ভারতকে রসাতলে পাঠিয়ে মোদি ঘুমাচ্ছেন

  03-12-2016 12:48PM

পিএনএস ডেস্ক: ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ভারতের অর্থনীতিতে শুরু হতে চলেছে আরো এক কেলেংকারি। মাসের প্রথমেই টাকার অভাবে জেরবার হতে হবে পশ্চিমবঙ্গ তথা গোটা দেশকেই। মাসের প্রথমে বেতন হওয়ার কথা। কিন্তু সরকারি, কেন্দ্রীয় সরকারি, বেসরকারি ক্ষেত্রের অর্থনীতি কর্মচারীর বেতন পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ ব্যাংকে টাকা নেই। গত ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করার পর যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল, তার থেকে কয়েকগুণ বেশি আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে সামনের সপ্তাহে। বেতন তুলতে না পারলে সরাসরি আক্রান্ত হবে ধনী থেকে দরিদ্র সব ধরণের পরিবারই। আর সেই সঙ্গে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে একের পর এক প্রক্রিয়া। দেশ থেকে মোট ৫০০ ও ১০০ টাকার নোটের ৮৬ শতাংশ তুলে নেয়া হয়েছে। সে জায়গায় নতুন ২০০০ এবং ১০০ টাকার নেটা এসেছে মাত্র ২০ শতাংশ। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নোট বাতিলের প্রক্রিয়া শেষ হতে এখনো সাত-আট মাস লাগার কথা। এর জের যে কতদিন চলবে, তা এই মুহূর্তে অর্থনীতিবিদরা বলতে পারছেন না।

এদিকে গোটা ভারতে কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে সব বিরোধীদল একাট্টা হয়েছে। ৮ নভেম্বর মধ্যরাতের ঘোষণার কয়েক ঘন্টা আগেও দেশবাসী তো দূরের কথা, রিজার্ভ ব্যাংকের গর্ভনর উজিত প্যাটেল এবং অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও জানতেন না, যে নোট বাতিল হতে চলছে। ভারতের বাজার অর্থনীতির জনক ড. মনমোহন সিং মনে করেন, এই ঝুঁকি সময়োপযোগী হয়নি। দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। বিদেশী বিনিয়োগ নেই। আর তা নিয়ে রাজনৈতিক খেলা চলছে, তাতে নিজেকে সর্বভারতীয় নেত্রী হিসেব তুলে ধরতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সব দলকে একত্র করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কোথাও আন্দোলনে যেতে রাজি হননি রাহুল গান্ধী। তাই তিনি ছুটে গিয়েছেন উত্তরপ্রদেশে আখিলেম যাদবের কাছে। যেখানে তিনি আসন্ন নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টিকে ধরে কয়েকটি আসন বাগানোর চেষ্টা করছেন।

মমতা প্রকাশ্যে জনসভায় ঘোষণা করেছেন, মোদিকে সরাবই। কিন্তু কিভাবে তা করবেন তার কোথাও রূপরেখা তিনি দিতে পারেননি। তিনি শুধু বিরোধী নেত্রী হিসেবে দাবি করে যাচ্ছেন, মোদির নির্দেশের পুরোটাই ফিরিয়ে নিতে হবে। মমতার সঙ্গে এ ব্যাপারে কোথাও বিরোধী দল একমত নয। স্বয়ং রাষ্ট্রপতি মোদির সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন। মমতা বলেছেন, এটিএম এ টাকা নেই, চাষীদের ঘরে, হকারদের ঘরে টাকা নেই। এমনকী মাম-পয়লায় মানুষদের ঘরে কিভাবে টাকা ঢুকবে, তাও কেউ জানে না। প্রধানমন্ত্রী ক্যাশলেস লেনদেনের কথা বলছেন। কিন্তু মানুষের খাবার পয়সা নেই। মোবাইল নিয়ে তারা কী করবে? সারাদেশ রসাতলে পাঠিয়ে মোদিবাবু এখন ঘুমাচ্ছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, দিল্লীতে মিলিবুলি সরকারের সনম্ভাবনা উজ্জল হলে, তৃণমূল কংগ্রেসের গুরুতব বাড়তে পারে, এই আশায় এখন থেকেই দিল্লীতে লম্ফজম্প শুরু করেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। তিনি নিজেকে জাহির করতে চাইছেন এককনেত্রী হিসাবে।

বিশিষ্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন মন্তব্য করেছেন, ভারত নামক দেশটিকে খাদের কিনারায় নিয়ে গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি অর্থনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে বালখিল্য শুরু করেছেন তাতে দেশে দুর্বৃত্তায়নের এবং নতুন ধরণের অর্থনৈতিক অপরাধের সূচনা হওয়া কেবল সময়ের অপেক্ষা। কালো টাকা বাতিল করার নামে তিনি যে অবিমৃশ্যকারিতার পরিচয় দিয়েছেন তা এককথায় মারাত্নক। ভারত সরকারের প্রাক্তন আর্থিক উপদেষ্টা, বর্তমানে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কৌশিক বসু বলেছেন, হঠাৎ নোট বাতিল করে দিয়ে কালো টাকার লেনদেন বন্ধ করা যায় না। তার জন্য আরো নানা পন্থা রয়েছে। সবকিছুর সমন্বয় করে এ ব্যাপারে এগুনো দরকার ছিল। আর সম্পূর্ণ অর্থনীতির এই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী বিশ্লেষকদের হাতেই ছেড়ে দিলে পারতেন। নরেন্দ্র মোদি এই বিচিত্র সিদ্ধান্তের ফলে একসঙ্গে অনেকগুলো ক্ষেত্র ধাক্কা খাবে। দেশের জিডিপি ও কমবেই, সেই সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে যাবে দেশে বিদেশী বিনিয়োগ। আর এই তীব্র ধাক্কা সামলাতে বেশ কিছু সময় যাবে।

এখন যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, ২০১৬ সালের শেষ মাসে আর্থিক অবস্থা সেখানে দাঁড়িয়েছে, তাতে ১২৫ কোটি মানুষই বিপদগ্রস্ত। এই পরিস্থিতির শেষ কোথায়, তা মোদি বা তার সরকারের কেউ কিছু বলছেন না। উল্টো প্রতিদিন একটা করে নতুন নিয়ম চালু করছেন। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পুরোটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভারতবর্ষের সাংবিধানিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মেটাতে মোদি বিরোধীদের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না। এখনও পর্যন্ত তিনি সংসদের বির্তকে দেখা দেননি। পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীদলগুলো প্রকাশ্যে অভিযোগ তুলেছে, মোদি যদি সত্যিই কালো টাকা উদ্ধার করতে চান, তাহলে সারদা-নারদার মামলা কেন তিনি চেপে রেখেছেন। তার মন্ত্রীরা দীর্ঘদিন এ ব্যাপারে জেল খেটেছেন। আর এক সাংসদ কুনাল জেল থেকে বেরিয়ে ইঙ্গিত দিয়েচেন, মমতার সব কালো টাকা দুবাইয়ের ব্যাংকে রাখা আছে।

তবে এ মাসের প্রথাম সপ্তাহেই বুঝা যাবে রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার বা কর্পোরেট ক্ষেত্রের কর্মচারীরা বেতন তুলতে পারবেন কিনা। পশ্চিমবঙ্গসহ গোটা দেশে ঋণ মাঠে পড়ে রয়েছে। ভারতের সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি যেমন বলেছিলেন, পরিস্থিতি এখন সেদিকেই যাচ্ছে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক দাঙ্গার ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে।

লেখক: সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন