এশা’র ইস্যুতে ছাত্রলীগের ২৪ জন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার

  17-04-2018 02:34AM

পিএনএস ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে পদে পুনর্বহালের পর এবার তাকে লাঞ্ছনার ঘটনায় কেন্দ্রীয় নেত্রীসহ হলের ২৪ জনকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের মধ্যে ১৬ জনই হল কমিটির সদস্য।

বহিষ্কৃতদের মধ্যে সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি মোর্শেদা খানমও রয়েছেন। মোর্শেদার রগ কেটে দেয়ার গুজব ছড়িয়েই এশাকে আপত্তিকর সাজা দেয়া হয়েছিল। পরে এই ঘটনায় ছাত্রলীগ তদন্ত কমিটি করলে মোর্শদা সেই কমিটিকে সহযোগিতা করেননি। তার পরিবারও কোনো সহযোগিতা করেননি।

এশার বিরুদ্ধে হলে কোটা আন্দোলনে যোগ দেয়া ছাত্রীদের মারধর এবং মোর্শেদার রগ কেটে দেয়ার গুজব ছড়িয়ে তাকে আপত্তিকর সাজা দিয়ে হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। আর এই ঘটনার ছয় দিন পর সোমবার রাতে ছাত্রলীগের এক বিজ্ঞপ্তিতে ২৪ জনকে বহিষ্কারের এই আদেশ দেয়ার কথা জানানো হয়।

গত ১০ এপ্রিল দিবাগত গভীর রাতে হলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেয়া ছাত্রীদেরকে মারধরের অভিযোগ উঠে। আর তার কক্ষে মোর্শেদার সঙ্গে বাদানুবাদ হয় ওই রাতে এবং এই ছাত্রলীগ নেত্রীর পা কেটে যায় ঘটনাচক্রে।

কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয় মোর্শেদার পায়ের রগ কেটে দিয়েছেন এশা। আর মূলধারার গণমাধ্যমগুলোও এই খবর যাচাই না করেই প্রচার করে।

আর এই ঘটনা প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্রী এশাকে তাৎক্ষণিক বহিষ্কার করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কার করা হয়।

পরে জানা যায়, রগ কাটার প্রচার নিতান্তই গুজব। মোর্শেদা কাঁচের জানলায় লাথি মারার পর তার পা কেটে যায়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে ছিল না ছাত্রলীগ। তবে সংগঠনের অবস্থানের বাইরে গিয়ে মোর্শেদা কোটা এই আন্দোলনের অংশ নেন। আর এ কারণে এশা তাকে ডেকে নিয়ে গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ আছে।

আর মোর্শেদার রগ কাটার এই গুজব ছড়ানোর পর ছেলেদের বিভিন্ন হল থেকে কয়েক হাজার ছাত্র সুফিয়া কামাল হলে গিয়ে বিক্ষোভ করে। আর হলের ভেতরেও মেয়েরা তাকে ঘিরে ধরে লাঞ্ছনা করে।

পরে এশাকে আপত্তিকর সাজা দিয়ে হল থেকে বের করে দেয়া হয়। এ সময় তার জামা ধরেও টানাটানি করে কয়েকজন ছেলে। তাকে জুতার মালা পড়িয়ে এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

এই ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর তীব্র সমালোচনা তৈরি হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এশার বিরুদ্ধে ছাত্রী নিপীড়নের অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে তার সাজা হবে। কিন্তু এভাবে আপত্তিকর সাজা কখনও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
পরে ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়া পর গত ১৩ এপ্রিল এশার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়। আগের দিনই অবশ্য তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে হলে তোলা হয়।

এর আগে ১১ এপ্রিল এর মধ্যে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার এক কমিটি করা হয়। চার সদস্যের এই কমিটিতে ছিলেন ছাত্রলীগের দুই সহ-সভাপতি নুসরাত জাহান নুপুর ও নিশীতা ইকবাল নন্দী, এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স।

দন্ত কমিটির সদস্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নিশীতা ইকবাল নদী জানান, তারা মোর্শেদার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তিনি কোনো সহযোগিতা করেননি। ছাত্রলীগের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘১০ এপ্রিল রাতে সুফিয়া কামাল হলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় জড়িত থাকার কারণে তাদের স্থায়ীভাবে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হলো।’

বহিষ্কৃতরা হলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক খালেদা হোসেন মুন, সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মোর্শেদা খানম, আতিকা আল স্বর্ণা, মিরা, সাংগাঠনিক সম্পাদক জান্নাতী আক্তার সুমি, সহ-সম্পাদক শ্রাবণী, যুগ্ম সাধরাণ সম্পাদক শারমিন আক্তার এবং উপ তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক আশা ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের লিজা ও মিতিলা নুসরাত চৈতী, সঙ্গীত বিভাগের সোনম সীতি, প্রভা ও প্রিয়াংকা দে, চারুকলার সুদীপ্তি মণ্ডল ও অনামিকা দাশ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শারমিন সুলতানা, উর্দুর মিতু, ভূতত্ত্বের শিলা ও জাকিয়া, দুযোহ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মনিরা ও রুনা, শান্তি ও সংঘর্ষের জুই, বাংলা বিভাগের তানজিলা ও সমাজকল্যাণের তাজকেও স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও সুফিয়া কামাল হলের ঘটনায় করা তদন্ত কমিটির সদস্য নীশিতা ইকবাল নদী বলেন, ‘আমরা হলের সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলেছি। তাদের কথার ভিত্তিতে আমরা এই ২৪ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।’

ঘটনার মূল হোতার বিষয়ে জানতে চাইলে নদী বলেন, ‘মুনই এই ঘটনার মূল হোতা, তাই আমরা তাকেও সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছি।’

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন