রবের বাড়িতে পুলিশ সরকারের অস্থিরতার প্রকাশ

  19-07-2017 08:52PM

পিএনএস ডেস্ক : সাতদিন অন্তর অন্তর বাংলাদেশ প্রতিদিনে আমার লেখা নিয়মিত ছাপা হয়। ডেটলাইন বুধবার। যতবার লিখতে যাই, অনেক ইস্যু সামনে এসে দাঁড়ায়। আমি কোনটা রেখে কোনটা ধরবো; মাঝে মধ্যে তাও বুঝতে পারি না। এরি মধ্যে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে। একটি বেসরকারি টেলিভিশনে শব্দ প্রকৌশলী একটি পাশবিক, যৌনবিকৃত অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছেন। টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ তাকে সঙ্গে সঙ্গে বরখাস্ত করেছে। তার অপরাধ সৎ পিতা হয়ে কন্যাকে টানা ৮ বছর ধর্ষণ করে এসেছে, ব্ল্যাকমেইল করেছে। শুধু তাই নয়, মেয়েটির মা এই অন্যায়কে প্রশয় দিয়েছেন। একই সঙ্গে শিশু গৃহকর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতনের বিভৎস চিত্র উঠে এসেছে।

প্রতিটি ঘটনায় হয় পাশবিক যৌন বিকৃতি নতুবা অমানবিক, নিষ্ঠুর মনস্তাতিক বিকৃতি থেকেই। রাজধানীর পল্লবীর গৃহকর্মী আদুরি নির্যাতন মামলায় গৃহবধূ নওরিন জাহান নদীকে আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। ২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পল্লবীর একটি ডাস্টবিন থেকে অর্ধমৃত অবস্থায় গৃহকর্মী আদুরিকে উদ্ধার করা হয়েছিল। গৃহবধূ নদী নির্যাতনের এক পর্যায়ে মনে করেছিলেন, আদুরি মারা গেছে। ৪ বছরের ব্যবধানে আদুরির শারিরীক কাঠামোতে পরিবর্তন আনা গেলেও নির্যাতনে ক্ষত চিহ্নগুলো তার শরীরে রয়ে গেছে। মনের ক্ষত চিহ্ন হয়তো কোনোদিন আর মুছে যাবে না। তেমনি যে মেয়েটি মায়ের কাছে স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠতে গিয়ে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি, সৎ পিতার হাতে ইচ্ছার বিরুদ্ধে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে; সে যতদিন বেঁচে থাকবে মনে দগদগে ক্ষত, যন্ত্রণার ইতি ঘটবে না।

একুশ শতকের কান সংবাদ প্রধান। যেকোনো ঘটনা, যেকোনো অন্যায়, পাশবিকতা এখন গণমাধ্যমে উঠে আসছে। নতুবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষায়, বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে, যোগাযোগ ব্যবস্থায় সমাজ যত অগ্রসর ইচ্ছে ততই যেন অস্থিরতা, নীতিহীনতা, মূল্যবোধহীনতার সংস্কৃতি মানুষের পশুপ্রবৃত্তির মনকে, লোভ ও মনস্তাতিক বিকৃতিকে জাগিয়ে দিচ্ছে। গণমাধ্যমের ব্যাপক প্রসারে পশ্চাদপদ সমাজের সময়ের চেয়ে এখন অনেকে প্রতিবাদ করছেন, আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন, খবর হচ্ছেন। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্র, সংবিধান, আইন ও বিধি-বিধান মোতাবেক প্রতিটি নাগরিকের জানমাল, ইজ্জতের নিরাপত্তা দিতে না পারবে; নাগরিক নিশ্চত করতে না পারবে সেখানে এইসব পাশবিকতা অব্যাহত থাকবে।

আমি লিখেছিলাম, বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়ে একজন শাহীন তরফদার ৫ম বিয়েতে খবর হয়েছেন। একজন বিখ্যাত নারীকে বিয়ে না করলে তিনি সংবাদ হতেন না। তার কুৎসিত, আত্মমর্যাদাহীন, মনস্তাতিক বিকৃতির চিত্রটি গোপন থেকে যেতো। পাঁচটি বিয়ের খবর প্রচার করায় অনলাইন নিউজপোর্টালের ফেসবুক পেইজ ব্লক করিয়েছিলেন। সত্যতা যাচাই করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সেই ব্লক প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

একদা বাননীর অধিবাসীদের অভিজাত এলাকার মানুষ বলে নাগরিকরা সম্মান সমীহ করতো। কিন্তু একের পর এক সেখানে সংগঠিত গ্যাং র‌্যাপের কারণে সমাজ দেখতে পাচ্ছে অভিজাতদের সন্তানরা অস্থির সমাজের অর্থ-বিত্তের উন্মাদনায় কতটা বিপদগামী হচ্ছেন। একটি সম্প্রীতি, আদর্শিক, মূল্যবোধহীন অশ্লীল সমাজ তারা নির্মাণ করছেন। রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন, প্রতিপক্ষকে অত্যাচার, নির্যাতন, রাজদুর্নীতির পথে রাতারাতি ব্যবসা-বাণিজ্য, ভোগ দখল করে ক্ষমতার দাপটে অগাধ বিত্ত-বৈভবের যে উন্মাসিকতা দেখা দিয়েছে। মানুষের সম্পদ লুটপাট, ব্যাংকিং খাত থেকে শেয়ারবাজার সর্বত্র লুটের মহোৎসব এবং বিদেশে অর্থপাচার দেশপ্রেমহীন মনস্তাতিক বিকৃতিরই বহিঃপ্রকাশ।

কন্যার বয়সী মেয়ের প্রতি যৌন লালসা, পিতার বয়সী ক্ষমতাবান বা বিত্তবান পুরুষের প্রতি সুবিধালাভের মোহে যৌন আকাঙ্খা লালন, ভদ্রতার মুখোশ পরে আভিজাত্যের চেহারা নিয়ে যারা আবেগ, অনুভূতি, হৃদয় বহির্ভূত লোভ লালসায় একে অন্যকে ব্যবহার করছে তারা মনস্তাতিক দিক থেকে চরম বিকৃত ছাড়া আর কিছুই নয়। গোটা সমাজ বিকৃতদের দ্বারা আক্রান্ত।

বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষের জাগ্রত ঐক্য, আদর্শিক রাজনীতির পথে সংবিধান, আইন, বিধি-বিধান বলে মানুষের নিরাপত্তা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে সামনে অন্ধকার।

জেএসডির আসম আব্দুর রবের স্বাধীনতা উত্তরকাল থেকে এ পর্যন্ত রাজনৈতিক গতি প্রকৃতি কর্মকান্ডের সঙ্গে একমত নাও হতে পারি। কিন্তু এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে উর্মিমূখর, উত্তাল স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি যে তারুণ্যের নেতৃত্ব গণজাগরণ ঘটিয়েছিল সেইসব কিংবদন্তীর একজন তিনি। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা ডাকসু ভিপি, স্বাধীনতার পতাকা উত্তেলানকারীই নান, মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক আসম আব্দুর রব অনেকের মতোই জীবনের ভুলভ্রান্তি নিয়ে গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথেই হাঁটছেন।

উগ্র, হটকারী বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের বিপ্লবী স্লোগান তুলে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে উঠে আসা তারুণ্যকে ইতিহাসের বিচারে বিপদগামী করলেও চড়া মাশুল নিজেও দিয়েছেন। কিন্তু সংসদে তিনি নিজের শক্তিকেই অতীতে বিজয়ী হয়ে এসেছিলেন, কারো অনুকম্পা বা অনুগ্রহে নয়।

আসম আব্দুর রব তার বাসভবনে নৈশ্যভোজে ডেকেছিলেন ছোট দলের বড় নেতাদের। সেখানে পুলিশ গিয়ে যেভাবে হাজির হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ করেছে; গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বা জনগণের সরকারের জন্য এটা শুভ ও কল্যাণকর নয়। যুগ যুগ ধরে রাজনীতির নানা পথে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে দৃশ্যমান রাজনীতিবিদরা কখনো কোনো নেতার বাসভবনে, কখনো বা কোনো দলের কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে বাইরে পুলিশের গোয়েন্দা কর্মীরা বিচরণ করেছেন। খবর সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করেছেন। এটাই নিয়ম। একজন রাজনীতিবিদের বাসায় পুলিশের এই রকম উপস্থিতি বা আতংক ছড়ানোর প্রয়াস গণতন্ত্র ও শিষ্টাচার বর্হিভূত।

ঐ বৈঠকে একজন দেশবরেণ্য চিকিৎসক, সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধে নিজস্ব বাহিনী গড়ে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের অভ্যন্তরে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বাঘা সিদ্দিকী খ্যাত বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীর উত্তম), সাবেক ডাকসু বিজয়ী পরিশীলিত রাজনীতিবিদ মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এদের কারো এমন কোনো রাজনৈতিক গণ সংগঠন বা শক্তি নেই যে সরকার বিরোধী একটি প্রচণ্ড আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেন। এদের কেউ নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো রাজনৈতিক শক্তি নয়। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর স্বসস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন।

আজকে তারা সবাই সরকারের কট্টর সমালোচক হতে পারেন। সরকার বিরোধী রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করতেই পারেন। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তারা তাদের গন্তব্য নির্ধারণে আলাপ-আলোচনা করতেই পারেন। কিন্তু যাদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ভিত্তি নেই তাদের বৈঠকে পুলিশের উপস্থিতি সরকার যতই শক্তিশালী হোক, তার অস্থিরতার প্রকাশ ঘটিয়েছে।

আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক নেতৃত্ব পুলিশের এই আচরণের সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। বিভিন্ন সরকারের সময় একদল অতিউৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তা একটু বাড়াবাড়ি করেন। এই দিকটা সরকারের খতিয়ে দেখা দরকার। যে আসম রবকে আইয়ুব-ইয়াহিয়া দমাতে পারেনি, যে আসম রব বঙ্গবন্ধুর মতো তার পিতৃতুল্য দেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর সামনে ঔধ্বর্ত্য নিয়ে কথা বলেছেন, সেদিন তিনি পুলিশকে সাহসীকতার সঙ্গে বলতে পারেননি, আমরা এই দেশ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছি। আমরা এখানে রাজনৈতিক বৈঠক করছি। তিনি বলেছেন, এটি একটি সামাজিক ঈদ পরবর্তী নৈশ্যভোজ বা পুর্নমিলনী। তাকেও ভীতসন্ত্রস্ত মনে হয়েছে। মানুষের রাজনীতির জন্য এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

কথা বলতে বলতে অনেক ইস্যু চলে আসে। আগামী দিনের নির্বাচন সামনে রেখে সরকার বিরোধী রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ যে ঘটতে যাচ্ছে আসম রবের বাসভবনের বৈঠক তারই আলামত। সরকার বিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন সফরে গেছেন। নির্বাসিত পুত্র তারেক রহমান, পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনীর সঙ্গে ঈদ কাটিয়ে ফিরবেন। শারিরীক চেকআপও করাবেন। বিএনপি যে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হতে পারেনি, তার প্রমাণ এবারও রাখলেন। দলে মা-ছেলে দুজনই ক্ষমতাবান হলে তার অনুপস্থিতিতে দলের কেউ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হতে পারেননি। দলের গঠনতন্ত্রেই এই বিধান নেই। ক্ষমতা নির্ভর একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান দু’মাসের জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন সেখানে নেতাকর্মীরা কার্যত নেতৃত্বহীন।

লোক দেখানো গণতন্ত্রের পথেও হাঁটা শিখেনি বিএনপি। যাই হোক খোঁজ খবর নিয়ে যতটা জেনেছি, সরকার বিরোধী রাজনীতিতে আসম রবের বাসভবনে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা মহাজোট ও বিএনপি জোটের বাইরে একটি বিকল্প জোট করবেন। পর্দার অন্তরালে আলোচনা চলছে, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ ও রাজনীতিতে তারেক রহমানের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে পারলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার জাতির সামনে দিতে পারলে এই বিকল্প জোটের সঙ্গে, ‘ স্বাধীনতার সংবিধান ভিত্তিতে এক দফার আন্দোলনের যুগপৎ ঐক্য গড়ে উঠবে।’

এক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়া ও ড. কামাল হোসেনকে কো-চেয়ারম্যান করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও ভোটযুদ্ধে বিজয়ী হলে একসঙ্গে সরকার গঠনের রাজনীতির দুয়ার খুলবেন তারা। এমনকি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারে যে কথা বলছেন সেটি আদায়ে উচ্চ আদালতেরও আশ্রয় নিবেন। আগামী দিনের রাজনীতির গতিপথে পর্দার অন্তরালে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে কেবল।

রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকুক। সেটিই মানুষের প্রত্যাশা। কিন্তু সেই রাজনীতি সুমহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক বিধি-বিধানের পথই অনুসরণ নয়; জনগণের কল্যাণের আদর্শিক পথেই হাঁটুক। রাজনীতিবিদরা যত ভুলভ্রান্তিই করুন না কেন; শেষ বিচারে তারাই মানুষের আবেগ-অনুভূুতি ও মনের ভাষা পড়তে পারেন, বুঝতে পারেন। তাদের দরজাই মানুষের জন্য খুলে রাখেন। গণমূখী চরিত্রের মানবিক রাজনীতির পথে তারাই হাঁটেন। মানুষের সুখ দুঃখে অনন্য সাধারণ ভূমিকা রাখেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা শুধু রাষ্ট্র পরিচালনায়ই করেন না, কেবল আওয়ামী লীগেরই নেতৃত্ব দেন না; সারাদেশের কত মানুষের চিকিৎসা ব্যয়, কন্যার বিবাহ, পুত্রের লেখাপড়ায় মানবিক হৃদয় নিয়ে পাশে দাঁড়ান। শেখ ফজলুল করিম সেলিম একজন অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়াই নন; রাজনীতির পথেই বেড়ে ওঠা মানুষ। সংসদে একবার বলেছেন, ‘তথাকথিত সুশীলরা মানুষকে এক কাপ চা পান করান না; আমরা দিবারাত্রি দরজা খুলে রাখি।’ প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও পার্লামেন্টারিয়ান তোফায়ের আহমেদ বঙ্গবন্ধুর আপত্য স্নেহে বড় হয়েছেন। এই বড় হওয়া মানে কেবল রাজনীতিতেই বড় হওয়া নয়; মানুষ হিসাবেও বড় হওয়া। তিনি তার এলাকায় একটি আধুনিক বিদ্যাশ্রমসহ মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সংগ্রহশালা নির্ভর লাইব্রেরীই করছেন না, তিনি অনেক মানবিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন স্বতস্ফূর্তভাবে।

১৯৬৯ তার কপালে নায়কের খেতাপই পরায়নি। বাঙালির মহত্বম নেতাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল ইতিহাসের মাহেন্দ্রক্ষণ। তার অনেক কিছু আমার পছন্দ নাও হতে পারে। কিন্তু ইতিহাসের তোফায়েল আমাদের জাতিস্বত্তার অস্তিত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন কেউ নন। পৃথিবীর দেশে দেশে বিশ্ববরণ্যে রাজনীতিবিদদের জীবনে ভুলত্রুটি থাকে। কিন্তু মানব কল্যাণের রাজনীতিতে ইতিহাসের বাঁকে তাদের মেধা, ‍সৃজনশীলতা ও বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন অমরত্ব দিয়ে থাকে।

সময়টা ছিল ওয়ান ইলেভেনের শ্বাসরুদ্ধকর সময়। ৬৯ এর গণঅভ্যুন্থানে নব কুমার ইনিস্টিটিউটের ছাত্র মতিউর শহীদ হয়েছিলেন। তার স্মৃতিফলক ও কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আমাকে সঙ্গে নিয়ে তোফায়েল আহমেদ গিয়েছিলেন শহীদ মতিউরের মা-বাবাকে দেখতে। শহীদ মতিউরের মা ও পিতা আজহার আলী মল্লিক তোফায়েলকে মাথাগোঁজার ঠাঁই করে দিতে অনুরোধ করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, ঢাকার বাইরে কোথাও হলেও ঘর বানাবার একটুকু জায়গা তাদের প্রয়োজন। শহীদ মতিউরের মাকে তোফায়েল কথা দিয়েছিলেন। সেই কথা তিনি রেখেছিলেন। নিজে ১০ লাখ টাকার এফডিআর করে দিয়ে বসে থাকেননি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সহযোগিতায় উত্তরায় ১০ নম্বর সেক্টরে ৫ কাঠা জায়গা ১ হাজার ১ টাকায় সরকার শহীদ মতিউরের পিতা আজহার আলী মল্লিককে দিয়েছিল। সেই প্লট একটি ডেভেলপার কোম্পানিকে দিয়ে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট পান শহীদ মতিউরের পিতা। নগদ পাওয়া ৭০ লাখ টাকা এফডিআর করেছিলেন। ফ্ল্যাটের একটিতে নিজে থাকতেন। অন্যগুলো ভাড়া দিতেন।

সোমবার রাতে ৯৬ বছর বয়সে আজহার আলী মল্লিক ইন্তেকাল করেছেন। তোফায়েল আহমেদ ছুটে গেছে। শহীদ মতিউরের পিতা এই শান্তি নিয়ে গেছেন, দেশের জন্য তার সন্তান জীবন দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা তার পরিবারকে নিরাপদ জীবন দিয়েছেন।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন