আবার রওশনের কবজায় এরশাদ!

  24-03-2019 08:59AM


পিএনএস ডেস্ক: আগের রাতে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরানোর পর এবার সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকেও গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে সরিয়ে দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। জি এম কাদেরের বদলে দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদকে এ দায়িত্বে এনেছেন তিনি। এ নিয়ে জাপায় গুঞ্জন শুরু হয়েছে যে ফের স্ত্রী রওশনের কবজায় পড়েছেন এরশাদ।

গতকাল শনিবার বিরোধীদলীয় উপনেতাসংক্রান্ত এরশাদের সই করা চিঠি দেওয়া হয়েছে স্পিকারকে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা এবং পার্লামেন্টারি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আমি প্রধান বিরোধী দলের উপনেতার পদ থেকে জনাব গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে অপসারণ করছি। এখন প্রধান বিরোধী দলের উপনেতার পদে বেগম রওশন এরশাদকে মনোনীত করা হলো।’

এর আগে শুক্রবার রাত ১১টার দিকে পাঠানো এরশাদের সাংগঠনিক নির্দেশে বলা হয়, ‘আমি এর আগে ঘোষণা দিয়েছিলাম যে, আমার অবর্তমানে পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের পার্টি পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন এবং আমি এটাও আশা করেছিলাম যে পার্টির পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিল তাঁকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবে। কিন্তু পার্টির বর্তমান সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আমার সেই ঘোষণা প্রত্যাহার করলাম। জি এম কাদের পার্টি পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমানে পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে এবং পার্টির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। পার্টির সিনিয়র নেতারাও তাঁর নেতৃত্বে সংগঠন করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।’

জি এম কাদেরকে সরিয়ে দেওয়ার খবর শুনে দুপুরের দিকে তাঁর অনুসারী কয়েক শ নেতাকর্মী বনানীতে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ তখন মন্তব্য করেন, এরশাদ ফের দালালদের খপ্পরে পড়েছেন।

জাতীয় পার্টিতে এ পরিবর্তন আকস্মিক হলেও রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের বিরোধ পুরনো। এর আগে জি এম কাদেরকে জাপার কো-চেয়ারম্যান করার পর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন রওশন। পরে এক সপ্তাহের মধ্যে রওশনকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন এরশাদ।

জাপার একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, দলের একজন সাবেক মহাসচিব চার দিন আগে এরশাদের বাসায় গিয়ে জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে নালিশ করেন এবং এরশাদকে বলেন, জি এম কাদের এরশাদকে গালাগালি করেছেন। এতে জি এম কাদেরের ওপর ক্ষেপে যান এরশাদ। ওই নেতা আরো জানান, রওশন দীর্ঘদিন বারিধারায় এরশাদের বাসায় না গেলেও গত সপ্তাহে শাদকে দেখার কথা বলে তিনবার সেখানে যান।

জাতীয় পার্টির বিভিন্ন কর্মসূচিতে গরহাজির থাকলেও গত বুধবার এরশাদের ৯০তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হাজির হন রওশন ও তাঁর অনুসারীরা। ফুলের তোড়া নিয়ে উপস্থিত হন রুহুল আমিন হাওলাদারও। ওই দিন থেকেই জাতীয় পার্টিতে পরিবর্তনের গুঞ্জন শুরু হয়।

তবে জাপার একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জিএম কাদেরকে সরিয়ে রওশনকে সামনে আনার ক্ষেত্রে সরকারের একটি অংশের হাত রয়েছে। ওই নেতাদের মতে, জি এম কাদেরের চেয়ে রওশন এরশাদ ক্ষমতাসীনদের বেশি আস্থাভাজন।

এ পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে জি এম কাদের বলেন, ‘আমি বিষয়টি বুঝে উঠতে পারছি না। আমি তো কোনো অপরাধ করিনি। কেন এমন হলো আমার কাছে রহস্যময় মনে হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘পার্টির নেতা যা ভালো মনে করেছেন তিনি সেটা করেছেন, আমি কাজের লোক কাজ করে যাব।’

জাপার মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘এটা দুই ভাইয়ের বিষয়। এ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘এরশাদ সাহেব কেন এটা করেছেন তা তিনিই ভালো জানেন। তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করুন।’ তবে জি এম কাদেরের সমালোচনা করে ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘জি এম কাদের কোনো রাজনৈতিক লোক নন। পার্টির নেতা হওয়ার পর এক দিনও দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বসেননি।’

দলীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ১১টার দিকে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে বারিধারায় এরশাদের বাসায় যান জি এম কাদের ও মসিউর রহমান রাঙ্গা। জি এম কাদের এরশাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, এরশাদ দলীয় বিষয়ে কিছু না বলে পারিবারিক বিষয়ে আলোচনা করেন। ওই সময় রাঙ্গাও এ নিয়ে কোনো কথা তোলেননি। দুপুর ১২টার দিকে জি এম কাদের ও রাঙ্গা বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই এরশাদের বাসায় যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি রওশন এরশাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ঘণ্টা দুয়েক এরশাদের বাসায় থেকে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বেরিয়ে যাওয়ার পরই এরশাদ চিঠিতে সই করেন। ওই চিঠিতে জি এম কাদেরকে সরিয়ে রওশন এরশাদকে বিরোধী দলের উপনেতা মনোনীত করেন এরশাদ।

দলীয় সূত্র মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে রওশনপন্থী নেতাদের দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায়নি। গত মাসে কাকরাইলে দলীয় অফিসে বিগত সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলের প্রার্থীদের মতবিনিময়সভায় বিভিন্ন জেলা থেকে আগত রওশনপন্থী নেতাদের তোপের মুখে পড়েন জি এম কাদের ও মসিউর রহমান রাঙ্গা।

ওই সূত্রের দাবি, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন রওশন এরশাদ ও তাঁর অনুসারীরা। সামনে চলে আসেন জি এম কাদের। তাঁকে বিরোধীদলীয় উপনেতা করার পাশাপাশি পার্টির ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান হিসেবেও ঘোষণা করেন এরশাদ। এতে ক্ষুব্ধ হন রওশন এরশাদ, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ফকরুল ইমাম ও সুনীল শুভ রায়সহ তাঁদের অনুসারীরা। এ ছাড়া রুহুল আমিন হাওলাদারকে বাদ দিয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে জাপার মহাসচিব করা হলে ক্ষুব্ধ হাওলাদারও যোগ দেন রওশন এরশাদের সঙ্গে। তাঁরা রওশনকে সামনে রেখে জি এম কাদের ও রাঙ্গাকে সরানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে থাকেন।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন