ঘুরেফিরে সেই লিটন-বুলবুল

  17-11-2017 08:05AM


পিএনএস, রাজশাহী: রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) এ পর্যন্ত চারটি নির্বাচনের মধ্যে তিনবারই মেয়র পদে জয় পেয়েছেন বিএনপি সমর্থক প্রার্থী। মাঝে একবার জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।

বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু নির্বাচিত হয়েছিলেন দুইবার। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। রাসিকের বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে। তবে সামনের ওই নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নানা হিসাব-নিকাশ। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নেমে পড়েছেন মাঠে। কিন্তু এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে নতুন কোনো প্রার্থী এখনো আলোচনার কেন্দ্রে আসতে পারেননি।

সরেজমিন ঘুরে এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনেও বর্তমান এবং সাবেক দুই মেয়রকে ঘিরেই আলোচনা চলছে। যদিও বিএনপির মিজানুর রহমান মিনু এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না বলেই নিশ্চিত হওয়া গেছে। নির্বাচনে মিনু অংশ না নিলেও তাঁর অনুসারীরা কোন দিকে থাকবে, সেটি আলোচনায় সামনে চলে আসবে।

ফলে বিএনপির অন্য কেউ প্রার্থী হলেও মিনুর আশীর্বাদ তাঁর জন্য খুব প্রয়োজন হবে।

রাজশাহী সিটি নির্বাচনের তফসিল এখনো ঘোষণা না হলেও এরই মধ্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে শুরু হয়েছে ভোটের আলোচনা। আর বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচনমুখী তৎপরতা লক্ষ করা গেছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। সেবার মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। ২০০২ সালে দ্বিতীয়বারের নির্বাচনেও বিজয়ী হন মিনু। ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় মিনু কারাগারে থাকায় অংশ নিতে পারেননি। ফলে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সমর্থন পান যুবদল নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে তিনি পরাজিত হন। ২০১৩ সালে সর্বশেষ নির্বাচনে লিটনকে হারিয়ে নির্বাচিত হন বুলবুল। যদিও নির্বাচনের আগে মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহী নগরীকে ঢেলে সাজাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছেন। নগরের উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোটের রাজনীতিতে হেরে যায় লিটনের উন্নয়নের রাজনীতি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন সবুজ সংকেত পেয়েছেন। যদিও গত ১ নভেম্বর রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ অনুষ্ঠানে বক্তব্যে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এখনো কোনো প্রার্থীকেই গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়নি। যোগ্যতা অনুযায়ী এবার প্রতিটি নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। এর পরও আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে লিটনকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। লিটন নিজেও নির্বাচনী প্রস্তুতি হিসেবে নানা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে শুরু করেছেন।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক মীর ইশতিয়াক আহমেদ লিমন বলেন, ‘আগামী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বিকল্প হিসেবে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কাউকে ভাবছে না। এমনকি তিনিও এ নির্বাচনে অংশ নিতে এরই মধ্যে মাঠে নেমে গেছেন। দলের নেতাকর্মীরাও তাঁর হয়ে মাঠে নামছে। লিটনের সময়কার উন্নয়নের বিষয়গুলো তুলে ধরেই আমরা সাধারণ ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। আশা করছি এবারকার নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীরই জয় হবেন। ’

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘মেয়র পদে নির্বাচন করতে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকেই আমরা এগিয়ে রাখছি। আমরা তাঁর হয়েই মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। দলের নেতাকর্মীরাও তাঁর হয়ে কাজ করছে। এবার আমরা সব কিছু উজাড় করেই সিটি নির্বাচনের মাঠে নামব। এই নগরীর উন্নয়ন করতে হলে লিটনের বিকল্প কাউকে এখন পর্যন্ত আমরা দেখছি না। ’

এদিকে বিএনপি থেকে এখনো সিটি নির্বাচন নিয়ে কোনো ঘোষণা আসেনি। দল অংশ নিলেও মেয়র পদে প্রার্থীর ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসতে পারে কি না, তা নিয়ে কেউ কিছু বলতে চাইছে না। তবে সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটই বলে দেয় আগামী সিটি নির্বাচনেও মেয়র পদে বুলবুলই হচ্ছেন বিএনপির প্রার্থী। সে ক্ষেত্রেও বুলবুলকে ভরসা করতে হবে মিনুর আশীর্বাদের ওপর।

জানা যায়, রাজশাহী মহানগর বিএনপিতে রয়েছে তুমুল বিরোধ। বিশেষ করে গত ডিসেম্বরে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সভাপতি করে মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণার পর এই বিরোধ প্রকট আকার ধারণ করে। তবে নির্বাচনকেন্দ্রিক সেই বিরোধ ধীরে ধীরে স্তিমিত হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন মহানগর বিএনপির দায়িত্বশীল কয়েক নেতা। আবার হত্যাসহ নাশকতার অভিযোগে দায়েরকৃত অন্তত ১৯ মামলার আসামি বুলবুল শেষ পর্যন্ত সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না, সেটি নিয়েও রয়েছে সংশয়।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘আমরা সিটি নির্বাচন নিয়ে এখনই কিছু ভাবছি না। নির্বাচনী পরিবেশ কী হবে, সেটা দেখেই আমাদের নির্বাচনের কৌশল ঠিক করব। তবে দলের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিরাই নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, এটাই স্বাভাবিক। ’

আওয়ামী লীগ নেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। আমার সময়ে রাজশাহীর যে উন্নয়ন হয়েছে, তা এখনো মানুষ মনে রেখেছে। তবে এই উন্নয়ন এখন থমকে গেছে। এখন জনগণ সেটা উপলব্ধি করছে। ফলে আবারও উন্নয়নের জন্যই জনগণ আমাকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাইছেন। এবার রাজশাহী নগরবাসী আর কোনো ভুল করতে চাইবে না। ’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দলীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। এটাও আগামী নির্বাচনে এবার বড় কাজে দেবে। গত নির্বাচনেও বিভেদ ছিল না। কিন্তু নেতাকর্মীরা উন্নয়নেই ভোট হয়ে যাবে বলে বসেছিলেন। কিন্তু এবার তাঁরা এখন থেকেই মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ’

মহানগর বিএনপির সভাপতি ও বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘নির্বাচনী মাঠে আমাদের নামতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে আমাদের কাজ থেমে নেই। আমি সাধ্যমতো নির্বাচনী গণসংযোগ করে যাচ্ছি। বিগত সময়ে সরকারের অসহযোগিতার কারণে আমাকে উন্নয়নকাজ করা থেকে বঞ্চিত রাখলেও জনগণ সেটি ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। কাজেই জনগণের সঙ্গে আমি আছি। তারাও আমাকে কাছে টেনে নিচ্ছে। ’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপিতে কোনো বিভেদ নেই। আমরা একসঙ্গে সব কর্মসূচিতে এখন অংশ নিচ্ছি। ’

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন