গাজীপুর-৪ আসনে আ.লীগ বনাম বিএনপি লড়াই

  22-10-2017 06:11PM

পিএনএস, কাপাসিয়া : গাজীপুর-৪ কাপাসিয়া, নির্বাচনী আসনটি উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৮ হাজার ২৬৯ জন। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং মুক্তিযোদ্ধের অগ্রনায়ক অন্যতম সংগঠক বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমদের নির্বাচনী এলাকা। এই আসনে তাজউদ্দীন কন্যা সিমিন হোসেন রিমি বর্তমানে এম পি ।

পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বি এন পি থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আ স ম হান্নান শাহ্ নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারো এই আসনে বি এন পি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক মন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আ স ম হান্নান শাহ্’র পুত্র শাহ্ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজ। হান্নান শাহ্’র মৃত্যুর পর উপজেলা বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ শাহ্ রিয়াজুল হান্নানের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। এখনো পর্যন্ত শাহ্ রিয়াজুল হান্নান বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী একক প্রার্থী।

অপরদিকে বর্তমান সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমির নাম শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন ১৪ দলের শরিক দল গনতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ডাঃ শহীদুল্লাহ সিকদার।

এ ছাড়া শহীদ তাজউদ্দীনের আপন ভাগনে দাতব্য প্রতিষ্ঠান মরিয়ম ফাউন্ডেশনের কর্নধার আলম আহম্মদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে আলোচনায় রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কমিউনিষ্ট (সিপিবি) পার্টির নেতা মানবেন্দ্র দেব এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে। সারা দেশের মতো গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনেও নির্বাচনের পালে হাওয়া বইছে। নির্বাচনের দিনক্ষন ঘনিয়ে আসতে এখনো অনেক দেরি। যতই নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে ততই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন।

উভয় দলের নবীন ও প্রবীন সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা লবিং শুরু করেছেন। তৃনমুলের নেতাকর্মীদের নিয়ে গ্রুপিং ও শোডাউন করছেন। প্রচারনাও শুরু করে দিয়েছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি নিয়মিত সভা-সমাবেশ,গনসংযোগ ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করছেন। ফেসবুক,টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে তার সমর্থকরা।

সিমিন হোসেন রিমি বলেন আমার বিশ্বাস দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। জনগন আবার আমাকে নির্বাচিত করলে মাদকমুক্ত সমাজ ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখব। অপরদিকে আলম আহম্মদ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আলহাজ¦ মোতাহার হোসেন মোল্লাকে নিয়ে কৃষক লীগ ব্যানারে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ,গনসংযোগ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আর্খিক সহায়তা ও সমাজসেবামুলক কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাপাসিয়া আওয়ামী লীগেও কোন্দল রয়েছে বলে জানা যায়। এর সুযোগ নিতে চাইছেন গনতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি ডাঃ শহীদুল্লাহ সিকদার।

এলাকায় প্রতি সপ্তাহে একদিন বিনামুল্যে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, গনতন্ত্রী পার্টি ১৪ দলের একটি শরিক দল । জোটের পক্ষ থেকে শরিক দলকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আমি নির্বাচন করব। বিভিন্ন সময় স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছেও তিনি প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

অপরদিকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আ স ম হান্নান শাহর মৃত্যুর পর তার যোগ্য উত্তরসূরি শাহ্ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজের নেতৃত্বে দলের নেতা-কর্মীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। স্থানীয় নবীন ও প্রবীন নেতাকমীরা হামলা মামলায় জর্জরিত হলেও দলীয় কর্মকান্ডে একাট্রা। শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ২০০৮ সালের পর থেকে কাপাসিয়ার সকল ইউনিয়নের তৃণমূল নেতৃবৃন্দ দলের আভ্যন্তরিণ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

গত ২০ অক্টোবর কাপাসিয়ার ঘাগটিয়া চালা ওয়েল ফেয়ার ক্লাব মাঠে উপজেলা বিএনপি আয়োজিত হান্নান শাহ্’র স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে দলের মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন এবং শাহ্ রিয়াজুল হান্নান’কে আগামী দিনে হান্নান শাহ্’র যোগ্য উত্তরসূরি হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হান্নান শাহ্’র উত্তরসুরি শাহ্ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজ এ আসনে একক প্রার্খী বলে মনে করছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিউনিষ্ট (সিপিবি) পার্টি অংশ গ্রহন করলে কমরেড মানবেন্দ্র দেব প্রার্থী হবেন বলে জানান। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের প্রবীন নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুদ্দিন খান।

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আ স ম হান্নান শাহ আওয়ামী লীগের প্রার্খী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের সহধর্মিনী জোহরা তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধিতা করে নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হয়ে আসেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের ১২জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের ছোট ভাই অ্যাডভোকেট আফছার উদ্দিন আহমদ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আ স ম হান্নান শাহ’র সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করে জয়লাভ করেন।

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচনে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের পুত্র সোহেল তাজ হান্নান শাহ্’র সঙ্গে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি থেকে অর্থনীতিবিদ এম এ আব্দুল মজিদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এ

বারও সোহেল তাজ বিজয়ী হন। তারপর সোহেল তাজ প্রথমে মন্ত্রীত্ব থেকে পরে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করলে এ আসনে উপ-নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে তার বড়বোন সিমিন হোসেন রিমি তার আপন চাচা অ্যাডভোকেট আফছার উদ্দিন আহমদের (স্বতন্ত্র প্রার্থী) প্রতিদ্বন্ধিতা করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী দশম সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ডক্টর মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করে সিমিন হোসেন রিমি আবারো নির্বাচিত হন।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন