আল-জাজিরাকে পাল্টা জবাব দিতে সরকার ব্যর্থ: আমীর খসরু

  19-02-2021 04:40PM

পিএনএস ডেস্ক: প্রায় পাঁচ বছর ধরে কারাবন্দি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর মুক্তি দাবি করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে আইনের শাসনের নামে যে অপশাসন চলছে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আসলাম চৌধুরী। তাকে নিয়ে যে অন্যায় চলছে, সেটা একদিন আল-জাজিরার মতো বিশ্বের সব সংবাদমাধ্যমে খবর হয়ে উঠে আসবে। এজন্য সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।’

শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে এক সংবাদ সম্মেলনে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকে এখন মাফিয়া রাষ্ট্র বললে ভুল হবে না।’

২০১৬ সালের ১৫ মে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন আসলাম চৌধুরী। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘বাংলাদেশের সরকার উৎখাত ষড়যন্ত্র করার’ অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আসলাম চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আসলাম চৌধুরীকে নিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে যা হচ্ছে তা যদি আমরা পুরোপুরি জানতে পারি ও বিশ্লেষণ করি তাহলে বোঝা যাবে দেশে আসলে কী হচ্ছে। তাকে গ্রেফতারের পর দফায় দফায় মাসাধিককাল রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার ধারা যদি আপনারা দেখেন, তাহলে বুঝতে পারবেন কত বড় মিথ্যাচার ও জুলুম আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে করা হয়েছে।’

শতাধিক মামলায় আসলাম চৌধুরীকে গ্রেফতারের তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছিল, তাতে কিন্তু ছয় মাসের মধ্যেই জামিন পেয়ে গেছেন। কিন্তু তাকে মুক্তি না দিয়ে শতাধিক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। জামিন নিতে গেলে সরকার বারবার সময়ের আবেদন করে। এর অর্থ হচ্ছে তাকে জেলে আটকে রাখা। এভাবে শুধু সময়ের আবেদন করে আসলাম চৌধুরীকে অন্যায়ভাবে পাঁচ বছর ধরে জেলে আটকে রাখা হয়েছে।’

সব মামলায় জামিনের পর মুক্তির আগমুহূর্তে নতুন আরেক মামলায় গ্রেফতার দেখানোর তথ্য দিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘জজ কোর্ট, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট থেকে পাঁচ বছর পর সে সব মামলায় জামিন পেল। সবশেষ মামলায় জামিন পাওয়ার পরও গত ৩ জানুয়ারি তাকে আবার আট বছর আগের ঢাকার শাহবাগ থানার একটি নাশকতার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। ওই মামলায় সে আসামিও ছিল না। আদালতে আবেদন করে পুলিশ তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখায়। তিন দিনের রিমান্ডে নেয়। কিন্তু একদিন জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি দুই দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একমাসের সময় চেয়ে আদালতে আবেদন করে।’

‘এভাবে আসলাম চৌধুরীর মুক্তি আটকে দেওয়া হচ্ছে। এভাবেই সে পাঁচ বছর ধরে জেলে আছে। যদিও কোনো মামলায় তার সাজা হয়নি, কিন্তু জেল আইনে সে কিন্তু ছয় বছর সাজা এরই মধ্যে ভোগ করে ফেলেছে। এটা তো আইনের শাসন না। তার যদি সাজাও হতো, তাহলেও তো তাকে এতদিন কারাগারে থাকতে হতো না,’— বলেন খসরু।

তিনি বলেন, ‘আসলাম চৌধুরী একজন সিনিয়র রাজনীতিবিদ, একজন চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, শিক্ষিত ভদ্রলোক। তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব। তিনি বাংলাদেশের একজন সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা। আসলাম চৌধুরী দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। উনার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় বিএনপি অনেক শক্তিশালী হয়েছে। এর পরিণামে তিনি ক্ষমতা দখলকারীদের আইনের অপশাসনের শিকার হয়েছেন। তার সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক, নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তার মতো একজন মানুষকে বিভিন্ন অভিযোগে শতাধিক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।’

‘বাংলাদেশে রাজনীতির নামে যে অপরাজনীতি, শাসনের নামে যে অপশাসন চলছে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা যে প্রতিনিয়িত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন, তার একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আসলাম চৌধুরী। আসলাম চৌধুরী যদি অপরাধ করে, স্বচ্ছভাবে তার বিচার হোক। কিন্তু তার যে নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, এর বিচার আমরা কিভাবে পাব? এখন তো বিচার পাওয়া দূরের কথা, বিচার চাওয়াও মুশকিল হয়ে গেছে,’— বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

দেশে আইনের শাসন না থাকার অভিযোগ করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা আরও বলেন, ‘যারা ক্ষমতা দখল করে আছে, আমি তাদের সরকার বলি না, এরা একটা রেজিম। কিছু সরকারি কর্মকর্তা, কিছু ব্যবসায়ী আর কিছু রাজনীতিবিদ মিলে ক্ষমতায় থাকার জন্য আদালত-পুলিশকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে এই রেজিম তৈরি করেছে। একটা মানুষের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দেওয়া— এটা ভাবা যায়? দেশটা দখলের জন্য তারা কী না করছে! বেআইনিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গুম-খুন-মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, মানুষকে জেলে ভরে রাখছে— আইনের শাসনের নামে এই অপশাসনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে আসলাম চৌধুরী।’

দেশ মাফিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আল-জাজিরাতে মানুষ দেখেছে কিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য, পরিবারতন্ত্র ধরে রাখার জন্য, দুর্নীতি-লুটপাট চালানোর জন্য কিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হচ্ছে— এটা আলজাজিরার প্রতিবেদনে প্রমাণ হয়েছে। দেশে এখন ভাগযোগের মহোৎসব চলছে, অর্থের ভাগযোগ, ক্ষমতার ভাগযোগ। আর এর অন্যতম ভিকটিম আসলাম চৌধুরী। এ ধরনের কর্মকাণ্ড মাফিয়া রাষ্ট্রের সংজ্ঞাতেই পড়ে। এ দেশকে এখন মাফিয়া রাষ্ট্র বললে ভুল হবে না। এটা সত্যিই মাফিয়াদের রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।’

আসলাম চৌধুরীকে নিয়ে কর্মকাণ্ডও একদিন আল-জাজিরার মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে আসবে বলে সতর্ক করেন সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যারা আসলাম চৌধুরীকে মামলা দিয়ে, আদালতে সময়ের আবেদন করে, নানা কৌশলে জেলে রাখছেন, তারা এই প্রক্রিয়া থেকে সরে আসুন। আসলাম চৌধুরীকে নিয়ে যা হচ্ছে, আল-জাজিরার মতো বিশ্বের সব জায়গা থেকে একদিন সেটা খবর হয়ে উঠে আসবে। সেদিন আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে। সুতরাং তার নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিন। তাকে মুক্তি দিন। বিশ্ব খুব ছোট হয়ে গেছে। বিশ্বের দৃষ্টিগোচরের বাইরে খুব বেশিদিন থাকা সম্ভব না। আজ না হয় কাল— দায়ভার ভোগ করতেই হবে। বাংলাদেশে অনেকেই এভাবে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছে, শেষ রক্ষা হয়নি। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্ষমতা দখল করে টিকে থাকা যায় না।’

আসলাম চৌধুরীর মুক্তির জন্য কোনো আলটিমেটাম ও আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয়ে গেছে। জেলায় জেলায় তো আমরা কর্মসূচি শুরু করে দিয়েছি। দিনক্ষণ বলে আন্দোলন হবে না। যখন যা প্রয়োজন আমরা সময়মতো করব। রাজনৈতিক দল আর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই এক না। আমরা তো কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি না, আমাদের তো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে।’

‘বাংলাদেশের জনগণ সবসময় নিজের পথ বেছে নিয়েছে। ১৯৭১ সালে নিয়েছে, ভাষা আন্দোলনের সময় নিয়েছে, এরশাদের বিরুদ্ধে নিয়েছে, ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও নিয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনে যারা ছিল, জনগণ যখন সংগঠিত হয়ে আন্দোলন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন তারা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছিল। সুতরাং জনগণ এবারও পথ বেছে নেবে,’— বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, নগর কমিটির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন