কারাবন্দী অবস্থায় মুশতাককে হত্যা করা হয়েছে: ফখরুল

  26-02-2021 05:41PM

পিএনএস ডেস্ক: গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে কারাবন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংগতি-অসংগতি, নিয়ম-অনিয়ম, কীর্তি-অপকীর্তি ইত্যাদি বিষয়ে স্বাধীনচেতা মানুষের অভিমত, বিশ্লেষণ ইত্যাদি প্রকাশের সুযোগ আজ গণতান্ত্রিক বিশ্বে সর্বজনস্বীকৃত।’


‘কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী সরকার তাদের অপকর্ম ও ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কোন ধরনের সমালোচনা যাতে প্রকাশ না হয়ে পড়ে সে জন্য নানা কালাকানুনের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে মন্তব্য লেখা বা পোস্টকে কোনোভাবেই বরদাশত করছে না। যারা স্বাধীনভাবে উক্ত মাধ্যমে নিজের মত প্রকাশের চেষ্টা করছে তাদের জীবনে নেমে আসছে এক ভয়ংকর দুর্বিষহ পরিণতি। হয় তাদের গুমের শিকার হতে হচ্ছে নতুবা সরকারি হেফাজতে প্রাণ দিতে হচ্ছে। তার সর্বশেষ নির্মম শিকার হলেন মুশতাক আহমেদ।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মূলত মুশতাক আহমেদের ওপর কারাগারে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মুশতাক লুটপাটকারী কিংবা কালোবাজারি, সন্ত্রাসী ও ডাকাত ছিলেন না, বরং ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের মেধাবী ছাত্র মুশতাক আহমেদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চিন্তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে গিয়ে অকালে তার জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দেওয়া হলো। মুশতাকের এই নির্ভীক আত্মদানের মধ্য দিয়েই দেশের তরুণ সমাজ জেগে উঠবে এবং দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক স্বাধীনতাসহ সুশাসন ও আইনের শাসন ফিরে আসবে। মুশতাক একজন সৎ ও সাহসী মানুষ ছিলেন, তিনি চিরদিন অধিকারহারা মানুষের নিকট প্রেরণার আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন। তিনি দেশবাসীর প্রার্থনা, চেতনা ও অনুভবে চিরদিনের জন্য বিরাজ করবেন।’

‘দেশে আইন-কানুন, সুষ্ঠু বিচারিক ব্যবস্থা না থাকার কারণেই সারা দেশে এক শ্বাসরোধী পরিবেশ বিরাজ করছে। মানুষের জানমালের কোন নিরাপত্তা নেই। সারা জাতির ওপর ঘোর দুর্দিন নেমে এসেছে। দেশে এখন নব্য বাকশালি শাসন জারি রাখা হয়েছে, যাতে কেউ টু শব্দ করতে না পারে। মানুষকে নিঃশব্দ করতেই গুম, খুন, ক্রসফায়ার, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুকে রাষ্ট্রীয় জীবনের অনুষঙ্গ করা হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে সত্য সমালোচনাতেও তারা আঁতকে ওঠে। রাষ্ট্রের সকল অঙ্গকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে রূপান্তর করা হয়েছে। নিষ্ঠুর একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের সকল বৈশিষ্ট্য এখন ফুটে উঠেছে। রাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে মাফিয়া রূপ ধারণ করেছে। সরকার নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে দেশে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতে দ্বিধা করছে না। সরকারের এই রক্তঝরা কর্মসূচির প্রধান শিকার হচ্ছে বিরোধী দল, মত ও স্বাধীন চিন্তার মানুষেরা। নজিরবিহীন অপশাসন ও কুকীর্তি নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনার যে ঝড় বইয়ে যাচ্ছে সেটি মানুষের দৃষ্টি থেকে ভিন্ন দিকে সরাতেই জাতীয়তাবাদী শক্তিসহ বিবেকবান, স্বাধীনচেতা অনলাইন ব্লগার ও লেখকদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। তবে এই দুর্বিনীত দুরাচারের পরিণতি হবে ভয়াবহ। মুশতাকের এই মৃত্যুতে সারা দেশের সর্বস্তরের মানুষ ক্ষোভে-বেদনায় ফেটে পড়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মুশতাকের মতো একজন অরাজনৈতিক, নিরীহ এবং নিজস্ব চিন্তায় স্বায়ত্তশাসিত ফেইসবুকে ফ্রিল্যান্স লেখকের মৃত্যু কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়, এর সাথে রাষ্ট্রশক্তি জড়িত। সরকারি হেফাজতে কারাগারে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। পাশাপাশি মুশতাক আহমেদের কারান্তরীণ অবস্থায় মৃত্যুতে স্বচ্ছ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করার দাবি করছি। মুশতাক আহমেদের শোকাহত পরিবার-পরিজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’

পাশাপাশি গত বছর মে মাসে মুশতাক আহমেদের সঙ্গে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে আটক করে এখনো কারাবন্দী করে রাখার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি অবিলম্বে কিশোরের মুক্তি দাবি করেছেন।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন