খুলনা-৬ আসনে লড়াই আওয়ামী লীগ ও জামায়াত

  10-12-2018 10:22PM

পিএনএস, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি : ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনে ভোটের লড়াই জমে উঠেছে। এ আসনে জোট, মহাজোট, জাপা উন্মুক্ত প্রার্থী, বাম জোট এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন প্রার্থী চূড়ান্তকরন হয়েছে। তবে নির্বাচনে মূল লড়াই হবে মহাজোটের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তরুণ প্রজন্মের আক্তারুজ্জামান বাবু ও বিএনপি জোট থেকে দলের নিবন্ধন বাতিল হওয়া খুলনা মহানগর জামায়েত ইসলামীর আমীর মও. আবুল কালাম আজাদ ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে থাকবেন। মহাজোটের পক্ষে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী আক্তারুজ্জামান বাবু, ২০ দলীয় একক প্রার্থী মও. আবুল কালাম আজাদ এবং জাপার একক প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধুর নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ আসনে বিএনপি প্রার্থী জেলা বিএনপি সভাপতি অ্যাড.শফিকুল আলম মনা প্রার্থী তালিকায় টিকে থাকতে আপ্রাণ চেষ্টা করলেও জোটগত কৌশলে শেষ মূহুর্তে জামায়াত নেতা আজাদের নাম চূড়ান্ত করা রয়েছে।

খুলনা জেলার সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা এবং উপকূলীয় উপজেলা কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৬, সংসদীয় আসন-১০৪। স্বাধীনতা পরবর্তী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এ আসনে ৪বার আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হন। তবে আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। পাইকগাছা উপজেলায় ১০টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার ৭৯টি ভোট কেন্দ্রে ৪৫২টি বুথ রয়েছে। এখানে ভোটার রয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৬ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজার ৯৭৭ জন পুরুষ এবং ১ লাখ ৭ হাজার ৫৮৯ জন নারী ভোটার। কয়রা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৬২টি ভোট কেন্দ্রে ৩৩০টি বুথ রয়েছে। এখানে ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৯০৪ জন। এর মধ্যে ৭৮ হাজার ৭৯১ জন পুরুষ এবং ৭৮ হাজার ১১৩ জন নারী ভোটার। বিগত নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১৯৭৩ সালে এ আসনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতা স ম বাবর আলী। ১৯৭৯ সালে বিএনপির শেখ রাজ্জাক আলী এবং ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মোমিন উদ্দীন আহমেদ নির্বাচিত হন। এরশাদের স্বৈরশাসনের অবসানের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন জামায়াতের শাহ্ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস। ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নূরুল হক জয়লাভ করেন। ২০০১ সালে আবার জামায়াতের শাহ্ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস সংসদ সদস্য হন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সোহরাব আলী সানা এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালে একই দলের নূরুল হক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এলাকায় ভোটের লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি হওয়ায় ইতোমধ্যে জামায়াত প্রার্থীর পক্ষে বাড়ী-বাড়ী মহিলা সংগঠন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক কর্মসূচিতে এগিয়ে রয়েছেন এমন টাই জানাগেছে। যদিও মহাজোট প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ নাশকতা মামলায় জেল হাজতে। অন্যদিকে এ আসনে আওয়ামী লীগ ধারাবাহিক বিজয় ধরে রাখতে দলের চেইন অফ কমান্ড ফিরিয়ে এনে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে দলীয় ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে একাধিক সভা করে সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন ও আবারও এ সরকার ক্ষমতায় আসতে পারে, এ ভাবনা থেকে মাঠ পর্যায়ে বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা মনস্তাত্ত্বিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় এটাকে ক্ষমতাসীনরা জোরেসোরে ভোটের কাজে লাগাতে চায়। পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের একাধিক সভা থেকে ভোট রাজনীতিতে জামায়াতের অপকৌশল ঠেকানোর জন্য দলীয় নেতা-কর্মীরা অনেকটা সতর্ক ভাবেই পথ এগোছেন। পূর্বের মতো এবারও জামায়াত ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে ভোট যুদ্ধে জয়ের প্রত্যাশা করছে অন্যদিকে এটিকে প্রতিহত করে আওয়মী লীগ সরকারের উন্নয়ন-সাফল্য তুলে ধরে এ জনপদে আক্তারুজ্জামান বাবু'র দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক জন সমর্থনের দিকটি সঠিক সময়ে ভোটের কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী ফসল ঘরে তুলবেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীন কোন্দল নিরশনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছেন। প্রার্থীতা নিয়ে শেষ মুহুর্তে উপজেলা জাপা সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীরের নাম টেকানোর জন্য তার পক্ষে নেতা-কর্মীরা জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধুর বিরুদ্ধে মানববন্ধন সভা সমাবেশের প্রেক্ষিতে হাইকমান্ড মোস্তফার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়ায় তৃনমূল নেতা-কর্মীরা এ বিরুদ্ধে সোচ্ছার হয়েছেন বলে লক্ষ করা গেছে। বাম জোটের ভোটের মাঠে সিপিবি'র সভাপতি কমরেড সুভাষ সানা মহিম, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মাওঃ নুর আহম্মদ সহ আরোও কয়েক জন এ আসনে লড়বেন।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন