ক্রমশ একা হয়ে পড়ছেন ওমর ফারুক!

  13-10-2019 11:35AM


পিএনএস ডেস্ক: ক্যাসিনো ও জুয়াবিরোধী অভিযান ছিল অনেকটাই আকস্মিক। এতে অনেকের অবস্থা হয় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো। বিশেষ করে যুবলীগের পদস্থদের।

এরইমধ্যে আটক হয়েছেন সংগঠনটির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ অন্যদের বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, অস্ত্র, মদসহ আটক করেছে র্যােব। সহযোগী আরমানসহ আটক হয়েছেন যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।

আটকরা তাঁদের কর্মকাণ্ডের অংশীদার, সুবিধাভোগী ও প্রশ্রয়দাতা হিসেবে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীসহ যুবলীগের কয়েকজন নেতার নাম বলেছেন জিজ্ঞাসাবাদে। ওমর ফারুকের হাত ধরে অনেক অনুপ্রবেশকারী যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পদ দিতে গিয়ে বিপুল অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের তথ্যও উঠে এসেছে। এ ছাড়া যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার পর ওমর ফারুক চৌধুরী বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এসব কারণে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। অর্থপাচার ও সন্ত্রাস অর্থায়ন প্রতিরোধে দেশের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) গত ৩ অক্টোবর সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে এসংক্রান্ত চিঠি পাঠায়। পরবর্তী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তাঁর এবং তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট হিসাবগুলোর তথ্য জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

ব্যাংক হিসাব তলবের পর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় যুবলীগ চেয়ারম্যানের। এ জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে। ক্যাসিনোকাণ্ড নিয়ে দেশে ব্যাপক তোলপাড় ও যুবলীগের নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ কয়েকজন গ্রেপ্তারের পর এই নিষেধাজ্ঞার খবর পাওয়া যায়।

এদিকে, ওমর ফারুক চৌধুরীর পাশে এখন থাকছে না তাঁর সংগঠন যুবলীগও। বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে সরকারি নিষেধাজ্ঞা, ব্যাংক হিসাব তলবসহ নানা সমালোচনার মুখে থাকা যুবলীগ চেয়ারম্যানকে ছাড়াই কিভাবে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কংগ্রেস করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। গত শুক্রবার যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের এক সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয় বলে সংগঠনের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এসব ঘটনায় মনে হচ্ছে ক্রমশ একা হয়েছে পড়ছেন সংগঠনের এই দোর্দণ্ড প্রতাপশালী চেয়ারম্যান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে বিড়ি শ্রমিক লীগ থেকে রাজনীতি শুরু করেন ওমর ফারুক চৌধুরী। এরশাদের সময় তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতেন। ১৯৯২ সালে শুরু করেন আওয়ামী লীগের রাজনীতি। ২০০৯ সালে যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং ২০১২সালে চেয়ারম্যান হন। ৭১ বছর বয়সেও তিনি যুব সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

যুবলীগের বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী পোশাক খাতের রাও গার্মেন্টস ও রাও নিটওয়ার্স অ্যাপারেল নামের দুটি কম্পানির নামে সোনালী ব্যাংকের লালদীঘি করপোরেট শাখা থেকে ঋণ নেন। প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকার এই ঋণের দায় এখন ৪৪ কোটি টাকা। এই ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ার পর তিনি পুনঃতফসিল করেন। এতে ১৭ কোটি টাকা সুদ মওকুফ পান। সুবিধা নিয়েও ঋণ পরিশোধ না করায় আবার খেলাপি হয়ে যান তিনি। সুবিধার মেয়াদ আবার বাড়ানোর দাবি করলে ব্যাংক তা নাকচ করে দেয়। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে সুবিধা আদায়ের জন্য আবার আবেদন করেন।

ওমর ফারুকের আবেদনটি ইতিবাচকভাবে বিবেচনার জন্য তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাংকের কাছে সুপারিশও করেন। ব্যাংক ঋণের টাকা আদায়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা ও সম্পদ নিলামের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০৯ সালে নিলামের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার পর সেই সব উদ্যোগ আর আলোর মুখ দেখেনি।

এসব অভিযোগ থেকে তিনি ছাড় পেলেও বর্তমান পরিস্থিতি ক্রমাগত নাজুক হয়ে পড়ছে যুবলীগ চেয়ারম্যানের জন্য। তাঁকে নিরাপত্তা দিতে কিংবা প্রভাব প্রতিপত্তি বজায় রাখতে একসময়ের হাজার হাজার নেতাকর্মী, বিশাল গাড়িবহর-সবই এখন নিঃশেষ প্রায়। কাছের মানুষগুলো একে একে চলে যাচ্ছেন তাঁকে ছেড়ে। তিনি কী পারবেন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে, নাকি ছিটকে পড়বেন বহুকাল আগের অবস্থায়- এসব দেখার জন্য চেয়ে আছে কৌতুহলী মানুষ।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন