শহীদ সাংবাদিক এম এ সাঈদের প্রতি শ্রদ্ধা

  13-12-2016 05:10PM

নমিতা খান: সাংবাদিক এম এ সাঈদ মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। ১৯৭১ সালের ২৮ জুন নিজ বাড়ি থেকে পাক বাহিনীর কয়েকজন এ দেশীয় দালাল রাজাকার তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। রাখা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলের বন্দিশালায়। সেখানে দিনের পর দিন অমানুষিক নির্যাতন চালাতে থাকে। বন্দিদশা থেকে ফিরে আসা একজন জানায়, তাঁকে রেললাইনের কাছাকাছি কোনো এক জায়গায় অন্য বন্দিদের সঙ্গেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর গর্তে মাটিচাপা দেওয়া হয়। তবে ’৭১ সালের ২৮ ডিসেম্বর তারিখে ‘রাজশাহীতে বহু বুদ্ধিজীবী এখনো নিখোঁজ’ শিরোনামে দৈনিক আযাদ পত্রিকায় যে নামের তালিকা প্রকাশিত হয়, তাতে তাঁর নাম পাওয়া যায়। শোনা যায়, জোহা হলের পেছনে রেললাইনের কাছাকাছি কোনো এক জায়গায় বিশাল গর্ত করে জল্লাদরা মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে ফেলে দিত। ধারণা করা হয়, তাঁকেও ওই গর্তে ফেলা হয়েছে।

এম এ সাঈদ ছিলেন একজন রাজনীতিসচেতন মানুষ। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তিনি ’৬৯-এর অসহযোগ আন্দোলনে যেমন অংশ নেন, তেমনি ’৭১-এ রাজশাহী সাংবাদিক-শিল্পী-সাহিত্যিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হয়ে এ দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে দুঃসাহসী ভূমিকা রাখেন।

পেশার উৎকর্ষ সাধনের মধ্য দিয়েও তিনি এ দেশের জন্য কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন রাজশাহী জেলা সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। ১৯৫৪ সালের আগে যখন রাজশাহীতে কোনো প্রেসক্লাব গড়ে ওঠেনি, তখন তিনি এ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা রাখেন। পেশাগতভাবেও তিনি ছিলেন বিচক্ষণ। ছোট্ট একটা লন্ড্রি, তার সঙ্গে লাগোয়া একটা চায়ের দোকান। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের নিয়ে নিয়মিত আড্ডা দিতেন। সাধারণ মানুষ যাতে খবরের কাগজ পড়তে উৎসাহী হয়, সে জন্য তিনি নিজে সাইকেলে করে সংবাদপত্র তৃণমূলে পৌঁছে দিতেন।

সাঈদ ছিলেন ‘দৈনিক আযাদ’ ও কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক লোকসবক’-এর রাজশাহী প্রতিনিধি। পরে তিনি দৈনিক পাকিস্তান, ডেইলি অবজারভার, পয়গাম, জেহাদ প্রভৃতি পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। শহীদ এম এ সাঈদ শুধু সাংবাদিকই ছিলেন না তিনি ছিলেন একজন ভালো নাট্যসংগঠক ও অভিনয়শিল্পী। ফলে তৎকালীন রাজশাহীর সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও তিনি অবদান রাখেন। তিনি মূলত ছিলেন একজন কৌতুকাভিনেতা।

মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁর নামে ডাক টিকেট বের করে। শহীদ সাংবাদিক এম এ সাঈদ জন্মগ্রহণ করেন নরসিংদী জেলায়। এখানেই তিনি শৈশব ও শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করেন। ১৯৪৯ সালে কৃষি বিভাগে চাকরি নিয়ে রাজশাহী চলে যান। পরে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নেন এবং শহীদ হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানেই স্থায়ী অধিবাসী হিসেবে তাঁর কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।

লেখক : গ্রন্থাগারিক, প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি)




পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন