জিয়াউর রহমান ও বাংলাদেশ

  19-01-2018 11:11AM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : আজ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, জেড ফোর্সের প্রধান ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮২তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৬ সালের এই দিনে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব। যার জন্মে এ দেশের মাটি ও মানুষের প্রভূত কল্যাণ সাধিত হয়েছে। কর্মজীবনে তিনি তাঁর জন্মকে সার্থক হিসেবে প্রমাণ করেছেন দেশ ও বিশ্ববাসীর সামনে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে শুধু যুদ্ধ পরিচালনা করেননি; ষ্বাধীনতার ডাক দিয়ে জেড ফোর্স গঠন করে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ফলস্বরূপ স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করে। মুক্তিযুদ্ধের পর জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন এবং ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি চার বছর বাংলাদেশ শাসন করার পর ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন।

তৎকালীন জাতীয় নেতারা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে যখন ব্যর্থ দেশের কঠিন সময়ে তিনি তখন সাহসী সিদ্ধান্ত নেন ও সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে সক্ষম হন। দুর্যোগে তিনি কাণ্ডারির ভূমিকা পালনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। জন্ম যে সৃষ্টির লক্ষ্যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। দেশ ও জাতি গঠনে তাঁর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণযোগ্য। স্বনির্ভর দেশ গঠনে এবং দেশকে অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর উদ্যোগ সবার কাছে প্রশংসনীয়। যিনি দেশকে ভালোবেসে শুধুই দিয়ে গেছেন, তাঁর নাম শহীদ জিয়াউর রহমান।

মূলত একাত্তরে দেশ যখন গভীর সংকটে, জাতি যখন দিশেহারা তখন তিনি সহময়ের সাহসী সিদ্ধান্ত নেন। জীবন বাজি রেখে তিনি দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। তাঁর আহ্বানে দিশাহীন জাতি করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন। রাজনীতিবিদরা যখন পালিয়ে বেড়ান তখনই তিনি গর্জে ওঠেন। সেক্টর কমান্ডার হিসেব জেড ফোর্স গঠন করে তিনি যুদ্ধ করেন। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে এবং তা কার্যকরে সশস্ত্র লড়াই শুরু করে দেন সহকর্মীদের সঙ্গী করে। যুদ্ধের ময়দানে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাব পান।

স্বাধীনতার পর দেশ যখন আবার সংকটে তখনো তিনি সে স্বাখ্সর রাখেন। ক্ষমতা লোভি একশ্রেণীর অফিসারের বেশামাল আচরণে সিপাহি-জনতার ঐক্য হয়। এই সময় মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সিপাহি-জনতা জিয়াউর রহমানকে সামনে নিয়ে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় কালক্রমে তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। ক্ষমতাসীন হয়ে তিনি দেশ ও জাতির কল্যাণে গণমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন বহুদলীয় গণতন্ত্র। যে গণতন্ত্রের সুফল হিসেবে একদলীয় বাকশালের জাঁতাকল থেকে বেরিয়ে আসে পায় আওয়ামী লীগ।

জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতির সূচনা করেন। জাতিকে উপহার দেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের নতুন দর্শন। পরিকল্পিতভাবে দেশ ও জাতি গঠনে যুগোপযোগী ১৯ দফা কর্মসূচি দিয়ে উৎপাদনমুখী রাজনীতি শুরু করেন। তাঁর সময়ে খাল কাটা কর্মসূচি ও সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। বিদেশে রফতানি করা হয় চাল। তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ হয় স্বনির্ভর। মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্নের কিছুটা হলেও বাস্তবে পায়। আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতির সময়ে বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।

ওআইসিকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর সংহতি জোরদারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন জিয়াউর রহমান। মধ্যপ্রাচ্য সংকট সমাধানে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশ নিয়ে ‘সার্ক’ গঠনের বিষয়টি তাঁর মাথা থেকেই আসে। পররাষ্ট্র নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনেন। তিনি চীনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন সম্পর্কের সূচনা করেন। তাঁর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর পাশাপাশি তাঁর সৎ, সাহসী ও যুগোপযোগী নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুদৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড়ায়।

ঐতিহাসিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানদের মতে, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসের অম্লান অংশ। তাকে ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস অপূর্ণ থেকে যাবে। যে বা যারা তাকে ছাড়া স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে মতলবী কাজে লিপ্ত, তারা মূলত নিজেদের খাটো করছে। আর এটা করে তারাই, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যাদের ন্যূনতম সম্পর্ক ছিল না। হাজারো সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যারা মুক্তিযুদ্ধে যায়নি। সুবিধাবাদী ওই চক্রটি সুযোগ বুঝে বোল পাল্টে ইতিহাস রচনার নামে অসত্য তথ্য উপস্থাপনে মরিয়া। এদের সম্পর্কে দেশপ্রেমিকদের সতর্ক থাকতে হবে।

জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বিএনপি সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তাঁর আদর্শে লালিত দলকে এ দেশের মানুষ আজও সমান ভালোবাসে। জাতীয় নির্বাচনে এর প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মর্মান্তিকভাবে শাহাদাতবরণ করেন। দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারী ও স্বনির্ভর বাংলাদেশের শত্রুরা দেশপ্রেমিক কালজয়ী জাতীয়তাবাদী এই নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতির চাকাকে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল। আজকের এই দিনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহ মরহুম জান্নাত দান করুন।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন