‘দিনকানা না হয়ে সাহসী হোন, নইলে পরিস্থিতি ভয়াবহ’

  24-09-2017 02:52AM

পিএনএস ডেস্ক: দেশের বিচার বিভাগ ও বিচারকদের দৈন্যতা এবং বর্তমান পরিস্থতি বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে গিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, বিচারকরা তো সবসময় ভিটামিন যুক্ত ভালো ভালো খাবার গ্রহণ করেন ফলে তাদেরকে রাতকানা বললে ভুল হবে, তাই তাদেরকে দিনকানা বলতে হবে। কেননা, তারা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখেও দেখছেন না।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিচার বিভাগ-সরকার বাহাস: বাংলাদেশে আইনের শাসন ভবিষ্যৎ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনা সভাটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্স স্টাডিজ (বিপস)।

বিচারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বর্তমানে লাখ লাখ মামলা বিচারের জন্য আদালতে পড়ে আছে। হাজার হাজার মানুষ বিচারের উপেক্ষায় কারাগারে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন। এছাড়া আদালত অবমাননার বিষয়ে বিচারকদের সংজ্ঞা ও অবস্থান কী তাও পরিস্কার নয়। সামান্য কিছুতেই মুক্তিযোদ্ধাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার করেন। অথচ গত একমাস ধরে প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিমকোর্টকে ঘিরে যে অশালীন বক্তব্য প্রদান করা হচ্ছে সে ব্যাপারে তারা নীরব। ফলে এটা খুবই দুঃখজনক।

তিনি আরো বলেন, আমাদের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে বিশ্বের যেকোনো জায়গায় নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা কিন্তু আজ কাশ্মীরে গণহত্যা চলছে। সেব্যাপারে কোনো কথা নেই। রাখাইনে গণহত্যা চলছে, এমন কী দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটছে সেব্যাপারেও বিচার বিভাগের কোনো পদক্ষেপ নেই। বিচার বিভাগ তো সরকারের প্রতি সুয়োমোটো ঘোষণা করতে পারে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে নীরব।

তিনি বলেন, ভারতে বিচারকরা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন, পাকিস্তানে তো বিচারকদের সাহসী ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীকেও পদ ছাড়তে হয়েছে। কিন্তু আমাদের বিচারকরা দিনকানা, তারা প্রকাশ্যে অনেক কিছু ঘটলেও দেখেন না। তিনি বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলেন, দিনকানা হবেন না, অন্যথা আপনাদের জন্যই সামনে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশের পর যা হচ্ছে সেটা আমাদের বিচার বিভাগের ভবিষ্যতের জন্য খুবই অশনি সংকেত। তাই সময় থাকতে আপনাদের উচিত জনগণের স্বার্থে ভূমিকা রাখা।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টিতে বিএনপির দেয়া প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক বলে মনে করেছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

এদিকে নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বিএনপিকে সন্ত্রাসী বলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে একই অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যে দল জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত, গণতান্ত্রিক, নির্বাচনমুখি দল। এই দল দেশকে পাঁচবার পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছে জনগণের ভোটে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জনগণের সরাসরি ভোটে তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশের জনপ্রিয় দল বিএনপি। এই দল সম্পর্কে বিদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখে সন্ত্রাসী বলা, জঙ্গি বলা এটা নিন্দা করার ভাষা আমাদের নেই। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই ধরনের কথাবার্তা বলে দেশকে আজকে বিভক্ত করে তারা (আওয়ামী লীগ) যেভাবে ২০১৪ সালে বিনা ভোটে গায়ের জোরে ক্ষমতায় গিয়েছিল ভবিষ্যতেও আবার সেই ধরনের গায়ের জোরে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে দলীয় রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশের জনগণ তাদের সে পদক্ষেপটিকে সমর্থন করবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, সরকারের অপকর্মের কথা এই রায়ে প্রকাশ পাওয়ায় তারা বিচার বিভাগের উপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন। সরকার এবং বিচার বিভাগকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এই রোহিঙ্গারা আমাদের দেশের জন্য সমস্যা। আমরা চাই কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে নিজ মাতৃভূমিতে রোহিঙ্গাদের পাঠানো হোক।

তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে, দেশের সকল সমস্যা সমাধান করতে নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন। একমাত্র নির্বাচনই পারে সকল সমস্যা সমাধান করতে।

ব্যারিস্টার এম সারওয়ার হোসেইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- সৈয়দ ইবরাহিম বীর প্রতীক, আ্যডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, আ্যডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা প্রমুখ।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন