পূজার ধর্ষককে ক্রসফায়ারে কেন নয়?

  29-10-2016 11:26AM

পিএনএস ডেস্ক: দিনাজপুরের পার্বতীপুরের পূজা দাসকে নিয়ে যতবার ভাবছি, মনটা বিষাদে ছেয়ে যাচ্ছে। এমন নিষ্ঠুর আর বিকৃত হয় মানুষ! পাঁচ বছর বয়সী এতটুকুন একটি বাচ্চা মেয়ে তাকে দেখলেও পুরুষের কাম জাগ্রত হয়! শরীরে নারীত্বের লক্ষণ তো দূরের কথা কাপড় পরা শরীরে ছেলে-মেয়ে তফাৎ টুকুও বুঝার কথা নয়। অথচ একজন নয়, দুজন বীভৎস পুরুষ মেয়েটিকে ছিঁড়ে খুঁড়ে খেলো কী সুখ পেল তারাই জানে। মেয়েটির সমস্ত গায়ে হিংস্র নখর, কামড়ের দাগ দিয়েই ক্ষ্যন্ত হয়নি ছুরি দিয়ে কেটে কুটে একাকার করেছে। জেগে উঠলেই মেয়েটি ভয়ে আতঙ্কে যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছে, কাঁদছে কেবলই। অতটুকুন একটি কোমল শরীর দুটো নরপিশাচের বাসনা তৃপ্ত করেছে। ওর যৌনাঙ্গই কেবল ক্ষতবিক্ষত হয়নি, পুরো প্রজননতন্ত্রসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গও ঠিকভাবে কাজ করছে না। ডাক্তাররা পর্যন্ত বিস্ময়ে হতবাক, বিমুঢ় একেবারে। মানুষ এতটা নৃশংসও হতে পারে! এই মুহূর্তে অপারেশন করা যাচ্ছে না, কারণ ওই এলাকার মাংসে পচন ধরেছে। মেয়েটি বেঁচে থাকবে কিনা নিশ্চয়তা নেই, বেঁচে থাকলেও ভবিষ্যতে মা হওয়া এবং অন্যান্য শারীরিক সক্ষমতা অনিশ্চিত। মেয়েটির শরীরের ক্ষত শুকিয়ে গেলেও মানসিক ক্ষত বয়ে বেড়াতে হবে চিরকাল। অথচ মেয়েটি পাশের বাড়িতে থাকা সাইফুল নামক ৪২ বছর বয়সের ৪ সন্তানের জনক ওই দানবটিকে আব্বু সম্বোধন করতো। ওই দানব হয়তো নিজের কন্যাদেরও ধর্ষণ করতে চাইতো। তাইতো স্ত্রী বড় কন্যার বিয়ের পর ছোট কন্যাদ্বয়কে নিয়ে পৃথক বসবাস করতে বাধ্য হয়েছে। সমাজে লোকলজ্জার ভয়ে জানায়নি কাউকেই।

কি বলবো দানব, নরপিশাচ, জানোয়ার সমস্ত বিশেষণই বুঝি কম হয়ে যাচ্ছে ওই বিকৃতকাম বর্বর হিংস্র পশুর জন্য। সবাই সাইফুলের মৃত্যুদণ্ড চাচ্ছে। কিন্তু আমি ভাবছি মৃত্যুদণ্ডও বুঝি কম হয়ে যায়। ওর বিশেষ অঙ্গটিকে শীল দিয়ে থেঁতলে দিলে কেমন হয়? মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী এ বছরই শিশুদের বলাৎকার, পর্নগ্রাফি, যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৭৫৪ জন শিশু। আসলে নৈতিক অবক্ষয়, বিচার হীনতার সংস্কৃতি এমন নির্মম নির্যাতনকে বহুলাংশে উৎসকে দিচ্ছে। যদি একজন ধর্ষককেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেত তবে অন্য অপরাধীরা সাহস করতে পারতো না আর। প্রতিনিয়ত ক্রসফায়ারে কত শত অপরাধী মারা পড়ছে, এদের জন্য ক্রসফায়ারের ব্যবস্থা হচ্ছে না কেন? প্রয়োজনে সৌদি আরবের মতো পাথর নিক্ষেপ করে জনসম্মুখে এদের কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেইসাথে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তবেই না আমাদের পূজারা নিরাপদে নিশ্চিন্তে বড় হতে পারবে।

ছোট্ট শিশুদের বাবা-মাকেও সাবধান হতে হবে। বুঝতে হবে সাইফুলের মতো নরপিশাচ আমাদের আশেপাশেও ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেবল ভ্যানচালক অসহায় দরিদ্র পিতার কন্যাসন্তানই নয়, ধনী পিতার আদরের দুলালীরও একই অবস্থা হতে পারে। তাই নিজের শিশুকে বুঝতে শিখামাত্রই সাবধান করতে হবে সম্মুখ বিপদ থেকে। বয়স যাইহোক সব পুরুষকেই আপন বা নিরাপদ ভাবার কোনো কারণ নেই। প্রয়োজনবোধে নিজের নিকট আত্মীয় পুরুষটিকেও নয়। হোক সে আপনার বাবা, চাচা, খালু কিংবা ফুপা। না জেনে নিজের শিশুকে অন্য কোনো পুরুষের সাথে একা ছাড়া উচিত নয় কখনো। কারণ বাহ্যিক আবরণে বুঝার উপায় নেই- কোন পুরুষটি প্যাডোফাইল অর্থাৎ শিশুদের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করে কিনা। প্যাডোফাইল এক ধরনের অসুস্থতা, যাতে করে পুরুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে শিশুদের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করে। আর শিশুটিকে জানাতে হবে সব স্পর্শই আদর নয় এবং সব অঙ্গে স্পর্শের অধিকারও সবার নেই। স্পর্শকাতর অঙ্গ সম্বন্ধে নিষ্পাপ অবুঝ শিশুকে সাবধান করতে হবে সবার আগে। দুঃখজনক হলেও এটাই নির্মম সত্য- এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আপনার শিশুকে নিরাপদ ভাবার কোনো কারণ নেই। চেষ্টা করতে হবে- শিশুর সুন্দর শৈশব ব্যাহত না করে স্বাভাবিকভাবে বাড়তে দেওয়া। জানতে চেষ্টা করুন আপনার আড়ালে আদরের ছলে কিংবা খেলার ছলে আপনার অবুঝ শিশুটি কোন যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কিনা। সময় এখন লজ্জা পাওয়া বা লুকোবার নয়, সময় এখন জানাবার, সচেতন আর সাবধান হওয়ার। নিজের শিশুটিকে সুরক্ষার দায়িত্ব কেবলই আপনার, এক্ষেত্রে কারো সাথে কোনো আপোষ নয়।

।। খুজিস্তা নূর ই নাহরীন মুন্নী।।
লেখক: সাবেক পরিচালক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন