বহিস্কৃত নেতাদের ফেরাতে উদ্যোগ বিএনপির

  19-08-2018 08:31AM


পিএনএস ডেস্ক: দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে শিগগিরই আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে দল থেকে বহিস্কৃত নেতাদেরও ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে দলের বাইরে থাকা শতাধিক নেতার একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে। তার অনুমতি সাপেক্ষে বহিস্কৃত নেতাদের দলে ফেরানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবে দলের বহিস্কৃত ও নিষ্ফ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কয়েকবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তল্লাশির ঘটনায় অনেক তথ্য-উপাত্ত হারিয়ে গেছে। তাই সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জেলা, উপজেলা পর্যায়ে ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমে সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। বহিস্কৃত নেতাদের ফিরিয়ে এনে তাদের সমন্বয়ে দলকে শক্তিশালী করতে চান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারই নির্দেশনায় ২০০৮-১৮ সাল পর্যন্ত বহিস্কৃত নেতাদের নামের তালিকা তৈরি হচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর নেতৃত্বে এ কাজ চলছে।

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন, এরই মধ্যে শতাধিক বহিস্কৃত নেতার নামের তালিকা লন্ডনে পাঠানো হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের তালিকা প্রস্তুত করে পাঠানো হবে। এ তালিকায় বহিস্কৃত নেতাদের নাম, পদবি, ঠিকানা, বহিস্কারের কারণ এবং বহিস্কারের নির্দেশদাতার নাম যুক্ত করা হয়েছে।

তালিকায় চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এম এ হান্নানের নাম রয়েছে। ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তাকে বহিস্কার করা হয়। এই আসনের সাবেক এমপি লায়ন হারুন অর রশীদের আপত্তির মুখে তার বহিস্কারাদেশ এখনও প্রত্যাহার হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মনিন্দ্র লাল ত্রিপুরা খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি। ২০১৪ সালের ২১ মার্চ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনিন্দ্র ছাড়াও বিএনপি নেতা আমিন শরীফকে বহিস্কার করা হয়। জেলা বিএনপি সভাপতির সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে তাদের এই বহিস্কারাদেশ এখনও প্রত্যাহার হয়নি। ২০১২ সালের ২৬ অক্টোবর বহিস্কৃত হন নাটোর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, আবদুল মান্নান, শহর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান ডিউক ও জেলা কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তফা নয়ন। এই বহিস্কারাদেশের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১২ নভেম্বর খালেদা জিয়াসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের ২১ নেতার নামে মামলাও করেন তারা। ঢাকা মহানগর জাসাস দক্ষিণের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদারকে ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই বহিস্কার করা হয়। জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে সম্পৃক্ত নেতাদের বাধার কারণে তাকে দলে ফেরানো যাচ্ছে না। পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিনবারের পৌর মেয়র কামরুল হাসান মিন্টুকে ২০০৯ সালে বহিস্কার করা হয়। খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসের বিরাগভাজন হওয়ায় তার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি। রাজশাহী উপজেলা বিএনপি নেতা হযরত আলী বহিস্কৃত রয়েছেন। তার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারে আপত্তি রয়েছে ব্যারিস্টার আমিনুল হকের।

একইভাবে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির রফিকুর রহমান, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির আবদুর রশিদ চেয়ারম্যান, আজগর আলী, ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মাসুদ রানা খান, টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল করিম অটল, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সহসভাপতি কেএমআই খলিল ছাড়াও আরও অনেক নেতাকর্মী বহিস্কৃত রয়েছেন। তাদের অনেককেই প্রভাবশালী নেতার রোষানলে পড়ে বহিস্কৃত হয়েছেন। দেনদরবার, লবিং এবং লিখিত আবেদন জমা দিয়েও বিগত দিনে তারা দলে ফিরতে পারেননি। বিভিন্ন সময়ে দল থেকে বহিস্কৃত নেতারা দলে ফেরার জন্য চেয়ারপারসন ও মহাসচিব বরারবর আবেদন করেছিলেন। কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কয়েক দফা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তল্লাশির সময়ে ওইসব আবেদন হারিয়ে যায়। তাই নতুন করে বহিস্কৃত নেতাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

এদিকে বিভিন্ন সময়ে দলের ওপর অভিমান করে নিষ্ফ্ক্রিয় হয়ে পড়া নেতাদেরও সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এমন নেতাদের নামের একটি তালিকাও প্রস্তুত হচ্ছে। আশি ও নব্বই দশকের সাবেক ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি এ তালিকায় আছে ১/১১-এর সংস্কারপন্থি নেতাদের নামও। বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়ে তাদের দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সূত্র: সমকাল

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন