সমাবেশ শুরু

  20-07-2018 03:32PM


পিএনএস ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে এবং তার সাথে সরকারের অমানবিক আচরণের প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী আজ শুক্রবার ঢাকায় নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়েছে।

সমাবেশ উপলক্ষে ব্যাপক জনসমাগম ঘটেছে।

ঢকা মহানগর পুলিশ বলছে, ২৩টি শর্ত সাপেক্ষে বেলা ২টা থেকে বিকাল ৫টার মধ্যে বিএনপিকে ‘শান্তিপূর্ণ সমাবেশ’ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

এর আগে আজকের সমাবেশের জন্য গতকাল মৌখিক অনুমতি পায় বিএনপি। এ কথা জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল তিনি বলেন, শুক্রবার বেলা ৩টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ হবে। আমরা পুলিশের মৌখিক অনুমতি পেয়েছি। আশা করছি লিখিত অনুমতিও পেয়ে যাবো। রিজভী সমাবেশের ব্যাপারে বলেন, সব প্রস্তুতি আমরা আগে থেকে নিয়ে রেখেছি। সব অঙ্গসংগঠনেরও অনুরূপ প্রস্তুতি আছে।

এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া ও বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে গিয়েছিলেন। তবে তারা ডিএমপি কমিশনারের সাক্ষাৎ পাননি। আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, সোয়া ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কমিশনারের সাক্ষাৎ মেলেনি। তিনি বিভিন্ন মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। পরে আমাদের সমাবেশের অনুমতির বিষয়টি মৌখিকভাবে পুলিশ জানিয়েছে।

গত ১৫ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে সমাবেশের এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেদিন তিনি বলেন, দেশনেত্রীকে চিকিৎসা ও মুক্তি না দেয়া এবং তার সাথে অমানবিক আচরণ করার প্রতিবাদে শুক্রবার (২০ জুলাই) ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা ও উপজেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। ঢাকায় বেলা ৩টায় নয়াপল্টনে আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ আহ্বান করছি।

প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ আদালত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দিলে সেদিনই তিনি কারাবন্দী হন। তার মুক্তি দাবিতে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর বিএনপি বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান ও অনশন, গণস্বাক্ষর, স্মারকলিপি প্রদান, কালো পতাকা প্রদর্শন, লিফলেট বিতরণ এবং প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এর বাইরে বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় জাতিসঙ্ঘ, কমনওয়েলথ ও ইউরোপীয় কমিশনের সহায়তা চেয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে সাজা দেয়ার ঘটনাটিও অবহিত করা হয়েছে। এখন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি।

যেসব শর্তে অনুমতি
১. এই অনুমতি স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়। স্থান ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে।

২. বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচির কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

৩. স্বাভাবিক যান চলাচল নিশ্চিত করতে রাস্তা ব্যবহার করে কিংবা রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করা যাবে না।

৪. নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) রাখতে হবে।

৫. স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশ কর্মসূচির ভেতরে ও বাইরে উন্নত রেজুলেশনের সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে।

৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি প্রবেশ গেইটে আর্চওয়ে স্থাপন করতে হবে এবং সমাবেশ কর্মসূচিতে আগতদের মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেক করতে হবে।

৭. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভেহিকল স্ক্যানার/সার্চ মিররের মাধ্যমে কর্মসূচিস্থলে আসা সব যানবাহনে তল্লাশির ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কর্মসূচিস্থলে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৯. অনুমোদিত স্থানের বাইরে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।

১০. অনুমোদিত স্থানের বাইরে বা সড়কের পাশে ‘প্রজেকশন’ স্থাপন করা যাবে না।

১১. অনুমোদিত স্থানের বাইরে, রাস্তায় বা ফুটপাতে কোথাও লোক সমবেত হওয়া যাবে না।

১২. আজান, নামাজ বা অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।

১৩. অনুমোদিত সমাবেশ কর্মসূচি ছাড়া অন্য কোনো কাজে মঞ্চ ব্যবহার করা যাবে না।

১৪. আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থি, জনস্বার্থ, সরকার বা রাষ্ট্রবিরোধী এবং জননিরাপত্তা বিরোধী কার্যকলাপ করা যাবে না।

১৫. উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।

১৬. ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।

১৭. সমাবেশ কর্মসূচি শুরুর সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা আগে লোকজন কর্মসূচিস্থলে আসতে পারবে।

১৮. বিকাল ৫টার মধ্যে কর্মসূচির যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করতে হবে।

১৯. অনুমোদিত সময়ের আগে কিংবা পরে অনুমোদিত স্থানের আশপাশসহ রাস্তায় কোনো অবস্থাতেই সমবেত হওয়া বা যান ও জন চলাচলে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।

২০. কোনা ধরনের লাঠি-সোঁটা বা ব্যানার, ফেস্টুনের আড়ালে লাঠি, রড বহন করা যাবে না।

২১. মিছিল করে সমাবেশস্থলে যাওয়া যাবে না।

২২. এসব শর্ত যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতি বাতিল বলে গণ্য হবে।

২৩. কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই অনুমতির আদেশ বাতিল করতে পারে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন