মুক্ত খালেদা জিয়া ‘ফিরোজা’য় ফিরলেন

  25-03-2020 05:28PM

পিএনএস ডেস্ক: দুই বছর এক মাস ১৬ দিন পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে নিজ বাসভবন ‘ফিরোজা’য় পা রাখলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।

বুধবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে হুইলচেয়ারে করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের ৬ তলা কেবিনব্লক থেকে নিয়ে আসা হয় তাকে। এরপর হাসপাতালে অপেক্ষমাণ ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো-ভ ১১-০৬৯২) করে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’র দিকে রওনা দেন খালেদা জিয়া।

হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় হালকা গোলাপি রঙয়ের শাড়ি পরা খালেদা জিয়াকে দেখা গেছে পুরোনো সেই চশমায়। করোনার থেকে বাঁচতে মুখে ছিল মাস্কও।

খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের জিম্মায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া দেওয়া হয়েছে। ছোট ভাইয়ের একটি প্রাইভেট কারে করে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’র পথে রয়েছেন খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়াকে তার ভাই ভাই শামীম ইস্কান্দার, বোন সেলিনা ইসলাম ও ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বড় বোন শাহিনা খান জামান বিন্দু আনতে যান। বেলা আড়াইটার দিকে তাদের গাড়ি হাসপাতাল চত্বরে ঢোকার পরই কয়েক শ নেতা-কর্মী সেখানে জড়ো হন। স্বজনেরা সেখানে পৌঁছানোর মিনিট দশেক আগে আসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তার দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করে মুক্তির আদেশের নথি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষের হাত ঘুরে বুধবার বিকালে ৩টার পর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পৌঁছায়। এরপর প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম জানান।

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির খবরে মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) বিকেল থেকেই খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’য় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। খালেদা জিয়ার বসবাসের জন্য নতুন করে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তোলা হয় ভবনটি। সেখানে কর্তব্যরতরা জানিয়েছেন, এমনিতেই ভবনটি নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখা হলেও এখন সেটি খালেদা জিয়ার বসবাসের জন্য একদম পরিপাটি করে রাখা হয়েছে।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১-এর উপধারা ১ ধারা অনুযায়ী বয়স বিবেচনায় মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দণ্ড স্থগিত করে ৬ মাসের জন্য বেগম জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়া হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী, মুক্ত থাকাকালীন খালেদা জিয়াকে নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। ওই সময়ে তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।

এর আগে মঙ্গলবাল বিকালে গুলশানে নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বেগম জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে তাকে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দিতে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এর পরই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। বিশেষত, দলীয় প্রধানের মুক্তির খবরে স্বস্তি ফিরে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে।

প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন খালেদা জিয়া। সেখানে তার সঙ্গে রয়েছেন গৃহকর্মী ফাতেমা। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারে পাঠানো হয় খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের ১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গঠিত বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ড কারাগারে গিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। এরপর ৭ এপ্রিল বেলা ১১টা ২০ মিনিটে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হয়। ওইদিন কেবিন ব্লকের ৫১২ নম্বর কক্ষে অবস্থান করেন খালেদা জিয়া। ফের ফিরিয়ে নেওয়া কারাগারে। এরপর ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করতে ও চিকিৎসাসেবা শুরু করতে পাঁচ সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। দুইদিন পর ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর বিকাল পৌনে চারটার দিকে বিএসএমএমইউতে আনা হয় তাকে।

চূড়ান্তভাবে ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করানো হয় তাকে। খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জিলন মিয়া সরকার। তিনি জানান, খালেদা জিয়া ১ এপ্রিল বিএসএমএমইউতে ৬২১ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন আছেন। সেদিন দুপুর ২.১৫ মিনিটে তিনি ভর্তি হন। আর তার পাশের ৬২২ নম্বর কেবিনটিতে কারা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলরা অবস্থান করছেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রথমে পাঁচ বছরের এবং পরবর্তী সময়ে তা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। অন্যদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তার। এই দুই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন