জামায়াত ৪৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়

  14-11-2018 11:37AM


পিএনএস ডেস্ক: সম্প্রতি রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। তাতে কী, সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, পিছিয়ে নেই তাদের নির্বাচনি কার্যক্রম। শক্ত অবস্থান নিয়ে মাঠে নামছে দলটির নেতাকর্মীরা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজধানীসহ সারা দেশের ৪৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায় জামায়াতে ইসলামী। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা-১৫ (কাফরুল-মিরপুর) আসনে নির্বাচন করতে চান।

ইতিমধ্যে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র তুলেছেন। এর বাইরে সারা দেশের আরও ৪২ জন জামায়াত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কিনেছেন।

এসব আসনে কোনো ছাড় দিতে চান না জামায়াত নেতারা। তবে আরও বেশ কিছু আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি জেনারেল ড. রেজাউল করিম বলেন, আমাদের দলের সেক্রেটারি জেনারেল ঢাকা-১৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চান।

এর আগে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সাব সেক্টর কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান। তিনিও ইন্তেকাল করেছেন। এই আসনে জামায়াতের সাবেক নেতা মীর কাশেম আলী নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন। নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে গেছেন।

এ কারণে আমাদের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিককে নির্বাচন করার জন্য দল থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কারণ ২০ দলীয় জোটের নেতা হিসেবে সার্বক্ষণিক তাকে ঢাকায় থাকতে হয়। এ বিষয়ে ২০ দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

জামায়াতের এই নীতিনির্ধারক আরও জানান, সারা দেশের ৪২টি আসনে জামায়াত নেতারা মনোনয়নপত্র কিনেছেন। ওইসব আসনে জোটগতভাবে নির্বাচন করার চেষ্টা করছেন তারা। না হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তারা নির্বাচন করবেন। তবে আসন সংখ্যা আরও ৮ থেকে ১০টি বাড়তে পারে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের প্রার্থীরা হলেন ঠাকুরগাঁও-২ (বালিয়াডাঙ্গী-হরিপুর) আসনে মাওলানা আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনে মাওলানা আবু হানিফ, দিনাজপুর-৪ (খানসামা-চিরিরবন্দর) আসনে মাওলানা আফতাব উদ্দিন মোল্লা, দিনাজপুর-৬ (নবাবগঞ্জ-বিরামপুর-হাকিমপুর ঘোড়াঘাট) আসনে আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-১ আসনে মাওলানা আবদুস সাত্তার।

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে অধ্যাপক মাজেদুর রহমান, গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী) আসনে মাওলানা নজরুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে ড. কেরামত আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে নুরুল ইসলাম বুলবুল, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, নাটোর-১ আসনে অধ্যাপক তাসনিম আলম, নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে খ. ম. আবদুর রাকিব।

সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া-সলঙ্গা) আসনে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, বগুড়া-৫ (শেরপুর ধুনট) আসনে দবিবুর রহমান। পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) আসনে ডা. আবদুল বাসেত, পাবনা-৪ (আটঘরিয়া-ঈশ্বরদী) আসনে অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল, পাবনা-৫ (সদর) আসনে অধ্যক্ষ ইকবাল হোসাইন, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে মুহাম্মদ আবদুল গফুর, চুয়াডাঙ্গা-২ (দামুড়হুদা-জীবননগর) আসনে মোহাম্মদ রুহুল আমিন।

ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসনে অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, যশোর-১ (শার্শা) আসনে মাওলানা আজিজুর রহমান, যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনে আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদত হোসাইন, যশোর-৫ আসনে গাজী এনামুল হক, যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে অধ্যাপক মুক্তার আলী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

এছাড়া বাগেরহাট-৩ (মোংলা-রামপাল) আসনে অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, খুলনা-৫ (ফুলতলা-ডুমুরিয়া) আসনে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-১ (কলারোয়া-তালা) আসনে অধ্যক্ষ ইজ্জতুল্লাহ, সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে মুহাদ্দিস আবদুল খালেক।

সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি-দেবহাটা) আসনে মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ (কালীগঞ্জ-শ্যামনগর) আসনে গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ (সদর-নাজিরপুর-স্বরূপকাঠি) আসনে শামীম সাঈদী।

পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে অধ্যাপক জসিম উদ্দিন, কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনে ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর-সদর আংশিক) আসনে মাস্টার রুহুল আমীন, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে ডা. আনোয়ারুল আজিম, ফেনী-৩ আসনে ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, চট্টগ্রাম-১০ (ডাবলমুরিং) আসনে শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া) আসনে মাওলানা শামসুল ইসলাম।

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) মাওলানা জহিরুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) আসনে হামিদুর রহমান আজাদ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এসব আসনে কোনোভাবেই ছাড় দিতে নারাজ জামায়াতের নীতিনির্ধারকরা।

উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ৭৬টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল। ওই নির্বাচনে দলটি ১০টি আসনে বিজয়ী হয়। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্র“য়ারি নির্বাচনে জামায়াত ১৮টি আসনে বিজয়ী হয়।

এই নির্বাচনে দলটি ২২২ জন প্রার্থী দিয়েছিল। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ৩টি আসনে জয়ী হয়। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে জামায়াত ১৭টি আসন পায়। মহিলা আসনগুলো থেকে ৪টি আসনে জয়ী হয় তারা।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ২টি আসনে বিজয়ী হয়। ওই নির্বাচনে দলটি জোটগতভাবে ৩৯টি ও ৪টিতে এককভাবে নির্বাচন করে।

গত ২৮ অক্টোবর রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাক্ষরিত এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, এতদিন ইসির হাতে পূর্ণাঙ্গ রায়ের কোনো কপি ছিল না। তাছাড়া বিষয়টি আপিল বিভাগে বিচারাধীন আছে। এখন আমরা রায়ের কপি পেয়েছি। একই সঙ্গে আমরা জেনেছি, আপিল বিভাগে বিচারাধীন থাকলেও হাইকোর্র্টের রায়ের ওপর আপিল বিভাগ কোনো স্থগিতাদেশ দেননি। সে জন্য ইসি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে।

ইসির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর আওতায় রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল। দলটির নিবন্ধন নম্বর ছিল ১৪।

২০০৯ সালে হাইকোর্টে দায়ের করা ৬৩০ নম্বর রিট পিটিশনের রায়ে আদালত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০এইচ ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হল।

২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। তবে তখন ইসি থেকে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।

তখন ইসি থেকে বলা হয়েছিল, বিষয়টি আপিল বিভাগে বিচারাধীন আছে। যে কারণে ইসি এ বিষয়ে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। তবে তখন ইসির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছিল, ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে।

১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনবার নিষিদ্ধ হয় জামায়াত। এর মধ্যে ১৯৫৯ ও ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে এবং ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান প্রতিষ্ঠার পর অন্য সব ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে জামায়াতও নিষিদ্ধ হয়।

সাত বছর পর জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালের ২৫ মে আবার প্রকাশ্য রাজনীতির সুযোগ পায় জামায়াত।

দলটির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলেও এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় এক নেতা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সরকারের তলবিবাহক, সেটা আবারো প্রমাণ করল। কারণ নির্বাচন কমিশন তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজটি করেছে। তিনি এও বলেন, জামায়াত এর আগেও একাধিকবার নিষিদ্ধ হয়েছে। এ নিয়ে আমরা মোটেও চিন্তিত না। সে প্রস্তুতি আমাদের আছে। নিষিদ্ধ হলে কীভাবে কাজ করতে হয়, সে অভিজ্ঞতা আমাদের আছে।’

তবে নতুন নামে যদি জামায়াত রাজনীতি করতে চায় তাহলে তাদের অবশ্যই আইন মেনে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে হবে বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, নিবন্ধনের সময় যদি দেখা যায়, এই দলের সঙ্গে একাত্তরের মানবতাবিরোধীরা যুক্ত, তাহলে তারা নিবন্ধন পাবে না। আনিসুল হক জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান, তাদের এ দেশে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।

অন্যদিকে ৯ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, জামায়াত অন্য কোনো দলের প্রতীকে বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনর করতে চাইলে তাদেরকে আটকানোর মতো আইন বাংলাদেশে নেই।

ওইদিন নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এ কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, যেসব দলের নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন নেই সেসব দলও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে দলগুলোকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে।

অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতারা নিবন্ধিত দলের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচন করতে পারবেন কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, এটি আইনে নেই। কিন্তু কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল যদি কোনো অনিবন্ধিত দলের প্রার্থীকে নমিনেশন দেয়, তাহলে তো আমরা বাধা দিতে পারব না।

নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতের সদস্যরা স্বতন্ত্র বা অন্য দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারবে কি না বা কমিশন বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা অন্য কোনো দলের প্রতীকে বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনর করতে চাইলে তাদেরকে আটকানোর মতো আইন বাংলাদেশে নেই।

নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণার বিষয়ে সচিব বলেন, প্রতীক বরাদ্দের আগে কেউ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবে না। আগাম প্রচার-প্রচারণা সংক্রান্ত বিষয়াদি সরিয়ে ফেলতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন