সাবমেরিন ক্রয়ে ভারতের সন্দেহ কেন?

  12-12-2016 10:21AM


পিএনএস ডেস্ক: ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র হচ্ছে পাকিস্তান, চীন, নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা। বাংলাদেশ ছাড়া কারও সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভাল নয়। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সংঘর্ষ নিত্যদিনের ঘটনা। চীনের সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক খারাপ। নেপালের মতো ছোট দেশ, তার সঙ্গেও সম্পর্কটা ভারত ভাল রাখেনি।

ভারতের প্রতিবেশী ছোট হউক বড় হউক সবাই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। তাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি ভারতকে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। ভারত যদি বড়ত্বের অহমীকায় তার প্রতিবেশীদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হন তা হলে সম্পর্কের মাঝে ভিন্নতা ঘটবেই।

নেপালের রাজা ভারত বিভক্তির সময় নেহরুকে ভুটানের মতো নেপালের দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় সোপর্দ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু নেহরু তা গ্রহণ না করে নেপালের রাজাকে পরিপূর্ণভাবে স্বাধীন থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং ভারতের সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন।

নেহরু দীর্ঘ ১৭ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আর এ ১৭ বছরের মাঝে নেপালের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের কখনও অবনতি হয়নি। অবনতি আরম্ভ হয় শ্রীমতি ইন্দারা গান্ধীর সময় হতে। কারণ ছিলো ভারতের আধিপত্যবাদী মনোভাব।

রাজিব গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় সস্ত্রীক নেপাল সফরে গিয়েছিলেন।

কাঠমুন্ডের ঐতিহাসিক মন্দির পরিদর্শন করতে চেয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধী কিন্তু সোনিয়া গান্ধী হিন্দু না হওয়াতে তাকে মন্দির কর্তৃপক্ষ মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি দেননি আর রাজিব সোনিয়াকে অনুমতি না দেওয়াতে অপমানবোধ করেছিলেন এবং ভারতে এসে নেপালের সব যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থগিত করে দিয়েছিলেন।

নেপাল স্থলভূমি পরিবেষ্টিত দেশ, বাইরে যেতে হলে ভারতের ভূমি ব্যবহার করতে হয়। ভারত যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ায় নেপাল দীর্ঘ ৫/৬ মাস দুর্ভোগের শিকার হয়েছিলো। প্রয়োজন হলে পঙ্গুও আত্মরক্ষায় পর্বত ডিঙ্গানোর সাহসী উদ্যোগ নেয়। এক্ষেত্রে নেপালও তাই করেছিলো।

চীন নেপালের সাহায্যে এগিয়ে আসে। তারা নেপালকে অকাতরে সাহায্য করেছিলো। গত কিছুদিন আগেও নরেন্দ্র মোদির সরকার নেপালের সঙ্গে একই আচরণ করেছে। বারবার স্থলপথ বন্ধ করে নেপালকে কাবু করার চেষ্টা করায় নেপাল এখন চীনের সাহায্য পর্বতের ভিতর দিয়ে চীনের সঙ্গে নূতনপথ উন্মুক্ত করার প্রস্তুতি নিয়েছে এবং খুব শিগগির নাকি এ পথ পণ্য-চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে।

অথচ নেপাল হচ্ছে হিন্দু রাষ্ট্র এবং মৌলবাদী রাষ্ট্র। গরু জবেহ সম্পূণ নিষেধ আর এ নিষেধাজ্ঞা কেউ অমান্য করলে মৃত্যুদণ্ড। বিশ্বের এই একমাত্র মৌলবাদী হিন্দু রাষ্ট্রটির সঙ্গেও ভারত ভাল সম্পর্ক রাখতে পারেনি।

ভারতের দুই জন বিশিষ্ট ব্যক্তি এম কে ভদ্রকুমার এবং রঞ্জন বসু ভারতের দেশরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর এর বাংলাদেশ সফর নিয়ে দুইজন দুইটা লেখা লিখেছেন। দুই ভদ্রলোকই বাংলাদেশ যে চীন থেকে সাব মেরিন কিনেছে সে নিয়েই আলোচনার সূত্রপাত করেছেন। লেখার সময় উভয়ে বাংলাদেশ যে একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ সে কথা সম্ভবত সম্পূর্ণভাবে বিস্মৃত হয়েছেন। ভদ্রকুমার বলতে চেয়েছেন বাংলাদেশ তিন দিকে ভারত দ্বারা পরিবেষ্টিতে দেশ তার সাব মেরিনের প্রয়োজন হল কেন? এ অস্ত্র সমুদ্রে অন্যদের প্রবেশ রুদ্ধ করতেই ব্যবহৃত হবে। বাংলাদেশের এ সিদ্ধান্তের পেছনে নিশ্চয়ই কোনও কারণ আছে।

মিয়ানমার বা থাইল্যন্ড দ্বারা কি বাংলাদেশ ভীতিবোধ করছে? ভদ্র কুমার পরামর্শ দিয়েছেন পারিকর যেন বাংলাদেশের আসল উদ্দেশ্য কি তা উপলব্ধি করার চেষ্টা করে। ভদ্র কুমার নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে পারেন যে কোনো দেশ অস্ত্র কিনে আত্মরক্ষার জন্য। বাংলাদেশও সাবমেরিন কিনেছে তার সুরক্ষা সুদৃঢ় করার জন্য।

বাংলাদেশের স্থলভাগের চেয়ে জলভাগ দ্বিগুণ্ তার জলভাগে শুধু ভারতের সীমান্ত নয়, অন্যদেশের সীমান্তও রয়েছে। বাংলাদেশ জলসীমা চূড়ান্ত করার বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের শরাণাপন্ন হয়েছিলো। আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের বিরোধী পক্ষ ছিলো ভারত আর মায়ানমার।

বাংলাদেশ এখনও তার জলভাগের উন্নয়ন ও সম্পদ আহরণের কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। আদালতের রায় সম্পর্কে ভারত কোনও প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেনি। বাংলাদেশ আশা করে আদালতের স্থিরকৃত বাংলাদেশের জলসীমানায় নির্বিঘ্ন সম্পদ আহরণের ভারতের কোনও আপত্তিও থাকবে না কিন্তু মায়ানমার এরই মাঝে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেছে। একটা বিষয় স্মরণযোগ্য যে দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর মায়ানমারে সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো সে সময় তারা তাদের সামরিকবাহিনীর নিরবিচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে এখন তাদের সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা হচ্ছে তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার।

সুতরাং মায়ানমারকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। ভারতের দেশরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর ভারতের তিনবাহিনীর তিন উপপ্রধান নিয়ে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। বাংলাদেশের সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন। মন্ত্রী মহোদয় প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও মিলিত হয়ে ছিলেন। মনোহর পারিকর এর বাংলাদেশ সফরের পর একটা কথা প্রচারিত হচ্ছে যে বাংলাদেশ চীন থেকে সাবমেরিন কেনায় ভারত উদ্বিগ্ন হয়েছে। ভারত এখন বাংলাদেশের সঙ্গে একটা সামরিক চুক্তি সম্পাদন করতে চায়।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গেলেই নাকি এ সম্পর্কে আলোচনা হবে। ভারত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বিশ্বে চীনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে বৃহৎ শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে। চীনও নিজেকে অর্থে ও অস্ত্রে অন্যতম পরাশক্তির পর্যায়ে নিতে ব্যস্ত। চীনের এ প্রস্তুতি লক্ষ্য করে আমেরিকা তার নৌশক্তির ৬০% শতাংশ প্রশান্ত মাহাসাগরে নিয়ে এসেছে। অর্থাৎ এ অঞ্চলে একটা নীরব প্রতিযোগিতা চলছে।

ভারত ও চীনের মাঝখানে বাংলাদেশ বাফার ষ্টেট-এর মতো। সুতরাং এমন অবস্থায় আমাদের মতো একটা উন্নয়ন প্রত্যাশী দেশের পক্ষে কারও সঙ্গে কোনও সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া উচিৎ হবে না। এ আত্মঘাতী বিষয়টা নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেন সতর্ক থাকেন।

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সংঘাত দূর করার ব্যাপারে শেখ হাসিনার সরকার আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন অথচ তার পূর্বের সরকারের সময় অস্ত্র যেত উলফার কাছে। সুতরাং ভারত সরকারের এমত আচরণ করা উচিৎ যাতে জনমত হাসিনার বিরুদ্ধে না যায়। জনমত যদি ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাহলে চুক্তি করে লাভ কি? চুক্তি তো-নিস্ফলা হয়ে যাবে।

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন