‘সরকারের নির্দেশেই খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে’

  09-12-2018 01:09PM

পিএনএস ডেস্ক: সরকারের হুকুমেই দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি । দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ রোববার সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নির্বাচন কমিশনে একজন কমিশনারের সঠিক রায়কে উপেক্ষা করে স্বার্থসন্ধানী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে বাকি কমিশনাররা বিভক্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ আদেশ দিয়ে মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন। গতকাল আপিল শুনানী চলাকালে আইনগতভাবে ন্যায়ের পক্ষে রায় না দিয়ে বিনা কারণে সময়ক্ষেপণ করেছে নির্বাচন কমিশন। সংবাদ পেয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নোয়াখালী থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বলেন যে, আইনগতভাবে খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন না। এর এক ঘন্টার মধ্যেই আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে ছুটে যান এবং নির্বাচন কমিশনকে বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বিষয়ে সতর্ক করেন।

রিজভী জানান, আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল সাংবাদিকদের বলেন, ইসিকে সতর্ক করতেই তারা কমিশনে এসেছেন এবং আরো বলেন, সাংবিধানিকভাবে বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই। এর কয়েক ঘন্টা পরেই নির্বাচন কমিশন বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল করে। মূলত তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিলের নির্দেশনা দিতেই আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল সেখানে গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সবসময় বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তাকে নিয়ে আতঙ্কে ভুগছে।

তিনি বলেন, আইনগতভাবে বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচন করতে কোনো বাধা না থাকলেও গভীর চক্রান্ত ও মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবেই গতকাল নির্বাচন কমিশন তার মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেছে। সিইসির নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন অনেক দণ্ডপ্রাপ্ত লোকের মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা করেছেন, যেমন ১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পংকজ দেবনাথ, হাজী সেলিম, মহিউদ্দিন খান আলমগীর (ম খা আলমগীর) এবং নাজমুল হুদাসহ অনেকেরই মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা করেছে ইসি। তাহলে বেগম জিয়ারটা নয় কেনো? নয় এজন্য যে, বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন অবৈধ করতে সিইসির প্রতি শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিল। আইনসম্মত ভাবেই বেগম খালেদা জিয়া মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য।

রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসন থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। রিটার্নিং কর্মকর্তারা আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বেগম জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন- যা সম্পূর্ণ ভাবে হাস্যকর। বেগম জিয়া তো কারাগারে, তাহলে তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেন কিভাবে? রিটার্নিং কর্মকর্তার সিংহ আর হরিণ শাবকের পানি ঘোলা করার ঈশপের গল্পের মতো আদেশের বিরুদ্ধে আপিল শুনানীর রায়ে গোটা দেশবাসী আশা করেছিল ন্যায়বিচার পাবেন তাদের নেত্রী। কিন্তু কি ভয়াবহ দলদাসত্ব দেখালেন সিইসি কে এম নুরুল হুদা ও তার কয়েকজন কমিশনার। সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে কে এম নুরুল হুদাসহ কয়েকজন কমিশনার আপিলে বেগম জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন। এই ঘটনায় জাতীয় নির্বাচনী পরিবেশ আওয়ামী দাপটে এখন মিথ্যা জয়ের ফলাফলের স্পষ্ট আভাস বিধৃত হলো। নির্বাচন কমিশন মুখোশের শেষ সুতোটুকু ছুঁড়ে আওয়ামী স্বার্থের মেশিন হিসেবে স্বীয় মহিমায় উদ্ভাসিত হলো। মোদ্দা কথা এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, যা হচ্ছে তা শুধুমাত্র জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার জন্যই। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন ছিনিমিনি খেলছে। সরকারের হুকুমের বাইরে ইসি কোনো কাজ করছে না।

রিজভী বলেন, দেশে এখন গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। গত দশ বছরে কেবলমাত্র বিএনপিরই ২০ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। দেশে এখন প্রতিদিনই ২/৩ জন মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। আবারো আওয়ামী লীগ জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে চারিদিকে মৃত্যুর মর্মরিত পদশব্দই শোনা যাবে। কমপক্ষে লাখ লাখ বিএনপি এবং বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ সমর্থকদেরকে নিজ গৃহ থেকে উচ্ছেদ হয়ে দেশ ছাড়তে হবে, কমপক্ষে কয়েক লাখ লোকের জীবন বিপন্ন হবে। বাড়িতে বাড়িতে কান্নার রোল উঠবে। সরকারি দলের জয়গান করা ছাড়া গণমাধ্যমের আর কোনো কাজ থাকবে না। মানুষ হাসতেও পারবে না, কাঁদতেও পারবে না। ভিন্নমত ও বিশ্বাস চিরদিনের জন্য গোরস্থানে নির্বাসিত হবে।

তিনি বলেন, গত দশ বছরে যে ভয়াবহ আওয়ামী দুঃশাসন চলছে, আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে যে দুঃশাসন চালানো হবে সেটি কেমন ভয়াবহ হবে তার নাম দেয়া এমুহূর্তে সম্ভব নয়। আরো কত ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমরা গুম হবে, কত মায়ের কোল শূন্য হবে, কত সন্তান তাদের পিতাকে হারাবে, কত স্ত্রী বিধবা হবে, তার হিসেব রাখাও অসাধ্য হয়ে পড়বে। কর্মসংস্থানের অভাবে আরো কত কোটি কর্মক্ষম যুবক বেকার হবে তার পরিসংখ্যান করা হবে দুঃসাধ্য। সমাজে চরম সহিংসতা বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান নৈরাজ্য আরো তীব্র রূপ লাভ করে সমাজকে গাঢ় অন্ধকারে ঢেকে ফেলবে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, এই চরম ক্রান্তিকালে আমরা এক অকল্পনীয় আওয়ামী জুলুমের জাহিলিয়াতের পরিস্থিতিতে নির্বাচন করছি। আমাদের সাথে আজ ঐক্য গড়েছেন দেশের সকল দেশপ্রেমিক শক্তি। জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্র ও গণতন্ত্র পূণরুদ্ধারের অবিসংবাদিত নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। দেশনায়ক জনাব তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তার ওপর যে জুলুম চালানো হচ্ছে তা বন্ধ করা ও তাকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনা। দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।

তিনি বলেন, বাগেরহাট জেলা ২০ দলীয় জোট নেতা রেজাউল করিমকে গতকাল গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাবনার বেড়া এবং সুজানগর এলাকার বিএনপির মনোনীত প্রার্থী কে এম সেলিম রেজা হাবিব গতকাল মাসুমন্দিয়া বাজারে দলের নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনাকালে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা অতর্কিতভাবে আক্রমণ করে চেয়ার টেবিল ভাংচুর ও নেতাকর্মীর মারধর করে আহত করে। তাৎক্ষণিক পুলিশ পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হজির হয়ে রুপপুর ইউনিয়ন বিএনপির ডা: ইসমাইল হোসেন, আবদুস সালাম, আবদুর রাজ্জাক মন্ডল, শাহ আলম, আলতাফ হোসেন, কৃষক দলের মজনু মিয়া, সিদ্দিক শেখ, মনসুর মিয়াকে মিথ্যা বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার করে এবং এখন পর্যন্তু বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ ব্যাপক তল্লাশী করে বিএনপির নেতাকার্মীদের গ্রেফতার হুমকি দিচ্ছে ও নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বেড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের মো: ওমর ফারুকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দুলালসহ ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী গিয়ে তাকে হুমকি দেয়, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র ভাংচুর করে এবং নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত থাকার থাকতে হুমকি দেয়। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন