পিএনএস, (মো: রুহুল আমীন চৌধুরী): প্রায় দু দশকেরও বেশী সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় যেভাবে হিংসাত্মক আক্রমন ও অসাদাচরণ জাতীকে বিভ্রান্ত, বিবেকহীনতা বৃদ্ধি, মানবতাবর্জন একে অপরের প্রতি মমতাবোধ বিশর্জন, নির্যাতন হত্যা ও গুমসহ রক্ত সম্পর্ককেও অস্বীকার করার মতো অবস্থা সৃষ্টি করেছে। মোট কথা বলতে গেলে আদিম যুগকেও হার মানানোর অবস্থা দেখা দিয়েছে।
স্বাধীনতার ৪২/৪৩ বছর পরও আমাদের রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় এবং সামাজিক চিত্র সর্বসাকৃল্যে একটি আতঙ্কগ্রস্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। যে অপরাজনীতি ও অপসংস্কৃতি আমদের আক্রান্ত করেছে তা বিশ বাইশ বছর আগেও এমন ছিল না।
আজ বর্তমান প্রজম্মের কাছে বললে অবাক লাগবে। আমাদের বাবা কাকারা এক টুকরো জমি বা ভিটিবাড়ী নিয়ে অসন্তোস দেখা দিলে আদালতের স্বরনাপন্ন হতেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো মামলার ধার্য তারিখে এক ভাই অপর ভাইকে ডেকে বলতেন কোর্টে নৌকায় যাবে না অন্য বাহনে যাবে। এমনি অবস্থায় কেউ কেউ জিজ্ঞেস করতেন, কি ব্যাপার ভাইয়ে ভাইয়ে মামলা চলছে, আবার ডাকাডাকি কেন? উত্তরে ভাই বলতেন মামলার রায় দিবে আদালত। জমি হয়তো আমি পাবো না হয় ভাই পাবেন। আমরা ভাই-ভাই তো ঠিক আছি।
বলার অবকাশ রাখেনা, গণতান্ত্রিক নিয়মানুযায়ী নিজ নিজ পছন্দ মতো দল বাছাই করে নিবে এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় একেকজন একেক দলের সমর্থন থাকতে পারে। কিন্তু ভাই অন্য দল করে কেন তাকে ভাই বলা যাবে না। রাজনীতি ও সামাজিত চিত্র তো এমন ছিল না। এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় যাহা বুঝতে ও জানতে পারলাম, পবিত্র রাজনীতিতে অরাজনৈতিক অবৈধ অর্থশালী আমলা সন্ত্রাসী অন্য দল করে কেন? অসুস্থ হলে সেবা করা যাবে না। অন্য দল করে কেন? মরে গেলে জানাজায় যাওয়া যাবে না। এমন ঘটনা ও বাংলার মাটিতে গত দু যুগে ঘটেছে। অন্যদের সাথে সম্পর্কের কথা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। এই হলো তথাকথীত রাজনীতি ও অপসংস্কৃতির চিত্র। আমাদের ও প্রভাবশালীদের অনুপ্রবেশের কারণে রাজনীতি ও গণতন্ত্রে ধস নেমেছে।
দলীয় রাজনীতিক কেন্দ্রে অযোগ্য, অদক্ষ্য অবৈধ অর্থও সন্তাসে শ্রেষ্টত্বের কারনে দল শক্তিশালী হবে এমন ঘৃণ্য ও ভ্রান্ত ধারনায় দলে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেন গত দুই যুগ ধরে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্বৃতায়ন চলছে। আমি বলি দুর্নীতিবাজরা রাজনীতিকে আগ্রাসন করেছে। ফার্সি কবি মাওলানা রুমী সাহেব বলেন, “ছোহবতে চলেহে তরা ছালেহে কুনাত, ছোহবর্তে তালেহ তরা তালেহ কুনাত” অর্থাৎ ভালোর সাথে চললে ভালো আর মন্দের সাথে চললে মন্দ।
এই জাতীয় নেতারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিপক্ষকে বা ভিন্ন মতালম্বীকে ভালবাসা দিয়ে বসে আনার পরিবর্তে জোর জবরধস্তি মামলা, হামলা বা অসামাজিক আচরণে ভয়ভীতির মাধ্যমে দলে ভিড়ানোর পথ বেছে নেয়। নেতা তার হুকুম তামিল করার জন্য অবৈধ অর্থের মাধ্যমে বখাটে বেকার যুবকদের তার কর্মী হিসাবে নিয়োগ দিয়ে থাকে। একজন সম্মানী ব্যক্তি অথচ আমাকে পছন্দ করেন না। তাকে আমার সমর্থনে বাধ্য করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন লম্পট ও বখাটে সন্ত্রাসীকর্মীদের অর্থের মোহ ও লালসায় সেই মহান ও সম্মানী ব্যক্তিটিকে জোর করে অপদস্ত করে প্রয়োজনে শারিরিক নির্যাতন করে হলেও আমার পক্ষে আনতে হবে। শুধু তাই নয় ক্ষমতা দখল ও নেতৃত্ব হাতে নেওয়ার জন্য কাউকে মেরে ফেলতে হবে বা গুম করতে হবে। বাড়ী ঘরে আগুন দিতে হবে, প্রয়োজনে পঙ্গু করে ফেলতে হবে। এই হলো আমাদের রাজনীতি।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, আমাদের জনঘন এর ধারাবাহিকতায় নতুন এই কালচারের আঁকে-বাকে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নেয়ার প্রয়োজনে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নিচ্ছেন।
সেই সুবিধার্থে নাগরিকরাও আজকাল সামান্য কিছুতেই দ্রুতঅস্থিতিশীল ও ও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফেলেন। মোটকথা হাঁসতেও সময় লাগে না এবং কাঁদতেও দেরী হয় না। এমনকি আমরা বেশীরভাগ জনগণ আবেগের আপ্লুত হয়ে সব কিছূ বিবেচনা করে। এই ক্ষেত্রে বিবেকের প্রতিফলন নেই।
যে জাতী যতবেশী সুশিক্ষিত, সেই জাতী ততবেশী উন্নত। এই বাক্যটি চিরন্তন সত্য বটে। রাজনীতিতে একজন নেতা বাছাই করার জন্য কতগুলো বাস্তবধর্মী গুনাগুন ও কর্মকান্ডকে প্রাধান্য দেওয়া হলো সচেতন জনগণের লক্ষ্য। সৎ নিষ্ঠাবান সামাজিক ও রাজনৈতিক এবং যোগ্যতম শিক্ষিত ব্যক্তি হওয়া উচিত একজন নেতা। ব্যক্তি সার্থে সামান্য সুবিধাদির বিনিময়ে অথবা আবেগাপ্লুপ্ত হয়ে অল্পতেই মতের পরিবর্তন ও সিদ্ধান্তহীনতা একজন সু-সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব নয়। আমাদের বেশীর ভাগ আমজনতার যে অপ-রাজনীতি ও অপসংস্কৃতি অর্জিত হয়েছে এর থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য ভাল রাজনৈতিক ব্যক্তিদের রাজনীতিতে আগমন একেবারেই অত্যাবশক হয়ে পরেছে।
মনে হয় রাজনীতির মৌলিক সংজ্ঞা আমরা ভুলে গেছি। অথবা অসৎ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ ঘটায় রাজনীতির সংজ্ঞা পরিবর্তন হয়ে গেছে এবং রাজনীতি ভয়ংকর ও বিষাক্ত হয়ে পড়েছে।
অত্যান্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় সুশিক্ষিত ও ভদ্র লোকেরা সামাজিক কোন কাজ কর্ম বা সংগঠনে যোগ দিতে গেলে আগে জিজ্ঞেস করে নেন এখানে কোন রাজনীতি আছে কিনা। আজ রাজনীতি অতীব ভয়ঙ্কর রুপ লাভ করেছে যাহা আজ উজ্বল সূর্যের মতো সত্য। যদি এমনই ধারা চলতে থাকে তাহা হইলে রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতাদের দিক থেকে অচিরেই মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিবে। তার পরও রাজনীতি দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। এটাই নিয়ম। উল্লেখ না করলেই নয়, অতিতে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা এই সকল অবাঞ্চিত কর্মকান্ড অবাঞ্চিত রাজনৈতিক নেতাকর্মী কিংবা অনৈতিক রাষ্ট্রীয় লুণ্ঠন পরিত্যাগ করতে পারে নাই বলে ওয়ান ইলেভেনে চরম বির্পজয় ও মূল্য দিতে হয়েছে।এরই মধ্যে দুনিয়া জোড়া আমরা এক নম্বর দুর্নীতির সেরা তালিকায় ছিলাম। অপর দিকে দুর্নীতি বিশেষজ্ঞরা অনেকেই বলাবলি করছেন, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমান দুর্নীতিবাজরা নাকি দুর্নীতির ধরন পাল্টিয়েছেন। তবে পরিসংখ্যান করলে বুঝা যাবে আমরা সেই আগের এক নম্বরকে ছাড়িয়ে গিয়েছি না হারিয়ে গিয়েছি।
আরও উল্লেখ, আমাদের বর্তমান ডিগ্নি পাইড লেডী মাননীয় প্রধানমন্ত্রি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা দেরীতে হলেও তার মাঝে একটি শুভ বৃদ্ধির উদয় হয়েছে। তিনি জাতীকে রাষ্ট্রকে এমনকি রাজনীতিতে গুণগত ও মানগত পরিবর্তন আনার স্বার্থে এমনকি একটি দৃষ্টান্ত রাখার প্রত্যায়ে দুর্নীতিবাজ লুণ্ঠন আদিপাত্যবাজ ও নির্লজ্জ রাজনৈতিমুক্ত রাষ্ট্র রাজত্ব ও দল গঠনে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। সেই চিহ্নিত রাজনৈতিকদের বিপযয়ে কোন রুপ ইন্টার পেয়ারও করতেছেন না বলে আমরা শুনতেছি। এটাও শুনতেছি তিনি প্রবীণ ও নবীন সৎ ও যোগ্য মেধাসম্পন্ন এমনকি দলের উর্দ্ধে উঠে সুশিক্ষিত নিষ্ঠাবান লোক খুুজে এনে আগামী প্রজম্মের সামনে একটি দেশ প্রিয় দল ও রাষ্ট্র উপহার দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছেন। তাকে অভিনন্দন ও স্বাগত জানাই।
লেখক মো: রুহুল আমিন চৌধুরী
রাজনৈতিক ও সমাজ সেবক সহ-সভাপতি কর্চুয়া কল্যাণ সংঘ-ঢাকা। সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ আন্ত: বি: বি: ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন। সাবেক চাঁদপুর জেলা পরিষদে জেলা রেড ক্রিস্টে সোসাইটির নির্বাচিত সদস্য এবং জাতীয় পার্টি নেতা।
পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্
অরাজনৈতিক ও অবৈধ অর্থশালী সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশই রাজনীতি ও গণতন্ত্রে ধস নেমেছে
30-10-2016 07:07PM