বিজয় দেখবো বলে...

  10-12-2018 02:41PM

পিএনএস ডেস্ক : ৩১ মে ১৯৮১, আজো মনে পরে সেই বিবর্ণ সকাল।ঘুম থেকে জেগে দেখি যেন অচেনা পৃথিবী।বাবা রেডিও নিয়ে বসে আছে আর ইথারে ভেসে আসছে হামদ-নাথের করুন সুর। মায়ের চোখে মুখে বিষণ্ণতা। তখন আমি সবেমাত্র ক্লাশ ফোরের ছাত্র তাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি হল আজ। পরে বাবাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি করুন কন্ঠে বললেন বাংলাদেশকে যিনি সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন সেই প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে মেরে ফেলেছে।আজো মনে আছে সেদিন চুলাই আগুন জ্বলেনি।
হয়ত সেই ক্ষনেই হৃদয়ের মাঝে বপন হয়েছিল জাতীয়তাবাদের বীজ। যা ধীরেধীরে বড় হয়ে আজ পরিপূর্ণ বৃক্ষে পরিনত হয়েছে।যদিও আমার বাবা চাকুরীতে যোগদানের আগপর্যন্ত ভাসানী ন্যাপের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন তথাপিও তাঁর কাছ থেকে দুটি বিষয় ভালবাসতে শিখেছি। রেখেছি হৃদয়ের গহিনে পরম যতনে। তার একটি হল জাতীয়তাবাদ অন্যটি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।

সেই থেকে তাদের বসবাস এই অন্তরে। ১৯৮৮ সালে ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদের মাধ্যমে ঐ গাছে যেন কুঁড়ি এলো। তার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাসাস এর সদস্য হলাম ১৯৯১ সালে। পরবর্তীতে রাজনৈতিক অত্যন্ত প্রতিকুল ও রক্তাক্ত পরিবেশে নব্বইয়ের দশকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলাম। পড়া শেষে ঢাকায় এসে চাকুরি না খুঁজে রোজ পার্টি অফিস ছোটা। এভাবেই চলছিল জীবন ।একদিন পলাশীর প্রান্তরের মত কালো মেঘের আনাগোনা শুরু হল।

মীর জাফরদের চিরাচয়িত বিশ্বাস ঘাতকতায় জাতীয়তাবাদের আকাশে নেমে এলো ১/১১, সেই সময়ের প্রেক্ষাপট আপনার আমার সকলের কমবেশি জানা। এই ১/১১ এ আঘাত পেলাম হাঁটুতে যা পরবর্তীতে মেরদন্ডে ইফেক্ট করে ।তারপর শুরু হলো লাঠিতে ভর দিয়ে পথ চলা। তবু থেমে থাকিনি। ছুটে চলেছি পার্টি অফিস প্রেস ক্লাব ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট থেকে আমার প্রিয় জম্মভুমি জয়পুরহাট।

১/১১ পরবর্তী দুঃসময়ে যখন রাজনৈতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করতে অনেকের বুক কাঁপত তখনো উত্তরাঞ্চলের প্রিয় ভাইদের নিয়ে আমরা করেছি আলোড়ন তোলা অনুষ্ঠান। বিনিময়ে পেয়েছি জয়পুরহাটবাসি ও সারাদেশের অসংখ্য সহ-যোদ্ধার ভালবাসা।সেই ভালবাসায় আপ্লুত হয়ে ভেবেছিলাম বাঁকি জীবনটা প্রিয় জম্মস্থানের মানুষের সাথে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিবো। সেই লক্ষেই এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর-ক্ষেতলাল-কালাই উপজেলা নিয়ে গঠিত ৩৫ জয়পুরহাট-২ আসনের প্রার্থী হবার জন্য প্রিয় দলের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলাম। নমিনেশন পাইনি ।আমিও একজন মানুষ তাই স্বাভাবিক ভাবেই কিছুক্ষনের জন্য কষ্ট পেয়েছিলাম। ক্ষনিকের জন্য মনে হয়েছিল আমার ত্যাগের মুল্যায়ন হল না। তখনি চোখের সামনে ভেসে উঠল বাংলাদেশের জনগনের জন্য সবকিছু বিসর্জন দেওয়া শহীদ জিয়া পরিবারের প্রতিচ্ছবি।গণতন্ত্রের মা জেলে ।ভাই আরাফাত রহমান কোকো শহীদ হলেন।প্রিয় নেতা তারেক রহমান অসুস্থতা নিয়ে প্রবাসে। তারা আজ নির্বাচনে লড়ার মোলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। সেখানে আমার ত মনোনয়ন নিয়ে কষ্ট পাবার কথা নয়।

উপরে আমার জীবনের কিঞ্চিৎ কাহিনী তুলে ধরলাম সেই সব মনোনয়ন বঞ্চিত ভাই-বোনদের কথা মনে করে ।যাদের জীবনের গল্প হয়ত আমার চেয়ে অনেক করুন কিম্বা আমারই মত। তাদের জন্য সহমর্মিতার পাশাপাশি প্রত্যাশা এ টুকুই আসুন আমরা জিয়া পরিবারের ত্যাগের কথা হৃদয়ে লালন করি।

দিগন্ত জোরা সোনালী প্রান্তরে ধানের শীষের দোলায় জাতীয়তাবাদের পতাকা দুলবে বলে ইলিয়াস আলী , চৌধুরী আলম, সুমন জাকির রাসেল,আলামিন,জহির,মুন্না, সহ গুম হল শত শত ভাই।

জনি,বাপ্পি,সেলিম,জাহাঙ্গির,সোলেমান,ফারুক সহ হাজার হাজার ভাই বোন পাখীর মত গুলি খেল। হাবিবুন্নবি সোহেল ভাই,নিপুন,রুমা সহ লক্ষাধিক ভাইবোন আজ জেলে দুর্বিষহ দিন কা্টাচ্ছে। তাদের পরিবারের আহাজারির কাছে আমাদের মনোনয়ন না পাওয়ার কষ্ট কি খুব বেশী?
মনোনয়ন আমি বা আমরা পাইনি,পেয়েছে ত আমাদেরই কোন জাতীয়তাবাদী ভাই কিম্বা বোন।আসুন না আমরা আওয়াজ তুলি প্রতিটি আসনে প্রার্থী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া অথবা দেশনায়ক তারেক রহমান আর মার্কাটা শুধুই ধানের শীষ।

ধানের শীষ জিতলে জিতে যাবে বাংলাদেশ , ফিরবে গণতন্ত্র। মুক্ত হবেন মা।ভাইকে ফিরে পাবো আমাদের মাঝে।

যদি ধানের শীষ হারে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব গণতন্ত্র চিরতরে যাবে যাদুঘরে। আর দীর্ঘ হবে খুন গুম জেল জুলুমের তালিকা । তখন কেউ যাবোনা বাদ।

তাই আসুন ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোট যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরি।আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর শহীদ জিয়া ও আপোষহীন নেত্রী খালেদা জিয়ার আদর্শিক সন্তান।

আমরা লড়বো-আমরাই পারবো,
ধানের শীষের বিজয় নিয়েই ফিরবো... ইনশাআল্লাহ্‌

এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন, সদস্য,জাতীয় নির্বাহী কমিটি -বিএনপি

( মত প্রকাশের জন্য পিএনএস কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়)

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন