জনগণকে কবরে পাঠাতে চান প্র্রধানমন্ত্রী : রিজভী

পিএনএস ডেস্ক:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশের জনগণের সকল ‘দুর্গতির জননী’ আখ্যা দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘উনি (শেখ হাসিনা) জনশূন্য এমন একটি দেশ চাচ্ছেন যেখানে তাঁর পরিবার ছাড়া আর কেউ থাকবে না। জনগণকে কবরে পাঠিয়ে তিনি শুধু মাটির মালিক থাকতে চান।’

বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন- ‘বিএনপি এখন দিশেহারা নয়, বেপরোয়াও। জনগণ তাদের আন্দোলনে সাড়া দেয়নি’। আমি ওবায়দুল কাদের সাহেবকে বলতে চাই- যাদের পায়ের নীচের মাটি থাকে না কেবল তারাই এমন কথা বলতে পারে। আপনাদের মনের ইচ্ছা কী তা আমরা ভাল করেই বুঝি। আপনাদের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না বলেই আপনি প্রলাপ বকছেন। গত পরশু দিনও আওয়ামী লীগের পরম সখা এরশাদ সাহেব বলেছেন- আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এখন শূণ্যের কোঠায়। আমি সেজন্য আবারও ওবায়দুল কাদের সাহেবকে বলতে চাই, নির্দয় নাৎসিদের পতন হলে কিন্তু তাদের আর কোথাও খোঁজ মেলে না। পৃথিবীতে কোনও স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের শেষ রক্ষা হয়নি। আপনাদেরও হবে না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিচার বিভাগ, রাজনীতি, গণমাধ্যম ও মানুষের বাক-স্বাধীনতাকে হরণ করে সকল নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়ে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার রাষ্ট্রের সকল স্তম্ভ ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। এখন পরিকল্পিত নৈরাজ্য তৈরির জন্য ওবায়দুল কাদের সাহেবরা উস্কানি দিচ্ছেন। ভয়ঙ্কর কিছু দুর্ঘটনা সৃষ্টির পরিকল্পনার চক্রান্ত ব্যর্থ হওয়ায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বেহুঁশ হয়ে খাপছাড়া কথাবার্তা বলছেন। কারণ বিএনপি’র ওপর দায় চাপানোর যে দায়িত্বটি তাকে দেয়া হয়েছে সেটি পালনে অকার্যকর হওয়ায় চাকুরি হারানোর ভয় তাকে পেয়ে বসেছে।’

নেতাকর্মীদের বার বার রিমান্ডে নেয়ার ঘটনায় আশঙ্কা প্রকাশ করে রিজভী বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি শফিউল বারী বাবুকে আজ আদালতে হাজির করা হবে। আজকেও তাকে পুনরায় রিমান্ডে নেয়ার আবেদন এবং আবেদন মঞ্জুর করা হবে কী না সে বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন রয়েছি। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদল সভাপতি মিজানুর রহমান রাজসহ তরুণ নেতাদেরকে রিমান্ডের পর রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। জাকির হোসেন মিলনকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ফলে মৃত্যুবরণের কারণে আমরা এখন শফিউল বারী বাবু, রাজিব আহসান এবং মিজানুর রহমান রাজ এর শারীরিক অবস্থা নিয়েও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত।

তিনি বলেন, ‘আমি দলের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই- ধারাবাহিকভাবে আদালতের কাছে রিমান্ড আবেদন এবং আদালত কর্তৃক রিমান্ড জারি ও রিমান্ডে নিয়ে তরুণ নেতৃবৃন্দের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় প্রতিটি আঘাতই প্রত্যাঘাত হয়ে কোনও না কোনও দিন আপনাদের কাছে ফিরে যাবে, এটাই হচ্ছে প্রকৃতির প্রতিশোধ। সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ’র বিচার থেকেও আপনারা রেহাই পাবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘হত্যা আর ঘাতকের মাঝখানে এখন বিএনপিসহ বিরোধী দলের মানুষদের জীবনযাপন করতে হচ্ছে। অত্যাচার-নিপীড়ন-লুণ্ঠনের প্রতিনিয়ত সম্প্রসারণ হচ্ছে। নির্বিচার নিপীড়নে নারীরা লাঞ্ছিত হচ্ছে। শিশুরা পিতৃমাতৃহীন হয়ে পড়ছে। দেশের প্রতিটি মানুষই পুলিশি নজরদারির মধ্যে রয়েছে, যেন কেউ সরকারবিরোধী আওয়াজ তুলতে না পারে। এটিই হচ্ছে অভিশপ্ত দুঃশাসনের নাৎসিবাদী দৃষ্টান্ত।’

রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশে বহু ক্ষতির জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ। সরকারের অত্যাচারে মানুষের মধ্যে ধুমায়িত বহ্নির উত্তাপ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপ্রতিরোধ্য জনগণ ক্রমান্বয়ে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হচ্ছে।ক্ষিপ্রগতি হ্রেষাধ্বনি যেমন শত্রুর বক্ষে কম্পন তোলে ঠিক তেমনি জাতীয়তাবাদী শক্তির তরুণরা দুর্ধর্ষ ক্রোধে জ্বলে উঠছে, অভিশপ্ত এই দুঃশাসনকে শিকড়সহ উপড়ে ফেলার জন্য।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ প্রমুখ।

পিএনএস/আলআমীন