পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক

  13-03-2020 05:14PM

পিএনএস ডেস্ক:নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ পাওয়ায় নরসিংদীর শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলাটি খুব শিগগিরই করা হবে বলে জানিয়েছে দুদক সূত্র।

জানা গেছে, গত মাসের শেষ সপ্তাহে এই দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে ১ মার্চ কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজকে নিয়োগ দেয়া হয়।

এরপর ২ মার্চ এই কর্মকর্তা শামিমা নুর পাপিয়া ওরফে পিউ সম্পর্কে তথ্য জানতে ওয়েস্টিন হোটেলকে চিঠি দেয়। ৮ মার্চ শামিমা নূর পাপিয়া এবং তার স্বামীর অর্থের তথ্য জানতে দেশি-বিদেশি ৫৯টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছেও চিঠি দেয় এই কর্মকর্তা। একইদিন থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় এই দম্পতির বাড়ি ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য জানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে আলাদা চিঠি পাঠানো হয়েছে।

ভোগ-বিলাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরের আয়কর বিবরণীতে পাপিয়া বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন মাত্র ৩ লাখ টাকা। আর সম্পদ দেখিয়েছেন মাত্র ১৮ লাখ টাকা। যেখানে বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকিও দিয়েছে পাপিয়া বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর বিপুল পরিমাণ এই অর্থের বৈধ কোনো উৎস পায়নি দুদক।

অন্যদিকে, ওয়েস্টিন হোটেলকে চিঠি দেয়ার পর সম্প্রতি হোটেল কর্তৃপক্ষ পাপিয়ার পরিশোধ করা বিল ভাউচারসহ প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। সেখানে দেখা যায়, পাঁচ তারকা হোটেলটির বিলাসবহুল ছয়টি কক্ষ ভাড়া নেন পাপিয়া। তিনি থাকতেন ২২০১ নম্বর প্রেসিডেন্টিয়াল স্যুটে। কিন্তু পাঁচ তারকা হোটেলটির চারটি কক্ষ টানা ৪ মাস ৯ দিন নিজের দখলে রাখেন পাপিয়া। গ্রেফতারের দিন পর্যন্ত মোট ১২৯ দিনে পাপিয়া ও তার সঙ্গীদের থাকা, খাওয়া, মদের বিল বাবদ পরিশোধ করেছেন ৩ কোটি ২৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা।

বিল ভাউচার জমা দেয়ার পাশাপাশি ক্লোজড সার্কিট ক্যামরার (সিসিটিভি) ফুটেজও জমা দিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, পাপিয়া কে সেটি আমাদের দেখার বিষয় না। তিনি ৩ কোটি টাকা কোথায় পেলেন, আমরা তা খতিয়ে দেখবো। তার টাকার উৎস দেখাতে না পারলে মামলা হবেই। অনুসন্ধান চলছে।

অন্যদিকে রাজধানীর ইন্দিরা রোডে পাপিয়া-মফিজুর দম্পতির বাসায় অভিযানের পর র‌্যাব জানায়, একটি বিদেশি পিস্তল, দু’টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ২০টি পিস্তলের গুলি, ৫ বোতল দামি বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেকবই, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড উদ্ধার করে সংস্থাটি।

র‌্যাব আরো জানায়, পাপিয়া ও তার স্বামীর মালিকানায় ইন্দিরা রোডে দুটি ফ্ল্যাট, নরসিংদীতে দুটি ফ্ল্যাট ও দুই কোটি টাকা দামের দুটি প্লট, তেজগাঁওয়ে বিএফডিসি ফটকের কাছে গাড়ির শোরুমে ১ কোটি টাকার বিনিয়োগ ও নরসিংদী জেলায় একটি প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকার বিনিয়োগ আছে। অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অনৈতিক কর্মকাণ্ড, জাল নোট সরবরাহ, রাজস্ব ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ নানা অপরাধের সঙ্গ জড়িত থাকায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাব বলছে, গত ১২ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে এই দম্পতি পাঁচ তারকা হোটেলের কয়েকটি বিলাসবহুল কক্ষে অবস্থান করেন। এ সময় পাপিয়া পরিশোধ করেন ৮১ লাখ ৪২ হাজার টাকা।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন