷এমনকি সম্প্রতি দলটির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপর হামলার প্রতিবাদেও কেবল একটি প্রেস ব্রিফিংই করেছে তারা৷এ পরিস্থিতিতে ঈদের পর সহায়ক সরকারের প্রস্তাব নিয়ে বিএনপিকে মাঠে দেখা যেতে পারে বলে জানা গেছে৷

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী অবশ্য দাবি করেন, বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করছে৷তিনি মিডিয়াকে বলেন, “অনেকে মনে করেন, রাজনীতি মানে মাঠে সহিংসতা দেখানো৷কিন্তু আমরা নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করছি৷ প্রত্যেকটি বিষয়ে আমরা মতামত দিচ্ছি৷ আমরা নির্বাচন কমিশন কিভাবে গঠন হবে, আরপিও নিয়ে প্রস্তাব দিয়েছি৷ ভিশন ২০৩০ দিয়েছি৷ রামপাল নিয়ে গবেষণা করে বিবৃতি দিয়েছি৷”

তবে মাঠের আন্দোলনে বিএনপির সাফল্য বা প্রাপ্তি নিয়ে ‘বিএনপিঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এমাজউদ্দীন আহমেদেরও ভিন্নমত রয়েছে৷ তিনি মনে করেন, নেতৃত্ব পর্যায়ে দলটির দূর্বলতা আছে৷তিনি মিডিয়াকে জানান, ঈদের পর আন্দোলনের রূপরেখা দেয়ার বিষয়টি দলটি এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি৷ “বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে দূর্বলতা আছে৷ খালেদা জিয়া অসুস্থ৷ নিঃসঙ্গ৷ তাঁর ছেলে লন্ডনে নির্বাসনে৷স্থায়ী কমিটির অন্য শীর্ষ নেতাদের শক্ত সমর্থনপুষ্ট নন তিনি৷ অসুস্থ বলে নেত্রী হিসেবে নিজেও দলকে ঠিকমতো সময় দিতে পারেন না৷” তিনি মনে করেন, “সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বিএনপি৷ হামলা-মামলার শিকার হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে পারছে না৷ কিন্তু সামনে তাঁদের এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে৷”

কলামিস্ট সোহরাব হাসানও বিএনপির সাংগঠনিক দূ্র্বলতার দিকটি তুলে ধরেন৷ তিনি মন্তব্য করেন, “জনঘনিষ্ঠ ইস্যুগুলোতে বিএনপি তাদের অবস্থান তৈরি করতে পারেনি।” তাঁর মতে, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি সাংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ নির্বাচন ঠেকানোর নামে তারা যে আন্দোলন করেছে, তা সহিংস আন্দোলনে রূপ নেয়ায় এর রাজনৈতিক ফায়দা নিতে পেরেছে আওয়ামী লীগ৷ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ তিনি মনে করেন, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে গিয়ে আন্দোলনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে বিএনপি।”

সোহরাব হাসানের মতে, তারেক রহমান শিগগিরই দেশে আসবেন বা দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠবেন– এমন আশা দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নেই৷ তিনি বলেন, “২০১৪ সালে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আশা ছিল তারেক রহমান দেশে আসবেন৷ নির্বাচন করবেন৷ কিংবা জেলে গেলেও রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবেন৷ কিন্তু এখন আমার মনে হয় না, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকা কালে তাঁদের মধ্যে এ ধরনের কোনো আশা অবশিষ্ট আছে।”

তিনি মনে করেন, দলের নেতাকর্মীদের দৃষ্টি এখন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর দিকে৷ মামলাগুলো প্রায় নিষ্পত্তির মুখে৷ জানা গেছে, রায় বিপক্ষে গেলেও বিএনপি উচ্চ আদালতে আপিল করবে৷

তবে বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনে করেন, বিএনপির নেতৃত্ব সংকট নেই৷ বরং তাঁর মতে, হামলা-মামলা দিয়ে দমন করা হলেও বিএনপি এখন আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী৷ তাঁর ভাষায়, “বিএনপি এখন আগুনে পুড়ে খাঁটি হওয়া একটি দল৷”

আমির খসরু ও ড. এমাজউদ্দীন দু'জনই বিএনপির জন্য কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন৷ দু'জনই মনে করেন, বীতশ্রদ্ধ জনগণ বর্তমান সরকারকে প্রত্যাখ্যান করবে আর বিএনপিকে সেই সুযোগটাই সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে৷

সোহরাব হাসান মনে করছেন, এখন বিএনপির ভরসা ঈদের পর আন্দোলন জমিয়ে তোলার৷ কিন্তু সহায়ক সরকারের যে প্রস্তাব, তা আওয়ামী লীগ গ্রহণ করবে সে আশা খুব একটা দেখছেন না তিনি, কারণ, “গত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সংসদে ছিল বিএনপি৷ এবার তা-ও নেই৷ তাই তাদের প্রস্তাব কতটা আমলে নিবে আওয়ামী লীগ সে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।”

এ বিষয়ে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “এটি শুধু বিএনপির ইস্যু নয়৷ এটি জাতির ইস্যু৷ তারা (আওয়ামী লীগ) যদি জনগণের ভোটাধিকার আবারো কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তো এমনিতেই বদলাচ্ছে, আওয়ামী লীগ প্রত্যাখ্যান করলে তা আরো কঠিন রূপ নিবে বলে আমার ধারণা৷”

সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও বিএনপির দূরত্ব দেখা গেছে৷ দলটির এ বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয় রয়েছে৷ নিজস্ব প্রতীকে আগামী নির্বাচনে জামায়াতের অংশ নেয়ার সুযোগ নেই৷ সাম্প্রতিক কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট প্রার্থীর প্রচারণার জন্য গঠিত দলে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি৷ এ বিষয়ে ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, বিএনপিকে ছাড়া জামায়াতের গতি নেই৷ তাই নির্বাচনকে ঘিরে এ দূরত্ব থাকবে না৷ সোহরাব হাসানও মনে করেন, জামায়াতের সামনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বোঝাপড়ায় আসার কোনো সুযোগ নেই৷ তাই বিএনপির সঙ্গেই তাদের থাকতে হবে৷ ড. এমাজউদ্দীন আরো মনে করেন, হেফাজতে ইসলামকে সুযোগ দিয়ে সরকারি দল যে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে চাইছে, তা সম্ভব নয়৷ কারণ, তাঁর মতে, আওয়ামী লীগ গায়ে যতই ধর্মীয় তকমা লাগাক, ভোটের রাজনীতিতে এর সুফল তারা কখনো ঘরে তুলতে পারবে না৷

সোহরাব হাসান মনে করেন, সামনের দেড় বছর বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ বিএনপিকে এ সময়টাতে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে৷ সেক্ষেত্রে বিএনপি যা গেল আট বছরে করতে পারেনি, তা সামনের সময়গুলোতে কি পারবে? নাকি তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন সীমাবদ্ধ- “জনগণ যদি আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করে” সেই আশায়? সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সোহরাব হাসান মনে করেন, বিএনপি নির্বাচনে যাবে৷ আর খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা বা শাস্তি দেয়া হলে তা নির্বাচনে বিএনপির জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে বলে মনে করেন তিনি৷-ডিডব্লিউ

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন