বুদ্ধিজীবীদের হত্যা জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক: জামায়াত

  15-12-2017 02:50AM

পিএনএস ডেস্ক: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, বুদ্ধিজীবীগণ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। জাতির এই জাগ্রত সন্তানদের মেধা, মনন, প্রজ্ঞা ও মনীষা দেশ ও জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। কিন্তু মহান বিজয়ের মাত্র ২ দিন আগে বুদ্ধিজীবীদের নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা ছিল দেশ ও জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং শহীদদের পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

তিনি বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিশে শুরা সদস্য এ কে মজুমদার, জামায়াত নেতা এন হক মোল্লা ও আইয়ুব আলী প্রমূখ।

সেলিম উদ্দিন বলেন, মূলত জাতি হিসেবে আমাদেরকে যারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দিতে চায়নি, তারাই এই নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের নেপথ্যের শক্তি। কিন্তু বিজয়ের প্রায় ৫ দশক অতিক্রান্ত হলেও এই হত্যাকান্ডের কুশিলবরা আজও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। স্বাধীন বাংলাদেশে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সারের ভাই জহির রায়হানের অন্তর্ধান আজও রহস্যাবৃত। মূলত জহির রায়হান বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন বলেই রহস্য প্রকাশ হওয়ার আগেই তাকে অপহরণ ও হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার দীর্ঘকাল পরেও দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীরা নানাভাবে জুলুম-নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন। বস্তুত শহীদ জহির রায়হানের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ, ডকুমেন্টারি-প্রামাণ্য চিত্র সংরক্ষিত থাকার কারণেই তাকে অপহরণ ও পরবর্তীতে হত্যা করা হয়েছে। এসব তথ্য-উপাত্ত জাতির কাছে প্রকাশ পেলে যাদের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসার আশঙ্কা ছিল, মূলত তারাই এসব হত্যাকান্ড ও অপকর্মের সাথে জড়িত। তিনি এই অপশক্তি সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা না করে এই ইস্যুকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের হাতিয়ার বানিয়েছে। সরকারের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ও অপরাজনীতির অংশ হিসেবেই মিথ্যা ও সাজানো অভিযোগে প্রহসনের মাধ্যমে বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন, সাবেক সফল মন্ত্রী ও সাবেক আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লা এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। মূলত চক্রান্তকারীরা জাতীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে দেশকে পরাশ্রয়ী করদরাজ্য বানানোর গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি শহীদদের ত্যাগ ও কোরবানীকে কবুল করতে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করেন এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, সরকার দেশের মানুষকে সুশাসন উপহার দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের উপর্যুপরি উর্দ্ধগতির কারণে সাধারণ মানুষের নাভিশ^াস উঠেছে। চাল ও পিঁয়াজের মূল্য বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। বিদ্যুতের মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধির কারণে জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে অপ্রত্যাশিতভাবে। কিন্তু ব্যর্থ ও জুলুমবাজ সরকার জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। মূলত সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই গণমানুষের ব্যাপারে তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। তাই দেশ ও জাতিকে এই দুঃশাসন থেকে মুক্ত করতে হলে গণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। তিনি অগণতান্ত্রিক ও বাকশালী সরকারের পতনের লক্ষ্যে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত
জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর (ভারপ্রাপ্ত) ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য কামাল হোসাইনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, জামায়াত নেতা সৈয়দ সিরাজুল হক, জসিমুল হক পাটোয়ারি, রবিউল হোসেন, হেদায়েত উল্লাহ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।

সভাপতির বক্তব্যে ড. হেলাল বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে মরিয়া হানাদার বাহিনী ও কুচক্রী মহল ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলার বুদ্ধিজীবীদের উপর উন্মত্ত মৃত্যুকামড় দিয়েছিল। সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে রাতের আঁধারে হত্যা করেছিল দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ কৃতী সন্তানদের। ঘাতকগোষ্ঠীর হীন লক্ষ্য ছিল, লড়াকু বাঙালী জাতি স্বাধীনতা অর্জন করলেও যেন বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পঙ্গু, দুর্বল ও দিক-নির্দেশনাহীন হয়ে থাকে। দেশটির স্বাধীনতা আটকানো না গেলেও শিশুরাষ্ট্রটি জ্বরা আর অপুষ্টিতে মুখ থুবড়ে মারা পড়বে। সেই টার্গেট থেকেই সেদিন হায়েনারা বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল।

পৃথিবীর অনেক জাতি যুদ্ধ করে, অনেক জীবন ও রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে; কিন্তু এত প্রাণক্ষয় কোন জাতির ভাগ্যে ঘটেনি। শুধু তাই নয়, জাতির বিবেক বলে খ্যাত বুদ্ধিজীবীদের এমন নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাও ইতিহাসে বিরল। এ ঘটনায় স্তম্ভিত ও হতবাক হয়ে যায় বিশ্ববিবেক। বাঙালী জাতির মুক্তি সংগ্রামে এসব বুদ্ধিজীবী নিজেদের মেধা, মনন ও লেখনীর মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রেরণা যুগিয়েছেন, পথ দেখিয়েছেন মুক্তির, উদ্দীপ্ত করেছেন অধিকার আদায়ে। ড. হেলাল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যথাযথ মর্যাদায় শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং সকল শহীদদের পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

তিনি আরোও বলেন, দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে বিজয় অর্জনের পর যারা জাতিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দিতে চায়নি তারাই এই নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের নেপথ্য শক্তি। স্বাধীনতার ৪ দশক পরেও দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীরা এখনো নানাভাবে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী গোষ্ঠী এই ইস্যুকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহন করে মিথ্যা অভিযোগে প্রহসনের মাধ্যমে সাবেক আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ সহ জামায়াতের জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও প্রতিবাদী কন্ঠ সমুহকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। মূলত চক্রান্তকারীরা জাতীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে দেশকে মেধাহীন ও করদরাজ্য বানাতে চায়। তিনি শহীদদের ত্যাগ ও কুরবানীকে কবুল করতে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করেন।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন