‘পতন কিন্তু বলে কয়ে আসে না’

  22-03-2018 01:44PM


পিএনএস ডেস্ক: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, উন্নয়নের নামে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে জিম্মি করে আওয়ামী লীগের যেকোন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে বাধ্য করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে গণতন্ত্র স্বরবিদ্ধ, সুশাসন আওয়ামী চাকায় পিষ্ট। এই গণতন্ত্রহীণ দেশে লুটপাটের নামে জনগণের টাকা আত্মসাৎকে এরা উন্নয়ন বলছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় খরচে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করছেন, নৌকায় ভোট চাচ্ছেন। সরকারী কর্মচারীদেরকে যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, এসব হচ্ছে নির্বাচনী আচরণবিধির সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। ইলেকশন কমিশন এসব দেখেও না দেখার ভান করে বরং সরকারকে সহযোগিতা করছে। সরকারের আজকের কর্মসূচি এক বিকৃত তামাশা। গোটা ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট অচল হয়ে গেছে, জনজীবন হয়ে গেছে সম্পূর্ণভাবে স্থবির, ঘন্টার পর ঘন্টা মানুষ রাস্তায় আটকা পড়ে আছে।

সরকার বলছে-জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এমন কোনো কর্মসূচি করতে দেয়া হবে না, অথচ উল্টো সরকারই জনদুর্ভোগ সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। সত্যি আমরা আজব দেশে বাস করছি যা শামসুর রহমানের একটি কবিতা মনে পড়লো-আজব দেশের ধন্য রাজা, দেশজোড়া তার নাম, বসলে বলে হাটরে তোরা, চললে বলেন-থাম, থাম, থাম, থাম। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব বলেন।

তিনি বলেন, আবারো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর মতো প্রহসণের নির্বাচন করা সম্ভব হবে না ভেবেই বর্তমান শাসকগোষ্ঠী এখন সবকিছুতেই বেপরোয়া হয়ে জনগণকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে একটা গভীর ও সুদুরপ্রসারী নীল নকশা বাস্তবায়নে দ্রুততার সাথে পা ফেলছে। কিন্তু সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই-আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত করতে আপনারা বাধ্য হবেন, আপনাদের সকল চক্রান্ত ও নীল নকশা জনগণের সম্মিলিত শক্তির অভিযাত্রায় প্রতিহত করা হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ষড়যন্ত্রমুলকভাবে কারাবন্দী রেখে বিএনপিবিহীন নির্বাচন করার খায়েশ কখনোই পূরণ করতে পারবেন না। বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচনই অনুষ্ঠিত হবে না।

রিজভী বলেন, বেগম জিয়া ন্যায়বিচার পাননি। দেশের নাগরিক হিসেবে বেগম জিয়াকে ন্যায্য-বিচার-প্রক্রিয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিচার বিভাগকে অবশ্যই সরকারের প্রভাবমুক্ত হতে হবে। আদালত নিরপেক্ষ না হলে দেশের নাগরিকবৃন্দ নিজেদের ডিফেন্ড করতে পারবে না, তখন বিচারের বাণী সরকারের বাণীতে পরিণত হবে।

তিনি বলেন, দেশের জনগণের সমর্থন না থাকায় আওয়ামী লীগ দিশেহারা হয়ে বিভিন্ন দেশে দেশে লবিং করতে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং বেশ কয়েকটি দেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে। গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনতো দেশে বিদেশে কোথাও গ্রহনযোগ্যতা পায়নি. তাই বিদেশী বন্ধুরা তাদের প্রশ্ন করছেন আগামী নির্বাচন কি আবারো ভোটারবিহীন হবে, নাকি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সকল দলের অংশগ্রহনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে? যুক্তরাজ্য ও জেনেভায় আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীরা কিভাবে অপদস্ত হয়েছেন তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাই বলতে চাই-কোনো চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগ সফল হবে না। বরং দেশে-বিদেশে তারা ধিকৃতই হবে। সকল চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।

রিজভী বলেন, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়ার রহমান বীর উত্তম এর নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার। যে উদ্দেশ্যে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এর নাম পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁর নামফলক, ম্যুরাল ভেঙ্গে ফেলা এবং ক্যান্টনমেন্টের বাড়ী থেকে বেগম জিয়াকে উৎখাত করা হয়েছে। আর এখন জিয়া শিশু পার্কের নামও মুছে ফেলার চক্রান্ত হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

অন্যের অর্জনকে যারা আত্মসাৎ করে তারাই হচ্ছে ডাকাত, তারাই হচ্ছে দখলদার। আর আওয়ামী লীগের স্বভাবধর্মই তো সন্ত্রাসের বাতাবরণে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা। অন্যায় আর পাপের সাগরে ডুবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি কী ভেবেছেন চিরদিন রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখবেন ? আপনার অবৈধ ক্ষমতার মখমলের চেয়ারের চারপায়ে যে উইপোকা ধরেছে সেটি আপনি টের পাচ্ছেন না। পতন কিন্তু বলে কয়ে আসে না। উত্তরের কালবৈশাখী ঝড়ের মতো কখন যে সেই গদি উল্টে যাবে তা অনুধাবণ করতে পারছেন না।

সরকার শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার ঘৃন্য উদ্যোগ নিলেও জাতির হৃদয় থেকে মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলা যাবে না। তিনি আছেন থাকবেন যুগযুগ ধরে কোটি কোটি মানুষের অন্তরে। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে সরকারের এধরণের উদ্যোগকে ধিক্কার জানাচ্ছি, নিন্দা জানাচ্ছি এবং তীব্র প্রতিবাদ করছি। এধরণের প্রতিহিংসার উদ্যোগ থেকে সরকারকে সরে আসারও আহবান জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, শামসুল আলম তোফা, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।


পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন