এতটা অবহেলা কাম্য নয়

  17-01-2019 08:37PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : মানুষ দরদ দিয়ে কাজ করে।অনেকেই কাজ করে নির্মোহভাবে। আদর্শের জন্য কাজ করে তারা আনন্দ পায়। দেশ ও জাতির জন্য তারা এসব করে।কিছু পাওয়ার জন্য নয়।কাজ করে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে। বিবেকের দায় ও চিন্তা-চেতনার সঙ্গে মিলের কারণে তারা আত্মনিয়োগ করে।

বগুড়া-নোয়াখালীতে বিএনপি আর গোপালগঞ্জ অঞ্চলে আওয়ামী লীগের বাইরে কেউ অন্য দল করা মানে, রাজনীতিক হিসেবে গৌরবের বৈকি।এসব এলাকায় নিজ দলের এবং দলীয় অভ্যন্তরীণ কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আর এটা যদি ঘটে প্রকাশ্যে একেবারে কেন্দ্রে সেটা তো দুঃখজনক।এ ব্যাপারে কোনো প্রকার সান্ত্বনা, নিন্দা ও সহানুভুতি জানানো সাধারণ ব্যাপার।দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ যৌক্তিক।

এমন একটি দুঃখজনক, নিন্দনীয় ও বর্বর মারাত্মক ঘটনার পরও এর কোনোটাই যদি না ঘটে সে দলের পক্ষ থেকে, তাহলে বিবেকবান মানুষের কষ্ট লাগাই তো স্বাভাবিক। এতে দুর্বৃত্তরা যেমন আশকারা পায় তেমনি ঘটনার শিকার মজলুমদের কষ্টের সীমা থাকে না। কোনো অপরাধ করে নির্যাতন সহ্য করা যায়। কিন্তু নির্পরাধীর ওপর নির্যাতন হলে সেটা মানা কঠিন বৈকি।

যে কারণে এ লেখা, তা হলো- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন পান এফ এ শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর। তিনি গোপালগঞ্জ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।তার বাবা ঠান্ডু মিয়া্ এমপি ছিলেন।তার চাচা ছিলেন মন্ত্রী। তার দাদা-বাবার ১৩০ বছরের রাজনীতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সুখ্যাতি রয়েছে।বনেদি মুসলিম লীগের পরিবার হিসেবে এলাকায় তাদের খ্যাতি রয়েছে। সামাজিকভাবে তাদের দানশীলতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তির কমতি নেই মোটেও।

বনেদি এই পরিবারের বড় সন্তান এফ এ শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর ৮ ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে আক্রান্ত হন দলীয় বিপক্ষ কতিপয় চিহ্নিত অপরিণামদর্শী ব্যক্তির দ্বারা।তারা তাকে শুধু লাঞ্ছিত করেই খ্যান্ত হয়নি, সংঘবদ্ধভাবে মারতে মারতে মাটিতে ফেলে দেয়। বাবার এ অবস্থায় বড় ছেলে রক্ষায় এগিয়ে এলে তাকেও বেধম প্রহার করে সঙ্গাহীন করে ফেলে।

মুর্মূষু অবস্থায় বাপ-বেটাকে রাজধানীর ইউনাউটেড হাসপাতালে তাৎক্ষণিক ভর্তি করা হয়।আজ এ প্রতিবেদন তৈরি করা পর্যন্ত ছেলে ওহেদ লুৎফুজ্জামান রুমনের সঙ্গা ফিরেনি। কৃত্রিম উপায়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্বর এ ঘটনার পর বিএনপির পক্ষ থেকে কেউ একটু খোঁজ-খবর পর্যন্ত নেননি।অথচ শেখ সেলিম থেকে শুরু করে গোপালগঞ্জের ভিন্নমতের মানুষও হাসপাতালে তাদের দেখতে যান, দেন সান্ত্বনা।

ইউনাউটেড হাসপাতাল আর পিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় বেশি দূরে নয়, তার পরও এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার কোনো প্রকার সহানুভূতি বা সান্ত্বনা জানানো তো দূরের থাক, একনজর দেখতেও কোনো নেতা যাননি! মর্মান্তিক ও মারাত্মক ঘটনার জন্য চিহ্নিত দায়ীদের বিরোদ্ধে গ্রহণ করা হয়নি কোনো প্রকার ব্যবস্থা।ফলে বিষয়টি আত্মপীড়ার কারণ হয়ে দঁড়িয়েছে আক্রান্ত পরিবারটির জন্য।

পারিবারিকভাবে এলাকায় যাদের মানুষ ও মানবতার পাশে দাঁড়ানোর গৌরবজনক অতীত রয়েছে, রাজধানী ঢাকায়ও এর কমতি কিন্তু নেই। বরং ক্ষেত্রবিশেষে বেশি রয়েছে। আদর্শ ঢাকা আন্দোলনে যখন কোথাও কেউ অফিস দিচ্ছিল না, ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তখন বিনা ভাড়া তথা বিনাবাক্যে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোর্ডের জামান টাওয়ারের দোতলা ছেড়ে দেন।প্রতিদিন শতাধিক মানুষকে আপ্যায়ন করাতেন।

এবার যখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়, তখনও সেই জামান টাওয়ারের চতুর্থ তলার বিরাট একটি অংশ দেওয়া হয়।জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে যেখানে প্রয়োজনীয় সব কাজ চলছিল আগুন লাগার আগ পর্যন্ত।যেখানে এখনো কাজ চলছে। গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়া সত্ত্বেও অন্য দল এবং অন্য মত লালন শুধু নয়, দলের প্রয়োজনে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বিনাবাক্যে যারা এগিয়ে আসেন, সেই ব্যক্তিরা আক্রান্ত হওয়ার পর যখন দলের কেউ একটু খোঁজও নেন না, নূনতম সহানুভূতি দেখানোর মতো ভদ্রতা দেখান না- তখন বিবেকবানদের কষ্ট লাগে বৈকি। আক্রান্তরা তো ফেরেশতা নন যে, তাদের কষ্ট লাগবে না।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন