খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড : মনোবল হারায়নি ২০ দলীয় নেতা-কর্মীরা

  16-02-2018 08:25AM



পিএনএস ডেস্ক: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়ার ঘটনায় বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা ভীষণ ক্ষুব্ধ। সারা দেশে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হলেও তারা মনোবল হারাননি। বরং গত কয়েক দিনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তারা বেশ উজ্জীবিত। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ অনুযায়ী কোনো ফাঁদে পা না দিয়ে এখন তারা পরিস্থিতি সামলে ওঠার চেষ্টা করছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় দলটির নেতাকর্মীরা এখন আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা

একই সুরে কথা বলছেন। তাদের মূলকথা হলো- আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জেল থেকে মুক্ত করে আনা এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করতে হবে। তাই এই মুহূর্তে কঠিন কোনো কর্মসূচিতে শক্তি ক্ষয় না করে চলমান বৈরী পরিস্থিতি সামলে চূড়ান্ত আন্দোলনের পথে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি ও বিশ দলীয় জোট। খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর পর বিএনপির গত কয়েক দিনের কর্মসূচিতে এসব বিষয় পরিষ্কার হয়েছে। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালেও এসব জানা যায়।

প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। দলের চেয়ারপারসনকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। রায়ের পর গত শুক্র ও শনিবার সারা দেশে বিােভ কর্মসূচি পালন করা হয়। সোমবার জাতীয় প্রেস কাবের সামনে হয় মানববন্ধন এবং মঙ্গলবার হয় নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস কাবের সামনে তিন ঘণ্টা অনশন কর্মসূচি পালন করে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট।

খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে সারা দেশে সাড়ে চার হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অনেকের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে নতুন মামলা। কিন্তুএসবের পরও নেতাকর্মীরা থেমে যাননি। রায় ঘোষণার দিন রাজধানীতে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সাথে ছিলেন হাজারো নেতাকর্মী। একপর্যায়ে মগবাজারে নেতাকর্মীদের ভিড়ে গাড়িবহরের গতি স্থির হয়ে যায়। কাকরাইল মোড়ে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ছুড়লেও নেতাকর্মীরা সরে যাননি। তারা চাঁনখারপুল পর্যন্ত বেগম জিয়ার গাড়িবহরের সাথে সাথে যান।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সাথে আলাপকালে তারা বলেন, সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে বানোয়াট মামলায় কারাগারে পাঠিয়ে, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে বিএনপি এবং বিশ দলীয় জোটকে দুর্বল করার মাধ্যমে আবারো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো ভোটারবিহীন নির্বাচন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু সরকারের সেই স্বপ্ন পূরণ হবে না। খালেদা জিয়া এবং বিএনপি ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা ও পরামর্শক্রমে বিএনপির সিনিয়র নেতারা দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে আইনি লড়াই ও আগামী নির্বাচন নিয়েই কাজ করছে দলটি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে বলেন, আদালতের ওপর ভর করে সরকার তাদের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করেছে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা যিনি দীর্ঘ ৯ বছর গণতন্ত্রের পক্ষে এবং স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন তাকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়েছে। আমরা স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, দেশনেত্রীর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে। আমাদের এই সংগ্রাম দেশনেত্রী এবং নেতাকর্মীদের মুক্ত করার লড়াই। আমরা দেশনেত্রীকে জেল থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসবই। বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের সাথে আছেন। তিনি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া আগামী নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। দেশনেত্রী কারাগারে যাওয়ার পরে আরো শক্তিশালী হয়েছেন, তার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। তিনি জাতীয় নেতা থেকে আন্তর্জাতিক নেত্রী হয়েছেন।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আমরা মুক্ত করে আনব। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করে আসছে। এমন কোনো শক্তি নেই, যা বিএনপিকে ভাঙতে পারে।

বিশ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, বিগত ছয় বছরের বেশি সময় ধরে ২০ দলীয় জোট একসাথে আছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাস দুয়েক আগ থেকেই সরকারের প্রচেষ্টা ছিল জোটের কিছু শরিক দলকে প্রলুব্ধ করে নির্বাচনে নিয়ে আসার। সেই প্রলোভন দেয়া হয়েছিল কল্যাণ পার্টিকে। আরো যাদের প্রলোভন দেয়া হয় তারা সবাই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রস্তাবগুলো প্রত্যাখ্যান করেছিল। আবারো জোট ভাঙার চেষ্টা চলবে না এমনটা বলা যায় না; হতেই পারে। কিন্তু জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জোটের সর্বশেষ দুইটি মিটিংয়ে সে বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। আমরা সবাই আলোচনায় অংশ নিয়েছি। খালেদার অনুপস্থিতিতে আমরা সব শরিক দল জোটের প্রতি আনুগত্য অটুট রাখব। তবে প্রধান শরিক দলটিও যেন আমাদের মূল্যায়ন করেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে ২০ দলীয় জোট অটুট থাকবে।

২০ দলীয় জোটের শরিক ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা অতীতেও ঐক্যবদ্ধ ছিলাম এখনো আছি। জোটের প্রধান নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে বিএনপির গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে।

বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, কারাগারে যাওয়ার আগে বেগম খালেদা জিয়া জোট নেতাদের সাথে বৈঠক করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি পালনের কথা বলে গেছেন। সে মোতাবেক আমাদের জোটের নেতারা বিএনপির কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন এবং তাতে সমর্থন জানিয়েছেন।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন