মান্নান কেন মাঠে নেই?

  27-04-2018 09:44AM


পিএনএস ডেস্ক: গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীরা গণসংযোগ আর বৈঠকের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার ব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন। গণসংযোগ ও প্রচারের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে সে অনুযায়ী ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকেরা দিনভর গণসংযোগ করে বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়িয়েছেন। প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকেরা স্থানীয় নানা সমস্যা তুলে ধরে সেগুলোর সমাধানসহ এ সিটি করপোরেশনকে উন্নয়নের নানা পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কথা বলে ভোটারদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারাও। প্রতীক বরাদ্দের তৃতীয় দিন গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থনে মাঠে নেমেছেন ওই পদে দলের মনোনয়নবঞ্চিত গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান। তবে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের সাথে মেয়র পদে দলের মনোনয়নবঞ্চিত বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান ছিলেন অনুপস্থিত। তিনি অসুস্থ থাকায় এখন পর্যন্ত ভোটের মাঠে নামতে পারেননি বলে বিএনপির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে অংশগ্রহণের জন্য দলীয় মনোনয়ন চান গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু ওই পদে জাহাঙ্গীর আলমকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে গত দুই দিন জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানের উপস্থিতি দেখা যায়নি। এ নিয়ে নানা গুজবের সৃষ্টি হয়। অবশেষে বৃহস্পতিবার দলীয় প্রার্থীর সাথে গণসংযোগে নামেন আজমত উল্লাহ খান। দুই নেতাকে একসাথে নির্বাচনী প্রচারণায় দেখতে পেয়ে গণসংযোগে অংশ নেয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। এ সময় উৎফুল্ল নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে দলীয় মেয়র প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের সাথে নিয়ে আজমত উল্লাহ খান কুনিয়া বড়বাড়ি, খাইলকৈরসহ কয়েকটি এলাকায় গণসংযোগ করেন।

গণসংযোগকালে বড়বাড়ি এলাকার জয়বাংলা সড়ক এলাকায় অনুষ্ঠিত পথসভায় বক্তৃতাকালে অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান বলেন, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে সব নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি। আমাদের এই বিশাল মিছিলই বলে দেয় আগামী ১৫ মে জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত। নৌকা তথা অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমকে বিজয়ী করতে আমরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি আছি।

পরে দক্ষিণ খাইলকুর বাহার মার্কেটের সামনে অনুষ্ঠিত অপর একটি পথসভায়ও বক্তব্য রাখেন তিনি। এ সময় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহমেদ, মহিউদ্দিন মহি, এস এম মোকসেদ আলমসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম তার ছয়দানার বাসভবনের সামনে জাতীয় পার্টি গাজীপুর মহানগর শাখার নেতৃবৃন্দদের সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ জাহাঙ্গীর আলমকে নৌকা প্রতীকের পক্ষে সমর্থন দেন। মতবিনিময় সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুস সাত্তার মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক নিজাম উদ্দিন সরকার, মো: শরিফুল ইসলাম, মো: ফারুকুল ইসলাম, মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো: জয়নাল আবেদীন, সহসভাপতি ফারুক খান উপস্থিত ছিলেন।

অপর দিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান উদ্দিন সরকার এবং বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান। হাসান উদ্দিন সরকারকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে গত তিন দিনেও বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থীর সাথে দলের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত অধ্যাপক এম এ মান্নানের সরব উপস্থিতি দেখা যায়নি। এ নিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকসহ স্থানীয়দের মধ্যে নানা গুজবের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের ব্যক্তিগত সহকারী কিবরিয়া হাসান জনি বলেন, অধ্যাপক এম এ মান্নান শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় এখন পর্যন্ত তিনি আমাদের সাথে ভোটের মাঠে নামতে পারেননি। তবে আমরা তাকে প্রত্যাশা করছি।

গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন বলেন, অধ্যাপক এম এ মান্নান ভোটের প্রচারণায় নামার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। তবে তার শারীরিক অবস্থা ভালো না। তা ছাড়া তিনি এখনো গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বহাল রয়েছেন। প্রচারণার ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা রয়েছে কি না তা আমাদের দেখতে হবে।

এ দিন টঙ্গীর এরশাদনগর, আউচপাড়া মোক্তার বাড়ি রোড, দেওড়া, মুদাফা পূর্বপাড়া, ভাদাম, তিলরাগাতি, গুটিয়া মেডিক্যাল মার্কেট, সাতাইশ চৌরাস্তা, খরতৈল মনসুর আলী মাতবর স্কুল মাঠ, গাজীপুরা ও খাঁপাড়া এলাকায় গণসংযোগ করেছেন বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। এসব গণসংযোগে হাসান সরকারের সাথে ছিলেন, টঙ্গী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম শুক্কুর, সাবেক টঙ্গী পৌরসভার প্যানেল মেয়র আবুল হোসেন, গাজীপুর জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি প্রভাষক বসির উদ্দিন এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার বিএনপি ও শরিক দলের নেতারা।

গণসংযোগকালে হাসান উদ্দিন সরকার টঙ্গী পৌরসভা, জেলা পরিষদ ও সংসদ সদস্যের দায়িত্বে থাকাকালে বিগত দিনে এলাকাবাসীর জন্য কী কী কাজ করেছেন তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে নির্বাচনে ভোট প্রার্থনা করেন। দীর্ঘদিন পর প্রিয় নেতা হাসান উদ্দিন সরকারকে কাছে পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে অনেককে আবেগে কাঁদতে দেখা গেছে। হাসান সরকারও অনেক দিন পর অনেকের সাথে সাাৎ করেন। তিনি এলাকার মুরব্বিদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।

হাসান উদ্দিন সরকারের গণসংযোগ
টঙ্গী সংবাদদাতা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার টঙ্গীর এরশাদ নগর, আউচপাড়া, মোক্তারবাড়ি রোড, দেওড়া, মুদাফা পূর্বপাড়া, ভাদাম, তিলরাগাতি, গুটিয়া মেডিক্যাল মার্কেট, সাতাইশ চৌরাস্তা, খরতৈল মনসুর আলী মাতবর স্কুল মাঠ, গাজীপুরা ও খাঁপাড়া এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করেন ২০ দলীয় মেয়রপ্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার। এসব গণসংযোগে হাসান সরকারের সাথে ছিলেন, টঙ্গী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম শুক্কুর, সাবেক টঙ্গী পৌরসভার প্যানেল মেয়র আবুল হোসেন, গাজীপুর জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি প্রভাষক বসির উদ্দিন এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার বিএনপি ও শরিক দলের নেতারা। এসব গণসংযোগে হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার লক্ষ করা গেছে। মানুষের ভিড় ঠেলে হাসান সরকারকে সামনে অগ্রসর হতে দেখা গেছে। এ সময় হাসান সরকার টঙ্গী পৌরসভা, জেলা পরিষদ ও সংসদ সদস্যের দায়িত্বে থাকাকালে বিগত দিনে এলাকাবাসীর জন্য কী কী কাজ করেছেন তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভোট চান। এলাকার প্রবীণেরা হাসান সরকারকে কাছে পেয়ে অনেকে জড়িয়ে ধরে আবেগে কেঁদে ফেলেন। প্রতিটি এলাকায়ই জনসংযোগকালে এমন আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। হাসান সরকারও অনেক দিন পর অনেকের সাথে তৃপ্তিভরে সাক্ষাৎ করেন। আবেগপূর্ণ সাক্ষাৎকালে তিনি ভোট চাওয়ার কথা ভুলে গিয়ে এলাকার মুরব্বিদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।

আ’লীগের মেয়রপ্রার্থীর ক্যাম্প উচ্ছেদ
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী জোনের অফিসের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঘেঁষে ফুটপাথের উপর স্থাপিত আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী মো: জাহাঙ্গীর আলমের নির্বাচনী ক্যাম্প গতকাল বিকেলে উচ্ছেদ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্বাচন কমিশন পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতটি নেতৃত্ব দেন গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা শাহরীন মাধবী।

নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: রাকিব উজ্জামান রেণু জানান, আমাদের কোনো অনুমতি না নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থীর লোকজন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঘেষে ফুটপথের উপর মিডিয়া সেলের নামে নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করে। এ কারণে ওইপথে এলাকাবাসী তথা পথচারীদের চলাচলে দুর্ভোগ হওয়ার খবর পাই। এ ঘটনায় তার এক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লিখিত আবেদন পাওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তার নির্দেশে তদন্ত করা হয় এবং বৃহস্পতিবার বিকেলে তা উচ্ছেদ করা হয়।

সিটি নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপির কিপ সং
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনের প্রচারণায় কিপ সং তৈরি করেছে বিএনপি। গতকাল থেকে গাজীপুর সিটিতে এই কিপ সং পরিবেশন করা হচ্ছে। কিপ সং-এর কথা হচ্ছে- ‘সময়ের সাথে মিলে এক পথে, দলবেঁধে চল যাই ভোট দেই ধানের শীষে, জিতবে মা খালেদা জিয়া, বিজয় হবে গণতন্ত্রের...’। এই গানটি আজকে খুলনা সিটিতে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় কাজে লাগানো হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারও একটি নির্বাচনী গান লিখেছেন। সেটিও পরিবেশন করা হবে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন