কাদের কি ফখরুলের মামলা প্রত্যাহারে ভূমিকা রাখবেন?

  25-10-2016 12:17PM


পিএনএস ডেস্ক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জন্য আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কি কোনো উদ্যোগ নিতে পারবেন? দুজনেরই দলীয় রাজনীতির বাইরে ক্লিন ইমেজ রয়েছে। দুজনেই বক্তব্যে ব্যক্তিগত আক্রমণ, আক্রোশ, অশালীন ভাষা থাকে না। দুজনই পরিশিলীত রাজনীতির ভাষায় প্রতিপক্ষকে অনেক শক্তভাবে বড় কথা বলার কায়দা জানেন। দুজনই নিজ নিজ দল ও নেত্রীর প্রতি আনুগত্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ইতিবাচক রাজনীতি করেন।
14826200_1161421457278672_1ওবায়দুল কাদের একজন আদর্শ শিক্ষকের সন্তান। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শিক্ষকতা পেশা থেকেই বিএনপির রাজনীতিতে এসেছেন। ছাত্র জীবনে বাম ঘরণার রাজনীতি করতেন। ওবায়দুল কাদেরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ছন্দপতন নেই। ডানে বায়ে তাকানো নেই। সেই যে ৬৯ এর ছাত্র আন্দোলনের ভিতর দিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অভিষেক ঘটিয়ে ছিলেন, তারপর তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রাখার অপরাধে ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর টানা আড়াই বছর কারা যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। সেই সময় কারাগারে থেকেই ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ছাত্রলীগের রাজনীতি শেষে সাংবাদিকতা করেছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার অভিভাবকত্বে যেমন কাজ করেছেন তেমনি ছাত্রলীগের দেখাশুনা করেছেন দক্ষতার সঙ্গে।

বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদকে পরাজিত করে শেখ হাসিনার সরকারে তিন তিনবার সফল মন্ত্রী হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। ওয়ান ইলেভেনে কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন। এত নির্যাতন ভোগ করেও তার রাজনীতির গতিপথে, আচরণে, কথাবার্তায় কারো প্রতি আক্রোশ, হিংসা, বিদ্বেষের বশবর্তী হতে দেখা যায়নি। তিনিও রাজনীতিতে বরাবর ইতিবাচক সুস্থ ধারার কথাই বলে আসছেন।

বিএনপিতে শুভ চিন্তার বা শুভ শক্তির হয়ে যারা কাজ করেন, মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা রাখেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, শামসুজ্জামান দুদু, এ্যাড. রুহুল কবীর রিজভীরা অন্যতম। আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কথাবার্তায়, আচরণে ইতিবাচক এ্যাড. মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছিলেন, তারা আর্শবাদ, ভালোবাসা ও সমর্থন জানাতে উদ্বোধনী অধিবেশনে যাচ্ছেন। কিন্তু সবাই জানেন, বিএনপির অভ্যন্তরে একটি কালো শক্তি বরাবরই এমন কাজ করে আসছে যা বিএনপির নেতৃত্বকে বিভ্রান্তই করেনি, বিএনপির রাজনীতিকে কলংকিতই করেনি, হটকারী পথে ঠেলে দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিপদগ্রস্তই করেই দলটির সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল করেছে।
আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ওবায়দুল কাদেরসহ অসংখ্য নেতা রয়েছেন যাদের প্রতি মানুষের বিশ্বাস রয়েছে যে তারা কখনোই নাশকতার রাজনীতি করতে পারেন না। তেমনি বিএনপিতে যাদের ওপর এই আস্থা, বিশ্বাস রয়েছে তাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, শামসুজ্জামান দুদু, রুহুল কবীর রিজভীদের নাম ওঠে আসে।

ওবায়দুল কাদের রাজনৈতিক জীবনে অনেকবার মন্ত্রী হয়েছেন। গৌরবময় ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হওয়ার পর এবার স্মরণকালের বৃহত্তম ও বর্ণাঢ্য সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন, সর্বক্ষেত্রে তার অতীত ও বর্তমান সাফল্যে। তিনি আগামী নির্বাচন উপযোগী সংগঠনকে শক্তিশালী করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। দলের গুণগত পরিবর্তনের কথা বলেছেন। গোটা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন না এলে একটি বৃহৎ দলে গুণগত পরিবর্তন আনলেও তার আলো জাতীয় জীবনে খুব একটা বিচ্ছুরিত হবে না।

অন্যদিকে, বিএনপির মতো দল আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে বা নির্বাচনে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা না গেলে গণতন্ত্রের জন্য তার সৌন্দর্য ও রূপ উপভোগ করা যাবে না। বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর ৮৬ টি মামলা রয়েছে। রুহুল কবীর রিজভীর ওপর রয়েছেন ৫০ টির মতো। এসব মামলা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক কিনা, সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মানবিক বিবেচনায় কোন উদ্যোগ নেয়া যায় কিনা, সেই চিন্তা ওবায়দুল কাদের করবেন কিনা?

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শুধু একটি দলের নেতাই নন; একজন জাতীয় নেতাও। জাতীয় রাজনীতিকে সৌহার্দ্য-সম্প্রতির পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে আমাদের প্রত্যাশা, উচ্চতা তার কাছে অনেক থাকতেই পারে। একুশের গ্রেনেড হামলা রাজনীতিতে যেরকম আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা শেষ করে দিয়েছে সেটি সবাই উপলব্দি করছেন। সেই গ্রেনেড হামালর স্লিন্টার ওবায়দুল কাদেরের গায়ে এখনো রয়েছে। বিএনপির অভ্যন্তরে যে অশুভ শক্তি আজকের প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের গণতান্ত্রিক সমাবেশ থেকে গ্রেনেড হামলায় উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল সেটি বর্বর ও মানবতা বিরোধী অপরাধ। এই ধরনের ঘটনা বিএনপির অভ্যন্তরে একটি বড় অংশ কথনোই সমর্থন করেনি। গোটা দেশের মানুষের সঙ্গে তারাও সেদিন বাকরুদ্ধ, স্তম্ভিত হয়েছে।

বিএনপি এখন আর নির্দলীয় তত্ববধায়ক সরকার চাইছে না। বর্তমান সরকারকেও কবুল করে নিয়েছে। তারা নির্বাচন কমিশন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথাই ভাবছে। এমনি অবস্থায় বিএনপির শুভ শক্তিকে আস্থায় নিয়ে আসতে ওবায়দুল কাদের কি পদক্ষেপ নিতে পারেন? বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ইতিবাচক, সুস্থধারার রাজনৈতিক নেতাদের নামে যেসব রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা রয়েছে তা প্রত্যাহার করার উদ্যোগ নিতে পারেন।

রাজনৈতিকভাবে যতটা বিবেচনা করা যায়, ততটা বিবেচনা করার উদ্যোগ যদি ওবায়দুল কাদের নেন, রাজনীতিতে যে তিক্ততা, বৈরীতা চলছে তার অবসান ঘটে সেখানে সুবাতাস বইতে পারে। যা আগামী জাতীয় নির্বাচন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও সরকারের উন্নয়নে বিরোধীদলের সহযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত হতে পারে।

আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে শুভ অভিনন্দন জানিয়ে, সফলতা প্রত্যাশা করে বিনয়ের সঙ্গে প্রশ্ন রাখছি, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরদের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিবেন কিনা?
লেখক: পীর হাবিবুর রহমান

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন