নামেই ঐক্যফ্রন্ট, কিন্তু কাজে?

  07-08-2019 03:05AM

পিএনএস ডেস্ক:বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোটগত ঐক্য তৈরি হলেও তাদের মধ্যে এখন দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো জোটের ভেতরে সৃষ্টি হয়েছে অনুজোট। বন্যা ও ডেঙ্গু সমস্যা নিয়ে দলগুলোর যৌথ কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। গত ছয় মাসে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করলে এ বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে ওঠে। এর মধ্যে আলোচনায় থাকা ঐক্যফ্রন্টের অবস্থান রীতিমতো ঝাঁপসা হয়ে গেছে, কেউ কেউ বলছেন এটি শুধুমাত্র নামেই ঐক্যফ্রন্ট। আসলে নেতাকর্মীদের ভেতরে কোনো ঐক্য নেই।

এদিকে বিরোধী দলগুলোর বাইরে সরকারঘেঁষা অন্তত দুটি জোট আছে, যারা এখন অকার্যকর। ঘরোয়াভাবে কর্মসূচি পালন করলেও মাঠে-ঘাটে বা রাজপথে নিষ্ক্রিয় রয়েছে বি চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট। কোনো কার্যক্রম নেই জি এম কাদেরের জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯টি। গত নির্বাচনের সময় প্রায় ১৪টি দল সক্রিয় ছিল। বিদ্যমান জোটগুলোতে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের সংখ্যা প্রায় ১৫২টি। জোটগুলো হচ্ছে—১৪ দলীয় জোট, ২০ দলীয় জোট, সম্মিলিত জাতীয় জোট, গণতান্ত্রিক বাম জোট, যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া, ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স, জাতীয় ইসলামী মহাজোট, বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-এনডিএফ, গণতান্ত্রিক জোট, প্রগতিশীল জোট, হুদা জোট ও বিজেপি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা অভিযোগ করেছেন—একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফলের পর দুই জোটের অন্যতম প্রধান শরিক বিএনপি কার্যত ভেঙে পড়েছে। ঐক্যফ্রন্টকে কেন্দ্র করে দলটিতে তিনটি ধারা সৃষ্টি হয়েছে। এই মুহূর্তে দলটির প্রধান চিন্তা কারাগারে থাকা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি। জোট ও ফ্রন্টের নেতারা ধারণা করছেন সরকার আইনি পথে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিরুদ্ধে। সরকারের পক্ষে তার প্যারোল নিয়ে নমনীয়তা রয়েছে। এ কারণে কোনো আন্দোলনে না গিয়ে খালেদা জিয়াকে সমঝোতার মধ্যদিয়ে মুক্ত করতে চাইছে বিএনপি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রভাবশালী এক নেতার ভাষ্য, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য ঘোষণা করে আন্দোলনের সূচনা করে। কথা ছিল নির্বাচনের পরও আন্দোলনের প্রসঙ্গটি থাকবে। কিন্তু ফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন এ বিষয়ে নীরবতা পালন করেন। বিএনপিও আগ্রহ দেখায়নি। বরং বারবার ন্যূনতম কর্মসূচির কথা বলা হলেও অনাগ্রহের কথা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেন, ‘১০ জুন ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত ছিল পরে বৈঠক হবে কামাল হোসেন দেশে আসার পর। কিন্তু এরপর বিএনপি আর মিটিং ডাকেনি। আর দৃশ্যত মনে হচ্ছে, বিএনপি ফ্রন্টকে সক্রিয় রাখতে চাইছে না। ফলে শরিক দলগুলো নিজেদের উদ্যোগে যতটুকু সম্ভব কাজ করছে। এ ছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে বিএনপির মধ্যে তিনটি ধারা রয়েছে। একেকটি ধারা একেক রকম মত পোষণ করে।’

জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আপাতত কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। কারণ, প্রত্যেকে আলাদা আলাদা করে চিন্তা করছে। ন্যূনতম ঐক্যের জায়গা কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেই। সুতরাং যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলতে থাকবে বলে মনে করি।’

বিএনপির একটি দায়িত্বশীল পক্ষ জানিয়েছে, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের বাস্তবতা ছিল। নির্বাচনের পর হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ পরিস্থিতি থেকে বেরুতে হলে ফ্রন্টকে নতুনভাবে সাজাতে হবে। বিশেষ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আ স ম রব, মাহমুদুর রহমান মান্নাকে একটি জায়গায় আনতে হবে।’

এ বিষয়ে ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি তাদের কাজে ব্যস্ত রয়েছে। তারা বড় দল, তারা নিজেদের গুছিয়ে আনার পর ফ্রন্টকে সক্রিয় করা হবে।’

এদিকে ২০ বছরের জোট ২০ দলীয় জোট। সময়ের পরিক্রমায় চার দলীয় জোট, ১৮ দলীয় জোট হয়ে এখন ২০ দলীয় জোট। গত ২৭ জুন নতুন করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১৮ দফা দাবি আদায়ের লক্ষে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামে নতুন সংগঠনের ঘোষণা দেন এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। এই মঞ্চে কল্যাণ পার্টি, জাগপা ও খেলাফত মজলিসের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

অলি আহমদ ২০ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক। এই মঞ্চ গঠনের পর থেকে বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় তার। এলডিপির নেতাদের অভিযোগ—একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংসদে যোগদানের মধ্যদিয়ে বিএনপির নেতারা কার্যতবিরোধী দলের মর্যাদা হারিয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ব্যর্থ। এসব কারণে অলি আহমদ দেশি-বিদেশি প্রভাবশালী মহলের ইঙ্গিতে সক্রিয় হয়েছেন। যদিও শুরু থেকেই অলি আহমদ জামায়াতের পাশে থেকেছেন। জামায়াতের পক্ষ থেকে মঞ্চের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের অনুষ্ঠানে সহযোগিতা দেয়া হয়েছে।

বিএনপির সাড়া না পেয়ে ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন অলি আহমদ। গত মাসের শেষদিকে যোগাযোগ করেন মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে। তবে সেখানেও তিনি খুব একটা সাড়া পাননি।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন