ছাত্রলীগ কি সত্যিই নিয়ন্ত্রণহীন?

  11-10-2019 01:49PM


পিএনএস ডেস্ক: বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের পর এই বনে বসে যে প্রশ্নের মুখে আমি সবচেয়ে বেশি পড়ছি তা হলো, এই ছাত্র সংগঠনগুলোর উপর কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে কিনা। প্রশ্নের উত্তরটি নিয়ে আকাশ-পাতাল ভাবছি আমি।

একবার মনে হচ্ছে এসব ছাত্র সংগঠনগুলো সত্যিই নিয়ন্ত্রণহীন। বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনাও বলেছেন, নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে শাস্তি পেতে হবে। বলা যায়, বুয়েট ছাত্রলীগ শাখার গুরুত্বপূর্ণরা এরকম একটি কাণ্ড করবেন বা করতে পারবেন তা আসলে কেউ ভাবতে পারেননি। হঠাৎ করেই তারা এরকম একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন। যেমনভাবে পদবঞ্চিত ছাত্রদলের নেতারা বিএনপির নয়াপল্টন অফিস ভাংচুর করেন অনেকটা সেরকম আর কী।

কিন্তু আবার মনে হয়, বুয়েটের ছাত্রলীগ শাখা কি সত্যি এত বোকা! কী মোক্ষ বা কী লক্ষ্য তারা অর্জন করবেন বলে ভেবেছিলেন ফাহাদকে পিটিয়ে? কেন তাদের মনে হয়েছিল ফাহাদকে রাত দুপুরে ডেকে এনে পেটানোটা জরুরি। কাকতালীয়ভাবে একদিন আগে ফাহাদ ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিল, যেখানে সে প্রশ্ন তুলেছিল ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিগুলোর যৌক্তিকতা নিয়ে। ছাত্রলীগ কিন্তু এর আগেও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাজ বা কথার মান-মর্যাদার পাহারাদার হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে।

দুর্নীতির দায়ে পুরানো কমিটি বিদায় নেওয়ার পরপরই নতুন কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় সবাইকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কেউ ধৃষ্টতা দেখালে ‘তার পিঠের চামড়া থাকবে না। গত বছর কোটা সংস্কারকারীদের উপর হামলার প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগ নেতাদের প্রশ্ন করলে তারা আমাকে বলেছিলেন, আন্দোলনকারীদের অপরাধ তারা শেখ হাসিনাকে কটাক্ষ করেছিলেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হতেই পারে, আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর কাজ এবং কথা প্রশ্নাতীত রাখা ছাত্রলীগের প্রধান দায়িত্বগুলোর একটি।

আবরারের ঘটনা নিয়ে ছাত্র রাজনীতি থাকা না থাকার প্রশ্ন উঠেছে। আমার মনে হয়, দেশে ছাত্র রাজনীতি নেই, নেই আসলে কোনো রাজনীতিই। এক্ষেত্রে আইন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি বন্ধ করা হলে সরকারি দলই বেশি লাভবান হবে। ছাত্ররা কলেজ বা বিশ্বিবদ্যালয়গুলোতে রাজনীতি না করতে পারলে আন্দোলন বা সংগ্রাম এগিয়ে নেয়া এক রকম অসম্ভব।

আওয়ামী লীগের শক্ত হাতে দেশ শাসন বা পুলিশ বা প্রশাসনকে কুক্ষিগত করার অভিযোগ মাথায় রেখেও বলা যায়, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি গত এক দশকে নিজেদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সামর্থ্যহীনতাই প্রমাণ করে গেছে শুধু। কারণ, সরকারের চরম প্রতিরোধ সত্ত্বেও সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন সফল হয়েছে।

এখন ছাত্র রাজনীতি বন্ধ বা নিষিদ্ধ করে দেয়া হলে কয়েকদিন আগে নতুন কমিটি করে বিএনপি সমর্থিত ছাত্রদলে যে প্রাণ সঞ্চার হয়েছিল তা-ও মুখ থুবড়ে পড়বে, সরকারের পথ হবে আরও কাঁটাহীন।

বুয়েটের ঘটনটা যদি পরিকল্পনাহীন আকস্মিকও হয়, একথা সত্যি, আমাদের দশদিক আচ্ছন্ন হয়ে আছে ভয়ের শীতলতায়। সুতরাং ছাত্র বা জনতা কারো পক্ষেই এখন সাধারণ প্রতিবাদ বা আন্দোলন সংগ্রাম করার চিন্তা মাথায় আনা কঠিন। এই ভয় থেকে মুক্তি পেতে আমাদের জানতে হবে, কেন আসলে আবরারকে মারা হয়েছিল, কার নির্দেশে। সূত্র : ডয়চে ভেলে

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন