পিএনএস ডেস্ক: ২৫ মাস পর দুটি শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। দুটি শর্তে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়াকে গ্রহণ করতে দলটির নেতাকর্মীরা ভিড় করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে। সেখানে ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা।
তার সাজা স্থগিত থাকায় অন্য বন্দির মত তিনি স্বাভাবিক চলাচলের সুযোগ পাবেন না। শর্ত ভঙ্গ করলে কোন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই থাকে গ্রেপ্তার করা যাবে। কারাবন্দি থেকে মুক্ত হলেও নিজ বাড়িতেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।
সাজা স্থগিত থাকাকালে খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কাজে অংশ নিতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি (খালেদা) রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করবেন কেন? তিনি তো এখনো সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। ৬ মাসের জন্য শুধু শাস্তি স্থগিত করা হয়েছে।
শর্ত ভঙ্গ করলে শাস্তি স্থগিত বাতিল হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে হঠাৎ করেই ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, মানবিক দিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুই শর্তে তাকে মুক্তি দেয়ার এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। খালেদা জিয়া বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশ যেতে পারবেন না- এমন শর্তে তাকে মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমার কাছে একটা দরখাস্ত করেছিলেন, খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়ার জন্য। সেখানে অবশ্য উনি বলেছিলেন লন্ডনে উন্নত চিকিৎসার জন্য আবেদনটি করা হয়েছে।
‘এরপরে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার, তার বোন সেলিমা ইসলাম এবং তার বোনের স্বামী রফিকুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একই বিষয়ে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সেখানেও এই আবেদনের বিষয়ে কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলেছিলেন নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য।
তিনি বলেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইনি প্রক্রিয়ায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার উপধারা (১) অনুযায়ী খালেদা জিয়ার যে সাজা, সেটা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে মুক্তি দেয়ার জন্য আমি মতামত দিয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, কিছুক্ষণ আগে আমার মতামত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি এবং আমি আপনাদের এখানে উল্লেখ করেছি যে, প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন এবং তার নির্দেশ হচ্ছে আইনি প্রক্রিয়ায় দুই শর্তসাপেক্ষে তার দণ্ডাদেশ স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য।
অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এখানে বলা হচ্ছে না যে তিনি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন না। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে তার কন্ডিশনের ওপরে দেখা যাবে, সেই জন্যই কথাটা উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।
আর এ কারণে খালেদা জিয়াকে বয়স বিবেচনায় মানবিক কারণে সরকার সদয় হয়ে দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, তার সাজাটা স্থগিত করা হয়েছে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় উপধারা (১) অনুযায়ী।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি হাসপাতালে নিশ্চয়ই যেতে পারবেন।
‘কিন্তু হাসপাতালে যদি ভর্তি হতে হয়, তাহলে বাংলাদেশের সবচেয়ে মানসম্পন্ন হাসপাতাল (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল) সেখানে তো তিনি আছেনই। সেখানে তো তার চিকিৎসা চলছেই। সেখানে ভর্তি হতে হবে, সেটা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বোঝা যাবে, কিন্তু শর্ত হচ্ছে, তিনি ঢাকাস্থ নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ওই সময়ে তিনি দেশের বাইরে গমন করতে পারবেন না।’
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ স্থগিত করা হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার উপধারা (১) মতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতে আদালতের কোনো অনুমতি লাগবে না। তিনি যদি খালাস পেতেন, তাহলে এক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনার প্রয়োজন পড়ত।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে সরকার যেকোনো সময় বিনা শর্তে বা দণ্ডিত ব্যক্তি যা মেনে নেয় সেই শর্তে তার দণ্ড কার্যকর রাখা স্থগিত রাখতে বা সম্পূর্ণ দণ্ড বা দণ্ডের অংশ বিশেষ মওকুফ করতে পারবেন।
শর্ত দুটির বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে ঢাকাস্থ নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। তবে চিকিৎসার প্রয়োজনে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) যেতে পারবেন। এছাড়া দণ্ড স্থগিত থাকাকালীন খালেদা জিয়া চিকিৎসা বা অন্য কোনও প্রয়োজনে দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
এদিকে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার যে ধারায় খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করেছেন; সেখানে দুটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। তাই তিনি চাইলেই দণ্ড স্থগিত থাকা অন্যান্য আসামির মতো চলাচল করতে পারবেন না। সরকারের বেঁধে দেয়া দুটি শর্তের মধ্যেই তার সবকিছু সীমাবদ্ধ থাকবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় পুলিশি নিরাপত্তার কোনো বিধান আইনে নেই। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে তার (খালেদা জিয়া) জন্য পুলিশি নিরাপত্তা রাখা হবে।
প্রসঙ্গত, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ চার জনকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় আদালত৷ এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি আরেকটি মামলায় তাঁকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ তিনি এখন সেই শাস্তি ভোগ করছেন৷
আদালত একইসঙ্গে প্রত্যেকের ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত৷ এছাড়াও ট্রাস্টের নামে ঢাকা শহরের ৪২ কাঠা জমি রাষ্ট্রের মালিকানায় আনার আদেশ দেয়া হয়। তাকে রাজধানীর পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এতদিন তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।
পিএনএস/এএ
মুক্তি পেলেও খালেদা যা করতে পারবেন, যা পারবেন না!
25-03-2020 05:06PM