প্রেস ক্লাবে বিএনপির সমাবেশে আসেননি শীর্ষ নেতারা

  17-02-2021 02:48PM

পিএনএস ডেস্ক: বাংলাদেশ জাতীয়তাবদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। তবে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ-উত্তর) বিএনপি আয়োজিত এ সমাবেশে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং ভাইস চেয়ারম্যান পর্যায়ের কেউ ছিলেন না। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে চেয়ারপারসনের দুইজন উপদেষ্টা, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও একজন যুগ্ম মহাসচিব উপস্থিত ছিলেন।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ১০ টায় শুরু হওয়া এ সমাবেশে সমাবেশে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সরব রয়েছে পুলিশ। তাই প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকার প্রতিটি মোড়ে বসানো হয়েছে পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি চৌকি।

গত সমাবেশে পুলিশের হাত থেকে দলীয়কর্মী ছিনিয়ে নিয়ে আলোচনায় আসা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন আসেননি আজকের সমাবেশে। গত সমাবেশের প্রধান অতিথি ড. খন্দকার মোশররফ হোসেন, বিশেষ অতিথি গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, পুলিশের পিটুনির শিকার দলের ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেনও আসেননি আজকের সমাবেশে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দীন আলাল, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোস্তাফিজুর রহমান, ফখরুল ইসলাম রবিন, নিপুণ রায় চৌধুরী প্রমুখ।

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমি পুলিশকে বলবো, যেসব মোড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের আটকে রেখেছেন, দয়া করে তাদের ছেড়ে দেন। না হলে এর ফল ভাল হবে না।

আব্দুস সালাম বলেন, ‘জিয়াউর রহমানে খেতাব কারও দয়ায় পাওয়া নয়। এটা তিনি অর্জন করেছেন। এ দেশের জনগণ তাকে এই খেতাব দিয়েছে। এটি কেড়ে নেওয়ার এখতিয়ার কারও নেই। সরকারকে আমি অনুরোধ করব, এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন না, যাতে করে আগামী দিনে বিএনপির সঙ্গে আপনাদেরকেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য মাঠে নামতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘আজকে পুলিশের অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে পুরো রাজধানী বিএনপির দখলে। এভাবেই কি আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে পারবেন? আর কয়েকদিন পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও বলবে আওয়ামী লীগের দরকার নেই, তারা চোর। তাই বলব এখনই অবস্থার অবসান করেন।’

আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘বিগত ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ২৯ তারিখ রাতে ডাকাতি করা হয়েছে। আজকে এজন্য এই সরকার বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, সেক্টর কমান্ডার, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বীর উত্তম, রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আমরা বলেছি, এই সরকার যদি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের চিন্তা করে তবে এই সরকার জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। এই সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই, এই সরকারের সঙ্গে জনগণ নেই। এই জন্যই এই সরকার জনগণকে ভয় পায়।’

আমান বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি পালিয়ে বেড়াচ্ছে। যে বিচারক সুষ্ঠু রায় দেয় তাকেই আজকে দেশ ছাড়তে হচ্ছে। এই সরকার সংসদকে ধ্বংস করে দিয়েছে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে।’

তিনি বলেন, আজকে সরকার প্রধান থেকে শুরু করে মন্ত্রিপরিষদে যারা রয়েছেন, এমপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী তারা আজ লুটপাট করছে। বিভিন্ন পৌরসভা, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কিভাবে এই সরকার ভোট ডাকাতি করছে, কিভাবে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনগুলোতে ভোট ডাকাতি করছে সেগুলো আপনারা দেখেছেন। সুতরাং এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সুষ্ঠু নির্বাচন পেতে হলে সব দল ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে এবং এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।

বিএনপির এ নেতা আরো বলেন, আমরা ৯০-এর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকারকে উৎখাত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো। আমরা এই সরকারকে আর কোনো নির্বাচনের সুযোগ দেব না। আবার আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আসবেন? এটা বাংলাদেশে হতে পারে না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নেমে একদফা আন্দোলনে শরিক হতে হবে এবং সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ সময় তিনি গ্রেফতার সব নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘যে শাহজাহান খান আজ জিয়াউর রহমানের খেতাব কেড়ে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে, সেই শাহজহান খান কেবল খেতাব নয়, প্রধানমন্ত্রীর জীবনের জন্য হুমকিও হতে পারে। কারণ, ৭২-৭৫ আওয়ামী লীগের লোকজনদের খুঁজে খুঁজে মেরেছে এই শাহজাহান খান। কারণ, তিনি তো গণবাহিনীর নেতা।’

‘যে লোকের কোনো সভ্যতা, ভদ্রতা, নম্রতা জানা নেই, সেই শাহজাহান খান ‘খেতাব’ কেড়ে নেবে না তো কে কেড়ে নেবে? ডাকাতের কোনো মনুষত্ব থাকে? তো শাহজাহান খানের মতো একজন ডাকাত জিয়াউর রহমানে খেতাব তো কেড়ে নেবেই’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।

বুধবার কাল থেকেই বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা ব্যানার নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিলসহ প্রেসক্লাবে জড়ো হতে শুরু করেন। সমাবেশ শুরু হওয়ার একটু পর থেকেই নেতাকর্মী‌দের প্রেসক্লাব এলাকায় প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে পুলিশ।

প্রেসক্লাবের আশপাশের এলাকায় পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে সাধারণ মানুষের পরিচয়ও জানতে চাওয়া হচ্ছে। এ সময় সাংবাদিক ছাড়া কাউকে প্রেসক্লাব এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। মৎস্য ভবন, কদম ফোয়ারা, শিক্ষা ভবনের সামনে ও সচিবালয় আশেপাশের প্রতিটি মোড়ে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সচিবালয়ের লিংক রোডের মাথায় পুলিশ কাউকেই সমাবেশস্থলে ঢুকতে দিচ্ছে না। সমাবেশ এলাকাগুলোতে যান চলাচল সীমিত আছে।

সেগুনবাগিচার বাসিন্দা মুন্সি ওমর ফারুক আহমেদ বলেন, একটু শিক্ষা ভবন যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ যেতে দেয়নি। তাই পথ ঘুরে এখন গুলিস্তান এলাকা দিয়ে যেতে হবে।

নিরাপত্তার বিষয়ে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, বিএনপির আগের সমাবেশে সংঘর্ষ হওয়ায় পুলিশ খুব সুসংগঠিতভাবে আছে। ওইদিনের তুলনায় আজ পুলিশ সদস্যের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশের শেষের দিকে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একই ইস্যুতে ওইদিন সমাবেশ ডাকে দলটি।

সমাবেশের শেষের দিকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেনের বক্তৃতা শেষ হওয়ার আগে সেখানে যান চলাচল স্বাভাবিক করা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এর মধ্যেই সমাবেশের পাশ থেকে ইট ছুঁড়ে মারা হলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে বিএনপির কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন