কতোটা এগিয়েছে ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারকাজ

  22-08-2018 10:52AM

পিএনএস ডেস্ক : বাংলাদেশে বহুল আলোচিত ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা বলছেন, আগামী দু'মাসের মধ্যেই বিচারের রায় হতে পারে বলে তারা আশা করছেন।

তারা বলছেন, গত ১৪ বছরে এই মামলার কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ খুব একটা সহজ ছিল না।

২০০৪ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভেনিউতে তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগের সমাবেশে চালানো গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনা সহ তিন শতাধিক মানুষ।

দলের নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশেপাশে তার নেতাকর্মীরা ঘিরে থাকায় অল্পের জন্যে বেঁচে যান তিনি।

আহতদের অনেকেই এখনও শরীরের গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে দু:সহ জীবন যাপন করছেন। তাদেরই একজন স্বেচ্ছাসেবক লীগের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি মাহবুবা পারভিন।

ঘটনার দিন সমাবেশের অস্থায়ী মঞ্চটির কাছাকাছি ছিলেন তিনি। তিনি জানান তার সেই বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, "শেখ হাসিনা আপা জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলতে পারেননি। তখনই একটা বিকট শব্দ হয়। এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। তখন আমরা কেউ কাউকে দেখতে পারছিলাম না। শুধু চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম- বাঁচাও বাঁচাও।"

"আমি দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পড়ে যাই, সেন্স হারিয়ে ফেলি। পরে শুনেছি তখন নাকি আমার হার্ট অ্যাটাক হয়। অনেকে ভেবেছিল আমি মারা গিয়েছি। পরে আমাকে ব্যানারে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ৭২ ঘণ্টা আইসিইউতে ছিলাম। ২৫ দিন পর স্মৃতিশক্তি ফেরে।" বলেন মাহবুবা পারভিন।

হামলার পরদিন মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। তারপর জজ মিয়াসহ নানা নাটকীয়তার পর ২০০৮ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দায়ের করা হয়।

ওই বছরই মামলা দুটি স্থানান্তর করা হয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে।

পরের বছর অর্থাৎ ২০০৯ সাল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষ মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করেন।

আদালতের অনুমোদনের পর ২০১১ সালে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। গত বছর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুরু হয়, যা এখনও চলছে।

ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিশেষ এজলাসে সপ্তাহে তিন দিন করে মামলার কার্যক্রমটি চলছে।

বর্তমানে আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে।

শুরুতে মামলার মোট আসামি ৫২জন হলেও পরে তিনজনের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায়, তাদের এই তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়।

বর্তমানে আসামির সংখ্যা ৪৯জন। এর মধ্যে ১৮জন পলাতক ও ছয় জন জামিনে আছে।

মামলায় মোট সাক্ষী করা হয়েছে প্রায় ৫শ জনকে। এরমধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ২২৫ জনের সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে পেরেছেন।

অন্যদিকে আসামীপক্ষ থেকে হাজির করা হয়েছে ২০ জনকে।

সব সাক্ষ্য ও যুক্তি উপস্থাপনের ভিত্তিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ সব আসামির বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

দুই মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান মামলার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সৈয়দ রেজাউর রহমান।

তিনি বলেন, "আমরা রাষ্ট্রপক্ষ আগে যুক্তিতর্ক শেষ করি। তারপর আসামীপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়। বর্তমানে আসামি লুৎফু্জ্জামান বাবরের পক্ষে ২৭, ২৮ ও ২৯ তারিখ যুক্তিতর্ক চলবে। বাবর সাহেবের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে একদিন আইনি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবো।"

সেখানে রাষ্ট্রপক্ষ সকল আসামীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আদালতে আবেদন জানাবেন বলে জানান সৈয়দ রেজাউর রহমান।

তিনি বলেন, "রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনি যুক্তিতর্ক শেষ হলে আইনানুযায়ী ওই দিনে রায়ের তারিখ ঘোষণা করবেন আদালত। সেদিনই রায় এবং আদেশের দিন ধার্য হবে।"

তার প্রত্যাশা অচিরেই তারা দুটো মামলার রায় ও আদেশের তারিখ ধার্য করতে সক্ষম হবেন।

তবে মামলার এই দীর্ঘসূত্রিতার পেছনে সৈয়দ রেজাউর রহমান আসামীপক্ষের আইনজীবীর ধীরগতিকে দায়ী করেন।

তিনি বলেন, আসামীপক্ষের আইনজীবী মামলা দুটি পাঁচ বার উচ্চ আদালতে নিয়ে যাওয়ায় আদালতের ২৯২ কার্যদিবস ব্যয় হয়েছে। এছাড়া তারা যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে কালক্ষেপণ করেছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন বিএনপির সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদিন মেজবাহ।

তিনি বলেন, "এই মামলায় শুরুতে ৬১ জনের সাক্ষী নেয়ার পর অধিকতর তদন্তের আবেদন করা হয়। দ্বিতীয় রিপোর্ট আসা পর্যন্ত কয়েক বছর পেরিয়ে যায়। এছাড়া প্রত্যেকটা আসামীর পক্ষে আলাদা আলাদা আইনজীবী জেরা করছেন। রাষ্ট্রপক্ষ ২২৫ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। এটা অবশ্যই সময়সাপেক্ষ। সবই হয়েছে আইনানুগ প্রক্রিয়ায়। কোন কিছু সংক্ষিপ্ত করার কোন সুযোগ নেই। "

২১ আগস্ট হামলার ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই হামলায় বেঁচে ফেরা মাহবুবা পারভিনকে আজও অজস্র স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তির আশা তিনি একরকম ছেড়েই দিয়েছেন। তবে শিগগিরই মামলার রায় শুনবেন এমন আশায় দিন গুনছেন তিনি।-বিবিসি

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন