জাতীয় পার্টির এমপির হাত ভেঙে দিতে চান আ.লীগ নেতা

  23-11-2020 08:28AM

পিএনএস ডেস্ক: ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখোকে হত্যা করতে চাওয়া নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের এমপি ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকার হাত ভেঙে দিতে চেয়েছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। সংসদ সদস্যকে নিজ এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনপন্থীরা।

শনিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এক কর্মসূচিতে এই ঘোষণা দেয়া হয়।

গত মঙ্গলবার সোনারগাঁয়ের জি আর ইনস্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ফটকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নাম সম্বলিত ফলক ভেঙে ফেলার ঘটনায় এই বিক্ষোভ বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। যদিও এই ঘটনায় তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে প্রথম থেকেই বলে আসছেন লিয়াকত হোসেন খোকা।

তিনি জানিয়েছেন, ‘যে দিন এ ঘটনা ঘটেছে সেদিন রাতেই আমার বড় বোন মৃত্যূবরণ করেছেন আর শনিবার ভোরে আমার বোনের মেয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি ও আমার পুরো পরিবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ঘটনাটি আমি পরে শুনেছি। কিন্তু কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সময় আমি পাইনি’।

ওই নামফলক ভেঙে ফেলার ঘটনায় সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই এবং এটি তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করে দু’দিন আগেই বিবৃতি দিয়েছে জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি।

তারা দাবি করেন, তৃতীয় পক্ষ বিষয়টি নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে নেমেছে।

শুক্রবার সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সমাবেশে খোকাকে তিন দিনের মধ্যে ক্ষমা চাওয়ার আলটিমেটাম দেয়া হয়েছে।

তবে শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নাম সম্বলিত ফলক ভেঙে ফেলার ঘটনায় তার কর্মীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। এ সময় সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকার কুশপুত্তলিকা দাহ করে আওয়ামী লীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।



পরদিন নারায়ণগঞ্জ শহরের কর্মসূচিতে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমি যদি সোনারগাঁওয়ের সন্তান হতাম তাহলে খোকার হাত ভেঙে দিতাম। খোকা তুমি অনেক বোকা, খোকা তুমি অনেক বোকা। তুমি বুঝতে পারোনি আনোয়ার হোসেনকে।’

ফ্রান্সে মহানবী (সা.) এর কার্টুন প্রকাশ করার জেরে নভেম্বরের শুরুতে দেশটির প্রেসিডেন্ট মাখোঁকে হত্যার ইচ্ছার কথা বলে আলোচনায় আসেন লিয়াকত হোসেন খোকা।

নিজের ওয়ালে শেয়ার করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জে একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলছেন, ‘ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীকে (প্রেসিডেন্ট) বলতে চাই, আজকে তুই যদি আমার সামনে থাকতি, আমি তোকে হত্যা করতাম। হত্যা করে আমি ফাঁসির মঞ্চে হাসতে হাসতে যেতাম।’

মানববন্ধনে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সমালোচনা করে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বলেন, গত ১৭ নভেম্বর এই ঘটনার পরও জেলা পরিষদ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। জেলা পরিষদ এতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান ছাড়াও নির্বাচিত সদস্যরা রয়েছেন, প্রধান নির্বাহী রয়েছেন। তাদের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিও দেওয়া হয়নি। তিনি এ সময় লিয়াকত হোসেন খোকাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আনোয়ার হোসেন আমাদের অভিভাবক, আমাদের গুরু। বড় ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চাওয়া দোষের কিছু নয়। আমি এমপি খোকার প্রতি বিনীতভাবে অনুরোধ করছি আপনি ক্ষমা চেয়ে নেন।

সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, তিনি সজ্ঞানে এই কথা বলেছেন এবং সুযোগ পেলেই মাখোঁকে হত্যা করবেন। মুসলিম তার কথায় অটল থাকে। আমিও আছি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকব।



খোকা বিরোধী সমাবেশ চলাকালে খোকাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণাকরেন আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আনিুসর রহমান দিপু। বলেন, এমপি খোকাকে ক্ষমা চাইতে হবে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছে।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আরজু রহমান ভূইয়া, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জিএম আরমান, আহসান হাবীব, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. মাহমুদা মালা, জিএম আরাফাত, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. আতিকুজ্জামান সোহেল প্রমুখ।

মঙ্গলবার নভেম্বর জেলা পরিষদের অর্থায়নে সোনারগাঁ জিআর ইনিস্টিটিউট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান ফটক ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণকাজের নামফলক ভেঙে ফেলা হয়। নামফলকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের নাম ছিল। অভিযোগ ওঠে, স্থানীয় সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার নির্দেশ এ কাজ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগে ক্ষোভ দেখা দেয়।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন