রাত পােহালেই ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনে ভোটের লড়াই

  16-10-2020 04:20PM

পিএনএস ডেস্ক : রাত পোহালেই ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনে উপনির্বাচন। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শনিবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচন উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে এ দুই আসনে। এজন্য প্রতিটি ভোটকক্ষে একটি করে ইভিএম থাকছে, থাকবে কারিগরি দলও। সেই সঙ্গে যে কোনো ধরনের ত্রুটি মোকাবেলায় অতিরিক্ত ইভিএমও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুই উপ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তারা। শুক্রবার বিকালের মধ্যে ইভিএমসহ নির্বাচনী মালামাল সব কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়েছে।

দুটি আসনেই বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত কিছু গণপরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর এ দুটি আসনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি।

আসন দুটিতে নির্বাচনী পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো আশঙ্কাজনক কোনো তথ্য পাইনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সজাগ আছেন বলে জানিয়েছেন। ঢাকা-৫ আসনের নির্বাচন রাজধানী শহরে হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফরিদপুরের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে আশা প্রকাশ সচিব বলেন, বাংলাদেশে তিনশ’ সংসদীয় আসন রয়েছে। এই আসনগুলোর মধ্যেই আমরা ইতোপূর্বে বেশ কয়েকটি নির্বাচন করেছি। কিন্তু কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। ওইদিন ফরিদপুর ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন ছিল, কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এটা একেবারেই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।

চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনে একজন মারা যাওয়ার প্রশ্নে মো. আলমগীর বলেন, ওই ঘটনা আচরণ বিধিমালার মধ্যে পড়ে না। নিজেরা নিজেরা গণ্ডগোল করে একজন মারা গেছে। এটা ফৌজদারি কার্যবিধির মধ্যে পড়ে। সেই হিসাবে পেনাল কোড অনুযায়ী এর মামলা হবে। যিনি মারা গেছেন তার আত্মীয়স্বজন বা পুলিশ মামলা করবে। তিনি বলেন, কোন কোন ঘটনা আচরণবিধির মধ্যে পড়ে তা স্পষ্ট করা আছে। নির্বাচনী কেন্দ্রের ৪০০ গজের বাইরে কোনো ঘটনা ঘটলে তা নির্বাচনী আচরণের মধ্যে পড়বে না। কোনো ব্যক্তি কাকে ভোট দেবে বা দেবে না তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বা গণ্ডগোল করে কেউ মারা গেলে সেটা তো আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে না।

ঢাকা-৫ : হাবিবুর রহমান মোল্লা গত ৬ মে মারা যাওয়ায় শূন্য হয় ঢাকা-৫ সংসদীয় আসন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৪টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬ জন প্রার্থী। তারা হলেন আওয়ামী লীগের কাজী মনিরুল ইসলাম, বিএনপির সালাহ্ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় পার্টির মীর আবদুর সবুর, গণফ্রন্টের এইচএম ইব্রাহিম ভূঁইয়া, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আনছার রহমান শিকদার ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আরিফুর রহমান। এ আসনে ১৮৭টি ভোটকেন্দ্রে ভোটকক্ষ রয়েছে ৮৬৪টি। এতে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭১ হাজার ১২৯ জন; যাদের মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪১ হাজার ৪৬৪ জন ও নারী ২ লাখ ২৯ হাজার ৬৬৫ জন। এ নির্বাচনী এলাকায় ২ জন জুডিশিয়াল ও ২৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দনিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে নির্বাচনী মালামাল বিতরণ করা হয়েছে। ভোটের ফলাফলও দেওয়া হবে এখানেই। ঢাকা-৫ আসনের রিটার্নিং অফিসারের ফল ঘোষণার কার্যালয়ও এখানে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৮, ৪৯, ৫০, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯ ও ৭০ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে এ আসন গঠিত।

ঢাকা-৫ উপ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহতাব উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রার্থীদের প্রচারণা শেষ। ছোটোখাটো অভিযোগ তো থাকেই প্রার্থীদের। তবে বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, ভোটের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইভিএমসহ সব নির্বাচনী মালামাল পৌঁছে গেছে। প্রিজাইডিং অফিসার ও সংশ্লিষ্ট আইন শৃঙ্খলা সদস্যরাও রয়েছেন।

ইভিএমে ভোট হওয়ায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে কারিগরি টিমের সদস্যও থাকবেন বলে জানান তিনি। সাহতাব বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোটের আয়োজন থাকছে। কেন্দ্রে সবার জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী থাকবে, ভোটারদের জন্যও। বাইরে ব্যানারও থাকবে স্বাস্থ্য বিধি নিয়ে। প্রার্থীদের সব ধরণের অভিযোগ আমলে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

নওগাঁ-৬ : ইসরাফিল আলম মারা গেলে ২৭ জুলাই নওগাঁ-৬ আসন শূন্য হয়। তার এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের আনোয়ার হোসেন (হেলাল), বিএনপির শেখ রেজাউল ইসলাম ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির খন্দকার ইন্তেখাব আলম। রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬ হাজার ৭২৫ জন; যাদের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৮ জন ও নারী ১ লাখ ৫২ হাজার ৯৬৭ জন। ভোটকেন্দ্র ১০৪টি ও ভোটকক্ষ ৭২১টি। এ আসনে ২ জন জুডিশিয়াল ও ৩২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

নওগাঁ-৬ আসনের উপ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। ইভিএমে ভোট হওয়ায় প্রতিটি ভোটকক্ষের সমপরিমাণ অতিরিক্ত ইভিএমও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোনোভাবে কেনো কক্ষে ত্রুটি বা সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে তা রিপ্লেস করা বা ত্রুটিমুক্ত রাখার বিষয়ে প্রস্ততি রয়েছে আমাদের। এখন পর্যন্ত কোনো অসুবিধা হয়নি। শুক্রবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইভিএম পৌঁছে গেছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানান, ইভিএমে ভোট হওয়ায় সকাল কোনোভাবেই অনিয়মের সুযোগ নেই। নির্ধারিত সময়ে ইভিএমে উন্মুক্ত করা হবে।

গেল মার্চে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ইভিএমে অনুষ্ঠিত ঢাকা-১০ আসনের উপ নির্বাচনে মাত্র পাঁচ শতাংশ ভোট পড়েছিল। সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলছেন, আতঙ্ক ও নেতিবাচক প্রচারণায় সে সময় ভোট কম পড়েছিল। এখন আগের চেয়ে উপস্থিতিও বাড়বে।

প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা থাকলে ভোটার উপস্থিতিও বাড়বে বলে মনে করেন সিইসি। তিনি বলেছেন, মাঠে ব্যাপকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন যদি না হয়, তখন ভোটারদের অনীহা থাকে।

পিএনএস/এসআইআর


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন