নির্বাচন ঘিরে আ’লীগের ব্যাপক পরিকল্পনা

  22-03-2018 08:54AM

পিএনএস ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ ব্যাপক পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে। ২০১৮ সালকে এরই মধ্যে নির্বাচনী বছর ঘোষণা করে সব পরিকল্পনা সাজিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এর মধ্যে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি, কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফর, দলীয় প্রধানের বিভাগীয় শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরে সফর ও জনসভা, কোন্দলপূর্ণ সাংগঠনিক জেলার নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডেকে এনে বিরোধ মেটানো, এলাকার মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির-গির্জা, কালভার্ট ও সড়কের মেরামত ও নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন, দলীয় এমপিদের পছন্দমতো গ্রামে গভীর নলকূপ স্থাপন, জনগণকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার উপকরণ সামগ্রী অনুদান দেয়াসহ প্রভৃতি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে দলটি।

এ ছাড়াও আসনভিত্তিক এলাকার মানুষের চাহিদানুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নানা প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। এমনকি দল ও সরকারের পক্ষ থেকে বছরের শুরুতে যে কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে এবং আগামীতে যে কর্মসূচি নেয়া হবে তাও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে। আর এসব পরিকল্পনার মূল টার্গেট হলো নির্বাচনের আগে যেকোনোভাবে জনগণকে আস্থায় এনে নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করা। দলীয় সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে জিততে হলে জনগণের কাছে যাওয়ার বিকল্প নেই। জনগণের মন জয় করতে পারলেই কেবল আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে পারবে। আর জনগণের মন পেতে হলে দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি এলাকার মানুষ কী চায় সে বিষয়টাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। নির্বাচনের আগে স্থানীয় জনগণের কী কী চাহিদা আছে তা নির্ণয় করে তা পূরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগ পর্যন্ত এসব পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে। নেতাদের মতে, অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট ও নতুন সেতু নির্মাণ, বিদ্যুৎ সংযোগসহ প্রভৃতি কর্মসূচির মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে। আবার অনেক এলাকা অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে।

সেগুলোও কেন্দ্র থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। স্থানীয় এমপিদের মাধ্যমে সেটা পুরোন করার চেষ্টা চলছে। বড় বড় প্রকল্প সরকারিভাবে দলীয় এমপি-মন্ত্রীরা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছেন, যা জনগণের মনকে আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর স্থানীয় দলীয় কর্মসূচি সেখানকার নেতাকর্মীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখভাল করছেন।

জানা গেছে, গত ৩০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটে জনসভার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি বরিশাল, ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী ও ৪ মার্চ খুলনায় নির্বাচনী জনসভা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জে যান। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে যশোরেও জনসভায় অংশ নিয়ে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়ার মাধ্যমে অঘোষিতভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন আওয়ামী লীগ প্রধান। গতকাল চট্টগ্রামের পটিয়ায় অ জনসভায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ২৯ মার্চ ঠাকুরগাঁও, ১ এপ্রিল চাঁদপুর, ৫ এপ্রিল ময়মনসিংহ সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।

এরপর গাজীপুর, রংপুর ও কক্সবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহর সফর করবেন তিনি। বছরের প্রথম থেকেই মাস্টার প্লানের প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের। এর অংশ হিসেবে এলাকায় এলাকায় ব্যাপক ভিত্তিতে সভা সমাবেশ ও জনসংযোগ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা-মন্ত্রীদের পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও এলাকায় গিয়ে একযোগে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কাজ করছেন। গত ২৬ জানুয়ারি শুরু হয়েছে দলের সাংগঠনিক সফর। এই সফরের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময়, সভা-সমাবেশসহ ব্যাপকভাবে গণসংযোগ করা হচ্ছে।

দলীয় সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বর থেকেই নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম শুরু হবে। এর আগে দলকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উপযোগী করে তুলতে যা যা করণীয় তা নির্ধারণ করা হচ্ছে এবং সেই অনুযায়ী কেন্দ্রীয় নেতারা দৌড়ঝাপ দিচ্ছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে পরামর্শ করে আগামী নির্বাচনে জনপ্রিয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের একাধিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে একাধিকবার মাঠ জরিপ করেছেন। নির্বাচনের আগে যাচাই বাছাই করে দলীয় মনোনয়ন বোর্ড এমপি প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবেন।

সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করা হবে এবং পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রের নির্দেশে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি এলাকাভিত্তিক সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। তারই অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ ১০০টি নির্বাচনী টিম গঠন করে কাজ করছে। সরকারের উন্নয়নচিত্র সম্পর্কে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বিস্তারিত ধারণা ভোটারদের সামনে উপস্থাপন করাই হবে মাস্টারপ্লানের অন্যতম দিক। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসনামলের বিভিন্ন তুলনামূলক চিত্রও নির্বাচনের আগে তুলে ধরা হবে।

সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরতে এবার নির্বাচনের আগে ডিজিটাল প্রচারণা চালানোর জন্য কাজ করছে দলটির প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে কিছু ইনোভেটিব আইডিয়া নিয়ে মাঠে নামবে দলটি। তা ছাড়া সরকারবিরোধী সম্ভাব্য আন্দোলন মোকাবেলায় দলের নেতাকর্মীদেরও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে কোনোভাবেই এবার আন্দোলন চাঙ্গা করার জন্য মাঠে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে চায় না আওয়ামী লীগ।

এ জন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পাশাপাশি দলীয়ভাবেও আগেভাগে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জেলায় জনসভা করার পাশাপাশি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেও সাধারণ জনগণ ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথেও মতবিনিময় করবেন। নেতাকর্মীরা যাতে কোনো ধরনের বিভ্রান্তিতে না পড়ে সেজন্য দলীয় প্রধানের পক্ষ থেকে জেলা আওয়ামী লীগকে সুনির্দিষ্ট বার্তা দেয়া হবে। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে জোটকে শক্তিশালী ও সক্রিয় করা, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোকে মূল দলের সাথে সংযুক্ত করার পাশাপাশি নির্বাচনী কার্যক্রম ভাগ করে দিয়ে পৃথকভাবে মাঠে নামার জন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।

আওয়ামী লীগের অন্যতম মুখপাত্র ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সারা দেশে দলীয়ভাবে নির্বাচনী কাজ চলছে। কেন্দ্রীয় নেতারা সাংগঠনিক সফর শুরু করেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইনসহ চারটি মাধ্যমে আমরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাব। ইতোমধ্যে এসবের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তা ছাড়া নির্বাচন কেন্দ্রিক কিছু ইনোভেটিব পরিকল্পনা রয়েছে। আপাতত সেগুলো প্রকাশ করতে চাই না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: আব্দুর রহমান বলেন, নির্বাচনী প্রস্তুতি আমাদের সব সময় আছে। নির্বাচনী কার্যক্রমও পুরোদমে চলছে। তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে সভা-সমাবেশ ও জনসভা, গণসংযোগ, কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন, তৃণমূলকে সুসংহত ও গতিশীল করা, নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময়সহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। অর্থ্যাৎ একটি দল নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য যে ধরনের তৎপরতা ও কার্যক্রম থাকা দরকার আমরা তার সবই সম্পন্ন করছি। আমরা আশা করি, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশের জনগণ আগামী নির্বাচনে আবারো নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে আমরা এলাকার মানুষের কাছে যাচ্ছি, নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করছি, মতবিনিময় করছি। ওয়ার্ডভিত্তিক কর্মী সভা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ ও জনসভা হচ্ছে। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসবে আমাদের কার্যক্রমের গতি তত বৃদ্ধি পাবে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন