কেসিসি নির্বাচন: ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করছে বিএনপি

  19-05-2018 08:37AM


পিএনএস ডেস্ক: খুলনা সিটি নির্বাচনে ইসি, সরকারি দল ও প্রশাসনের ভূমিকা পর্যালোচনা করছে বিএনপি। দলটির মেয়রপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পরাজয়ের নেপথ্যে সাংগঠনিক দুর্বলতা আছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছে, খুলনা সিটি নির্বাচনে পুলিশ প্রশাসনের একপক্ষীয় ভূমিকাই ছিল মূলত সুষ্ঠু ভোটের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। শীর্ষ নেতাদের মতে, নগরীতে প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে টানা গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে নির্বাচনের মাঠ অসমতল করে ফেলা হয়। এর ফলে বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন।

পাশাপাশি সরকারি দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনের আগের রাতে এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়ে আসায়, নির্বাচনে প্রভাব পড়েছে। কেন্দ্রভিত্তিক যে স্বাভাবিক তৎপরতা তা বিএনপির নেতাকর্মীরা দেখাতে পারেননি। আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের কথায়ও তা স্পষ্ট। তিনি ভোটের পরপরই প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, বিএনপি ভোটের সময় মাঠে ছিল না। এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। খুসিক নির্বাচনের রশি অনেক ক্ষেত্রেই ইসির বাইরে ছিল বলে বিএনপি নেতাদের পর্যালোচনায় উঠে এসেছে।

বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, খুলনা সিটিতে ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের নতুন মডেল’ থেকে তারা ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করবেন। আগামীতে যেসব সিটি নির্বাচন রয়েছে, খুলনার নির্বাচন অভিজ্ঞতা থেকে সেগুলো মোকাবেলা করা হবে। একই সাথে বর্তমান সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া যে সম্ভব নয়, সেদিকে তারা আরো কঠোরভাবে আলোকপাত করবেন।

ঐতিহ্যগতভাবে বিএনপি প্রভাবিত এলাকা হিসেবে পরিচিত খুলনায় আওয়ামী লীগকে বিএনপি ভালোভাবে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে এমন আশা নিয়ে অনেকে এ নির্বাচনের দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছিলেন। কিন্তু এ নির্বাচনের ইতি হয়েছে খুবই একপেশেভাবে। বিশেষ করে নির্বাচনের দিন প্রশাসন ও ইসির ভূমিকায় বিএনপির সর্বত্র এক ধরনের হতাশা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

খুলনায় গেল মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ শুরুর ঘণ্টা দুয়েক পর থেকেই নগরবাসীর মধ্যে ফলাফল সম্পর্কে একটা ধারণা হয়ে যায়। জাল-জালিয়াতি, প্রকাশ্যে সিল মারাসহ নানা অনিয়মের খবর আসতে থাকে। দুপুরের পর দৃশ্যপট আরো পাল্টে যায়। সব কিছু একতরফাভাবে হচ্ছে, এমন চিত্রই ফুটে ওঠে। ভোটের পরিবেশ দৃশ্যত শান্তিপূর্ণ থাকলেও বিস্তর অনিয়মের খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

বিএনপির স্থানীয় নেতারা বলেছেন, নির্বাচনের দিন আওয়ামী লীগের তিনটি কৌশল ছিল। এক. বিএনপি নেতাকর্মীদের কেন্দ্রমুখী হতে না দেয়া। দুই. ভোটার উপস্থিতি যথাসম্ভব কম রাখা এবং পুরো সিটিতে অনিয়ম না করে সুনির্দিষ্ট কিছু কেন্দ্র বেছে নেয়া। বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেছেন, ওরা বিএনপির ভোট ব্যাংককে টার্গেট করেছে। অর্থাৎ যেসব কেন্দ্রে বিএনপির ভোট অনেক বেশি সেখানে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কাউকে দাঁড়াতে দেয়নি। মঞ্জু বলেন, ওয়ার্ড নম্বর ৩১, ৩০, ২৯, ২৭, ২৮, ২৬ থেকে শুরু করে ১৬ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত বিএনপির যে ভোট ব্যাংক রয়েছে, সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হানা দিয়েছে। তবে ইসি, প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের ভূমিকার বাইরেও নির্বাচনের মাঠে বিএনপির সাংগঠনিক চিত্র কেমন ছিল, তার খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

বিএনপি ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ও নির্বাচনে অংশ নিয়ে খুলনা সিটিতে বিজয়ী হয়। বিএনপির স্থানীয় নেতারা বলেছেন, ওই নির্বাচনে সবার প্রার্থী ছিলেন মনিরুজ্জামান মনি। মনি প্রার্থী হিসেবে পরিকল্পনা মাফিক গণসংযোগ ও অন্যান্য প্রচারণামূলক কাজগুলো করেছিলেন নির্ভারভাবে। আর নির্বাচন পরিচালনার পূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট প্রতিটি কাজ গুছিয়ে করছিলেন। একই সাথে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখা এবং তাদের পদক্ষেপের বিপরীতে নিজেদের করণীয় নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়ন করছিলেন। এবার সে জায়গাটায় বিএনপি ছিল একেবারে বিপরীত অবস্থায়। মঞ্জু নিজে প্রার্থী হয়ে এক দিকে প্রচারণা ও গণসংযোগ করেছেন, সেই সাথে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজও তাকে একহাতে সামলাতে হয়েছে। মেয়র থাকায় মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিও আইনের বাধার কারণে তেমন ভূমিকা নিতে পারেননি।

স্থানীয় নেতারা বলেছেন, নির্বাচনী কার্যক্রম শুরুর আগ থেকেই খুলনা বিএনপিতে ছিল সমন্বয়হীনতা। একসময়ের মাণিকজোড় নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা ছিলেন দুই মেরুর বাসিন্দা। মঞ্জু মহানগর সভাপতি ও মনা জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মনোনয়ন দাখিলের সময় কেন্দ্র থেকে দুইজনকে মিলমিশ করার একটি ব্যবস্থা করা হলেও এই পদক্ষেপে যে খুব কাজ হয়েছে তা মনে হয়নি। ভোটগ্রহণের দিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা খুবই সক্রিয় ছিল। পক্ষান্তরে বিএনপি নেতাকর্মীদের তেমন কোথাও নজরে পড়েনি।

স্থানীয় নেতারা বলেছেন, বিএনপির প্রার্থী মঞ্জু আর্থিকভাবে খুব সচ্ছল নন। এমনকি নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেও তাকে বেগ পেতে হয়। এ অবস্থায় এখনকার সময়ে নির্বাচনের মতো ব্যয়বহুল কাজ সম্পন্ন করা ছিল তার পক্ষে কঠিন। প্রচার প্রচারণার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত পুরুষ ও নারীকর্মী তালুকদার আবদুল খালেকের লিফলেট ভোটারদের হাতে পৌঁছে দিয়েছে। পক্ষান্তরে মঞ্জুকে এ কাজের জন্য শুধু দলীয় কর্মীদের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। পুলিশের গ্রেফতার অভিযান শুরুর পর কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে প্রচারাভিযান আর এগোয়নি।

জানা গেছে, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযানের ফলে খুলনা মহানগর ইউনিটের সাংগঠনিক নেটওয়ার্কও দুর্বল হয়ে পড়ে। নগর বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের সক্রিয় নেতারা গ্রেফতার হন। ফলে অনেক ইউনিট আর মাঠে কাজ করতে পারেনি। স্থানীয় বিএনপি এসব ঘাটতি পূরণে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

জানা গেছে, বিএনপির হাইকমান্ড সাংগঠনিক এসব দুর্বলতা খতিয়ে দেখছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচনের পুরো চিত্র পর্যবেক্ষণ করেছেন।

পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে সাংগঠনিক দুর্বলতার পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য শিগগিরই শীর্ষ নেতাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন তিনি।

খুলনা মহানগরের মাঠপর্যায়ের নেতারা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে সংগঠন গোছাতে হবে। নির্বাচনের মাঠে শক্তি দেখাতে না পারলে ফল ঘরে তোলা সম্ভব নয়। সূত্র: নয়া দিগন্ত


পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন